প্রকাশিত:
৭ আগষ্ট ২০২৩, ১৭:৩৮
একযুগ ধরে সমুদ্র, নদী, খাল, বিল থেকে ছোট-বড় মাছ সংগ্রহ করে বিশাল আকার ‘ফিশ মিউজিয়াম’ গড়ে উঠেছে ভারতের আগারতলার লেম্বুছড়া এলাকায়।
এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘কলেজ অব ফিশারিস’মাছের জাদুঘরটি।বলা হচ্ছে ভারতের সবচেয়ে বড় ফিস মিউজিয়াম এটি। যদিও এর কথা ভারতীয়দের অনেকেরই অজানা।
মিউজিয়ামটি তিলে তিলে গড়ে তোলার জন্য শুরুর দিন থেকে যার অক্লান্ত পরিশ্রম রয়েছে তিনি হচ্ছেন এই কলেজের ফিশারিস রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট শাখার প্রধান অধ্যাপক ড. মৃণাল কান্তি দত্ত।
তিনি জানান, এই মিউজিয়ামে বর্তমানে ২৫ হাজার মাছের নমুনা এবং ৪৭৮ প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী সংরক্ষিত রয়েছে। উত্তর পূর্ব ভারতের প্রতিটি রাজ্যের মাছ, মিষ্টি পানির মাছ থেকে শুরু করে, হিমালয় অঞ্চলের ঠাণ্ডা জলের মাছ, সামুদ্রিক মাছ, কাঁকড়া, কচ্ছপ বিভিন্ন জাতের শঙ্খ শামুক ঝিনুক রয়েছে। শুধু এখানেই শেষ নয়, রয়েছে বিভিন্ন জাতের মাছ ধরার সামগ্রীর প্রতিকৃতি। যেমন বিভিন্ন ধরনের নৌকা থেকে শুরু করে নানা আকার ও আয়তনের জালসহ বাঁশের তৈরি মাছ ধরার ফাঁদ এবং সামগ্রী। তিনি নিজে ঘুরিয়ে মিউজিয়ামটি দেখান।
তিনি বলেন, এই ফিস মিউজিয়ামে উত্তরপূর্ব ভারতের ৮টি রাজ্যের নদী পুকুর খাল বিলে ছোট-বড় যেসব মাছ পাওয়া যায় সেগুলোকে আলাদা আলাদাভাবে রাজ্যভিত্তিক সাজিয়ে রাখা হয়েছে। একইভাবে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য যেমন উত্তরের রাজ্যগুলোর হিমালয়ের বরফগলা পানির নদী ও পুকুরের মাছ, সমুদ্রের মাছ কাঁকড়া, শামুক, ঝিনুক ইত্যাদি জলজপ্রাণীগুলো কেউ আলাদা আলাদাভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রতিটি মাছের জারের বাইরে এগুলোর নাম, বৈজ্ঞানিক নাম, কোন নদী থেকে, কে সংগ্রহ করেছে কবে সংগ্রহ করা হয়েছেসহ যাবতীয় তথ্য লিখে রাখা হয়েছে। যাতে মিউজিয়াম দেখতে আসা লোকেদের বুঝতে এবং গবেষণার কাজে যাতে কোনো অসুবিধা না হয়।
শুধু মাছ এবং জলজ প্রাণী সংরক্ষণ করাই নয় এগুলো নিয়ে নিয়মিত গবেষণা করা হচ্ছে ‘কলেজ অব ফিশারিস’এ। এই গবেষণায় উদ্বেগজনক তথ্য উঠে আসছে বলে জানান অধ্যাপক ড. মৃণাল কান্তি দত্ত।
তিনি জানান, উত্তরপূর্ব ভারতের জলাশয়গুলিতে ধীরে ধীরে মাছ কমে আসছে। অর্থাৎ প্রকৃতি থেকে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে নানা জাতের মাছ। এই মাছগুলি সম্পর্কে যাতে বেশি করে তথ্য সংগ্রহ করা যায় নিয়মিত গবেষণা চালাচ্ছেন। আগামী দিনে কেউ মাছ নিয়ে আরো গভীর ভাবে গবেষণা করতে চাইলে ও বিশ্বের যে কোন প্রান্ত থেকে মাছ সম্পর্কে তথ্য খুঁজলে যাতে সহজেই তারা পেয়ে যান তার জন্য প্রথাগত পদ্ধতি এবং মলিকোলার আইডেন্টিফিকেশন পদ্ধতিতে ১৮৪টি জাতের মাছের বারকোডিং করা হয়েছে। আগামী দিনে এই ভান্ডারে আরো নতুন নতুন জাতের মাছ যুক্ত করা হবে বলেও জানান তিনি।
অধ্যাপক ড. মৃণাল কান্তি দত্ত বলেন, এমন কিছু মাছ রয়েছে যেগুলি দেখতে প্রায় একরকম। তাই এগুলো প্রজাতি খুঁজে বের করতে অনেক ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। এক্ষেত্রে তারা ডিএনএ পরীক্ষা করে প্রজাতিগুলোকে আলাদা করেন। মাছদের ডিএনএ পরীক্ষা করার ব্যবস্থা রয়েছে কলেজের ল্যাবে। যা সচরাচর সব গবেষণা কেন্দ্রে থাকে না।
এই জাদুঘরটি মাছ গবেষকদের পাশাপাশি বিভিন্ন স্কুল এবং কলেজের ছাত্রছাত্রীরা ঘুরে দেখতে পারে। স্কুল ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে ৫ রুপি এবং কলেজশিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মাথা পিছু ১০ রুপি করে প্রবেশমূল্য ধার্য করা হয়েছে।
এই মাছগুলো নিয়ে গবেষণা করে তারা দেখছেন কি কি জাতের মাছগুলো কোন এলাকাতে ভালোভাবে বৃদ্ধি পায় এবং চাষাবাদ করলে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হবে। তারা এই মাছগুলোকে ওই এলাকায় চাষের জন্য স্থানীয় চাষিদেরকে উৎসাহিত করছেন, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মাছের চারাপোনা উৎপাদন চাষের জন্য সহায়তা দিচ্ছেন। উদাহরণ হিসেবে ত্রিপুরারাজ্যে পাবদা মাছের এবং মনিপুর রাজ্যে পাংবা মাছের চাষ খুব লাভজনক। তাদের এই গবেষণার ফলে এক সময় যে মাছগুলো বিরল হয়ে যাচ্ছিল এগুলো আবার সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। সব মিলিয়ে এই মিউজিয়াম মাছ গবেষণার ক্ষেত্রে দেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
মন্তব্য করুন: