সোমবার, ৭ই অক্টোবর ২০২৪, ২১শে আশ্বিন ১৪৩১ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল daajkaal@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • পূর্বাঞ্চলে বন্যায় ১৪ হাজার ৪২১ কোটি টাকার ক্ষতি: সিপিডি
  • অভিন্ন জলরাশি নীতিমালা না হলে বন্যাঝুঁকি আরও বাড়বে: রিজওয়ানা
  • ব্যাংক নোটে নতুন নকশা, বাদ যেতে পারে বঙ্গবন্ধুর ছবি
  • মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মাল্টিপল ভিসা দেওয়ার আহ্বান ড. ইউনূসের
  • ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতির শোক
  • সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল হবে: আসিফ নজরুল
  • বৈরী আবহাওয়া, উপকূলীয় অঞ্চলে নৌযান চলাচল বন্ধ
  • শহীদ পরিবারের পক্ষে আজ মামলা করবে নাগরিক কমিটি
  • ৪ বন্দরে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত
  • সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা কামালসহ গ্রেপ্তার ৪

শাপলায় চলে শত শত অসহায় মানুষের সংসার

মাসুদুর রহমান,কালিয়াকৈর (গাজীপুর)

প্রকাশিত:
১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৬:৩১

 
চড়া সবজির বাজারে দিশেহারা মানুষ। দ্রব্যমূল্য ক্রয় ক্ষমতার বাইরে থাকায় স্বস্তার মধ্যে  ফেলনা শাপলার দিকে ঝুঁকছে মধ্য ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো। শুধু গ্রামেই নয়, পুষ্টিকর সবজি খাবার হিসেবে শাপলার জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে শহর-উপশহরেও। আর বর্ষা মৌসুমে শাপলা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন শত শত দারিদ্র অসহায় পরিবারের মানুষ। 
 
সরেজমিনে ঘুরে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলা মেদীআশুলাই এলাকায় ঐতিহ্যবাহী আলোয়া বিল। এ বিলের পাড়ে বসে শাপলা বিক্রির জন্য প্রস্তুত করছেন পঞ্চাশোর্ধ নারী মালতি রানী। আড়াই বছর আগে মারা গেছেন তার স্বামী। দুই ছেলে ও এক মেয়ে থাকলেও সবাই আলাদা থাকায় তার সংসারে তিনি এখন একা। পাশেই মেদীআশুলাই বাজারে বসে শাপলা বিক্রি করছেন ষাটোর্ধ অপর নারী গোলাপি রানী।
 
তারও স্বামী ১০ বছর আগে মারা যান। তার সংসারেও আর কেউ নেই। তাদের দুজনের স্বামীই ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মারা যান। সরকারী ১০ টাকা কেজি চাল পেলেও তারা এখনো বয়স্ক বা বিধবা পাননি। শুষ্ক মৌসুমে অন্যের বাড়িতে টুকটাক কাজ করে কোন রকমে তাদের সংসার চলে। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে বিলের শাপলা ডিঙ্গি নৌকা দিয়ে তুলে বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন এই দুই অসহায় নারী। শুধু গোলাপি রানী ও মালতি রানীই নন, উপজেলার বিভিন্ন এলাকার আলেয়া, সাবিনা, আরমা বেগম, তমিজ উদ্দিন, আসলাম মিয়া, আব্দুল সাত্তার, ইব্রাহিম হোসেনসহ শত শত অসহায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন এখন শাপলা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন।  বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র পাওয়া যাচ্ছে জাতীয় ফুল শাপলা।
 
তবে এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার খাল, বিল, পুকুর, ডোবায় শাপলা পাওয়া যায়। আর বর্তমান দ্রব্যমূেল্যর উর্ধগতিতে বাজার পরিস্থিতি অস্থির। দিশেহারা হয়ে পড়েছেন অসহায় মানুষ। সবচেয়ে বিপদে আছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্তের পরিবারের লোকজন। ফলে চড়া বাজারে দ্রব্যমূল্য ক্রয় ক্ষমতার বাইরে থাকায় স্বস্তার মধ্যে ফেলনা শাপলার দিকে ঝুঁকছে মধ্য ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো। শুধু গ্রামেই নয়, পুষ্টিকর সবজি খাবার হিসেবে শাপলার জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে শহর-উপশহরেও। প্রতিদিন উপজেলার মেদীআশুলাই, কালিয়াকৈর, চাবাগান, ফুলবাড়িয়া, জালশুকা, দেওয়াইর, গোসাত্রা, ঢালজোড়া, সফিপুর, বড়ইবাড়ীসহ বিভিন্ন ছোট-বড় বাজারে শাপলা বিক্রি করা হচ্ছে।
 
এ উপজেলা ছাড়াও অন্য জেলা উপজেলায়ও যাচ্ছে এ শাপলা। প্রতি আটিতে ১০টি শাপলা। যার পাইকারী বাজার মূল্য ৩-৬ টাকা এবং খুচরা মূল্য ৬ থেকে ১০ টাকা। সুযোগ বুঝে অসহায় শাপলা ক্রেতা-বিক্রেতাদের ঠকাচ্ছেন সুবিধাবাদী পাইকাররা। তবে শাপলা বাজারেও মূল্য তালিকা টানানোর দাবী জানিয়েছেন দারিদ্র অসহায় পরিবারের লোকজন। 
 
স্থানীয় সোহেল রানা, জহিরুল ইসলাম, কহিনুর ইসলাম, নুরু মিয়াসহ অনেকই বলেন, শাপলা আমাদের জাতীয় ফুল। কিন্তু এক সময় যে শাপলা বিলে ফুটে বিলেই পঁচে যেতো। সেই শাপলা তুলে বাজারে বিক্রি করে শতশত অসহায় পরিবার সংসার চালাচ্ছেন। আর ফেলনা শাপলাকে জনপ্রিয় সবজি হিসেবে এগিয়ে নিতে রাখছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বিল পাড়ের অসহায় মানুষ। এর মাধ্যমে তারাই দেশের অর্থনীতিতেও অবদান রাখছেন।
 
এছাড়াও শাপলার ফল দিয়ে তৈরি হয় চমৎকার সুস্বাদু মোয়া ও খৈই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ জানান, শাপলা আমাদের জাতীয় ফুল। এর পাশাপাশি এক অংশ আমরা খেয়ে থাকি। এটা পুষ্টিকর একটা খাবার। আর এ শাপলা বিক্রি করে অসহায় পরিবারগুলো তাদের সংসার চালাচ্ছেন, এটা খুব ভালো উদ্যোগ। তারা দেশের অর্থনীতিতেও অবদান রাখছেন। তবে যারা এখনো বয়স্ক, বিধবাসহ বিভিন্ন সরকারী ভাতা পাননি। এমন ব্যক্তিদের লিখিত পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
 
 

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর