প্রকাশিত:
২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৪:৪৬
আলোর মুখ দেখছে স্বপ্নের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকাল সাড়ে ৩টায় যান চলাচলের জন্য এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর-ফার্মগেট অংশের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এদিকে, শনিবার উদ্বোধন হলেও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ১৩টি সংযোগ সড়ক দিয়ে রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ছয়টা থেকে যান চলাচল শুরু করবে।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধনের লক্ষ্যে রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে শেরেবাংলা নগর পর্যন্ত এলাকায় রয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ঘিরে ভিভিআইপি, ভিআইপি, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ব্যক্তি, বিভিন্ন মন্ত্রী, জাতীয় সংসদের সদস্য, সরকারি-বেসরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যাপক লোকসমাগম ঘটবে রাজধানীতে। এজন্য অনুষ্ঠানকে ঘিরে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। পাশাপাশি আগত অতিথিদের যানবাহন গমনাগমন ও সুষ্ঠু পার্কিং ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ট্র্যাফিক-তেজগাঁও বিভাগ বিশেষ ট্র্যাফিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে।
ডিএমপি জানায়, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন অনুষ্ঠানকে ঘিরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও রাজধানীর তেঁজগাও থেকে ফার্মগেট হয়ে বিমানবন্দর পর্যন্ত এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে। পোশাকে পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ সদস্যরাও নিরাপত্তা নিশ্চিতে নিয়োজিত রয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে র্যাব সদস্যরাও।
এদিকে, উদ্বোধন অনুষ্ঠানস্থল ও এর আশপাশের এলাকার বাইরে রয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে রয়েছে র্যাব-পুলিশের একাধিক টহল টিম। অনুষ্ঠানে আগতদের তল্লাশির মধ্য দিয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে।
এবিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন বলেন, অনুষ্ঠানে ভিভিআইপি, ভিআইপি, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ব্যক্তি, বিভিন্ন মন্ত্রী, জাতীয় সংসদের সদস্য, সরকারি-বেসরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে অতিথিরা অংশগ্রহণ করবেন। সবার নিরাপত্তার স্বার্থে ডিএমপি পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করেছে। পাশাপাশি সাদা পোশাকেও গোয়েন্দা পুলিশ নজরদারি রয়েছে।
তিনি বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের জন্য গমনাগমনের লক্ষ্যে ডিএমপির ট্র্যাফিক বিভাগের পক্ষ থেকেও রোড ডাইভারশন দেওয়া হয়েছে।
এদিকে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সকল ইউনিটের সঙ্গে সমন্বয় করে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর- ফার্মগেট হয়ে শেরেবাংলা নগরসহ পুরো রাজধানীতে র্যাবের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে।
ট্র্যাফিক নির্দেশনাসমূহ:
পুরাতন বাণিজ্যমেলা মাঠকেন্দ্রিক সুষ্ঠু ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ব্যানার ও স্টিকার ব্যতীত অন্যান্য সকল প্রকার যানবাহনগুলোকে সকাল ১১ টা থেকে বিকাল ৬টা পর্যন্ত নিচে দেওয়া রাস্তা ব্যতীত বিকল্প সড়ক ব্যবহারের জন্য পরামর্শ দিয়েছে ডিএমপি ট্র্যাফিক বিভাগ।
শ্যামলী, শিশু মেলা ক্রসিং এবং ৬০ ফিট হতে আগারগাঁও লাইট ক্রসিং হয়ে রোকেয়া সরণি পর্যন্ত রাস্তা। লাভরোড পূর্ব মাথা, বিজয় সরণি ক্রসিং-উড়োজাহাজ ক্রসিং, ক্রিসেন্ট লেক হয়ে গণভবন ক্রসিং পর্যন্ত রাস্তা। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের দক্ষিণ পার্শ্ব নতুন রাস্তার মুখ, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রবেশ রাস্তা মুখ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গ্যাপ হতে পরিকল্পনা কমিশন হয়ে বিআইসিসি ক্রসিং পর্যন্ত রাস্তা।
আড়ং ক্রসিং, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, বঙ্গবন্ধু চত্বর ও ইন্দিরা রোড হয়ে ফার্মগেট পর্যন্ত। রোকেয়া সরণির তালতলা, আগারগাঁও লাইট ক্রসিং, বিআইসিসি ক্রসিং এবং উড়োজাহাজ ক্রসিং পর্যন্ত রাস্তা। মিরপুর রোডের শ্যামলী হতে মানিক মিয়া পশ্চিমপ্রান্ত (আড়ং ক্রসিং) রাস্তা সীমিত পরিসরে ব্যবহার করা যাবে। তবে জরুরিসেবা প্রদানকারী গাড়ি, রোগী বহনকারী গাড়ি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সার্ভিসে নিয়োজিত গাড়িসমূহের ক্ষেত্রে অব বিজ্ঞপ্তির নির্দেশনার আওতাবহির্ভূত থাকবে।
আমন্ত্রিত অতিথিদের যেসব নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ:
স্টিকারযুক্ত গাড়ির ক্ষেত্রে নির্দেশনা: উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আগত গাড়িসমূহের অনুকূলে সরবরাহকৃত সকল স্টিকার তাদের গাড়ির উইন্ডশিল্ডের দৃশ্যমানভাবে প্রদর্শন করার জন্য অনুরোধ করা হলো। আমন্ত্রিত অতিথিদের যানবাহনের চালকদের নিজ নিজ গাড়িতে অবস্থান করার জন্য পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি গাড়ির ড্রাইভারের মোবাইল নম্বর গাড়ির উইন্ডশিল্ডে দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শনের জন্য অনুরোধ করা হলো।
পদ্মা স্টিকারযুক্ত যানবাহন সমূহকে উড়োজাহাজ ক্রসিং থেকে বিআইসিসিতে নির্দেশনা অনুযায়ী নির্ধারিত প্রবেশ গেট দিয়ে প্রবেশ ও নির্দেশিত স্থানে গাড়ি পার্ক করার জন্য পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে। মেঘনা ও যমুনা স্টিকারযুক্ত গাড়িসমূহ উড়োজাহাজ ক্রসিং হতে বিআইসিসি ক্রসিং এ নামিয়ে দিয়ে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ০৫ (পাঁচ) নং গেট দিয়ে প্যারেড গ্রাউন্ডে পার্কিং করবে।
দেশের বিভিন্ন স্থান হতে আগত ব্যানারযুক্ত গাড়ি ও জনসাধারণের ক্ষেত্রে নির্দেশনা:
মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ধামরাই, সাভার, মিরপুর-১ ও ২ হতে আগত ব্যানারযুক্ত গাড়িগুলো শ্যামলী হয়ে শিশুমেলা ক্রসিং এ ড্রপ করে নির্দেশনা মোতাবেক আগারগাঁও রাস্তায় পার্কিং করবে এবং আগত লোকজন র্যাব-২ এর সামনে দিয়ে পায়ে হেঁটে ভেন্যুতে প্রবেশ করবে।
গাজীপুর, নরসিংদী, ঢাকা উত্তরের ব্যানারযুক্ত গাড়িগুলোকে রেডিসন হোটেলের সামনের কালসী ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে মিরপুর-১০ দিয়ে বেগম রোকেয়া সরণি হয়ে আগারগাঁও ক্রসিং এ ড্রপ করে নির্দেশনা মোতাবেক আগারগাঁও রাস্তায় পার্কিং করবে এবং আগত লোকজন র্যাব-২ এর সামনে দিয়ে পায়ে হেঁটে ভেন্যুতে প্রবেশ করবে।
নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও ঢাকা দক্ষিণ হতে আগত ব্যানারযুক্ত গাড়িগুলোকে শাহবাগ-সোনারগাঁও ক্রসিং- লেফট টার্ন- পান্থপথ – ধানমন্ডি-৩২ হয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ পশ্চিম প্রান্তে (আড়ং ক্রসিং) ড্রপ করে ওই রাস্তায় এবং রাজধানী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে পার্কিং করবে এবং আগত লোকজন আড়ং ক্রসিং হতে মিরপুর রোড দিয়ে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের নতুন রাস্তা নিয়ে পায়ে হেঁটে ভেন্যুতে প্রবেশ করবে।
কেরানীগঞ্জ, দোহার, ঢাকা দক্ষিণ থেকে ব্যানারযুক্ত গাড়িগুলোকে ধানমন্ডি-৩২ হয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ পশ্চিম প্রান্তে (আড়ং ক্রসিং) ড্রপ করে ওই রাস্তায় এবং রাজধানী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে পার্কিং করবে এবং আগত লোকজন আড়ং ক্রসিং হতে মিরপুর রোড দিয়ে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের নতুন রাস্তা দিয়ে পায়ে হেঁটে ভেন্যুতে প্রবেশ করবে।
দেশের বিভিন্ন স্থান হতে আগত মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে নির্দেশনা:
মিরপুর রোড দিয়ে আগত মোটরসাইকেল শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় পশ্চিম পাশের রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে নির্দিষ্ট স্থানে পার্কিং করবে। রোকেয়া সরণি রোড দিয়ে আগত মোটরসাইকেল শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় পূর্বপাশের রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করে শেরেবাংলা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে নির্দিষ্ট স্থানে পার্কিং করবে।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (এয়ারপোর্ট থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত) এর উদ্বোধন উপলক্ষ্যে যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা রক্ষা ও যানজট এড়ানোর লক্ষ্যে ডিএমপির ট্র্যাফিক বিভাগ সম্মানিত নগরবাসীর সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করছে।
জানা গেছে, এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ির সর্বোচ্চ গতিসীমা থাকবে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার। ফলে এ পথ পাড়ি দিতে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা সময় নষ্ট হবে না কর্মব্যস্ত নগরবাসীর। তবে শুরু থেকে পরিকল্পনাবিদেরা বলছেন, একদিকে যেমন তাড়াতাড়ি এয়ারপোর্ট থেকে ঢাকায় আসা যাবে তেমনি ঢাকায় নামার পর এই গাড়িগুলো যানজটে পড়বে। আবার এয়ারপোর্ট থেকে দ্রুত বনানী, তেজগাঁও, মহাখালী বা ফার্মগেট চলে আসা যাবে। এক্সপ্রেসওয়ের ওপর দিয়ে থ্রি-হুইলার, মটর বাইক, বাই সাইকেল, পথচারী চলাচল করতে পারবে না। কোথাও থেমে ছবি তোলা যাবে না। এক্সপ্রেসওয়েতে কেবল চলতে পারবে চার চাকা কিংবা এর অধিক চাকার বাস, ট্রাক ও প্রাইভেটকার।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি এ প্রকল্পের প্রথম চুক্তি সই করা হয়। এই প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পের বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের ১৫ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে সংশোধিত চুক্তি সই হয়।
প্রকল্পটি থাইল্যান্ড ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইটালিয়ান থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেড ৫১ শতাংশ এবং চায়নাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান শোনডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক গ্র্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন গ্রুপ ৩৪ শতাংশ ও সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেড ১৫ শতাংশ যৌথ উদ্যোগে নির্মিত হচ্ছে। প্রকল্পের মূল দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৬ কিলোমিটার। র্যাম্পসহ মোট দৈর্ঘ্য ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার।
প্রকল্পের মোট ব্যয় ৮৯৪০ কোটি টাকা যার ২৭ শতাংশ বাংলাদেশ সরকার এবং বাকি অংশ ভিজিএফ হিসেবে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে প্রদান করবে। তবে ভূমি অধিগ্রহণ, নকশা বদল, অর্থ সংস্থানের জটিলতায় ৪ বার সময় বৃদ্ধির ফলে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকায়।
মন্তব্য করুন: