প্রকাশিত:
৭ আগষ্ট ২০২৩, ১৬:৪৩
মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) সকালে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক’ পাবে চার বিশিষ্ট নারী ও বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল।
বঙ্গমাতার অবদানকে চিরস্মরণীয় করার লক্ষ্যে প্রতি বছর আটটি ক্ষেত্রে নারীদের অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ এ পদক দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা।
সোমবার (০৭ আগস্ট) সচিবালয়ে তথ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক দেওয়া এবং অসচ্ছল নারীদের আর্থিক সহায়তা ও সেলাই মেশিন বিতরণ’ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলেন, দেশপ্রেম, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, সাহসিকতা, ত্যাগ ও অনুপ্রেরণার উৎস বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জন্মদিবস ৮ আগস্টকে সরকার ‘ক’ শ্রেণির জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। বঙ্গমাতার অবদানকে চিরস্মরণীয় করার লক্ষ্যে প্রতি বছর আটটি ক্ষেত্রে নারীদের অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ সর্বোচ্চ পাঁচজনকে জাতীয় বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, এ বছর রাজনীতিতে এক জন; শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে দুই জন এবং গবেষণায় এক জনসহ মোট চার জন বিশিষ্ট নারী ও বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলকে ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক ২০২৩’ দেওয়া হবে। রাজনীতির ক্ষেত্রে অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন (মরণোত্তর), শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে অণিমা মুক্তি গমেজ ও মোছা: নাছিমা জামান ববি, গবেষণায় ড. সেঁজুতি সাহা এবং বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলকে ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক-২০২৩’ এর জন্য চূড়ান্তভাবে মনোনীত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৮ আগস্ট সকাল ১০টায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে পদক বিতরণ এবং আর্থিক অনুদান ও সেলাই মেশিন বিতরণ কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করবেন। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য ‘সংগ্রাম-স্বাধীনতা, প্রেরণায় বঙ্গমাতা’। অনুষ্ঠানে বঙ্গমাতার জীবন ভিত্তিক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. তানিয়া হক।
প্রতিমন্ত্রী ইন্দিরা বলেন, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য সহধর্মিণী এবং সহযোদ্ধা। তিনি বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতিটি পদক্ষেপে বঙ্গবন্ধুকে সক্রিয় সহযোগিতা করেছেন ও প্রেরণা দিয়েছেন। এই মহীয়সী নারী নিজেকে শুধু স্বামী, সন্তান, সংসার ও আত্মীয়-স্বজনের প্রতি নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেননি, তিনি বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক, সামাজিক ও পারিবারিক জীবনে সর্বক্ষণের সহযোগী ও অনুপ্রেরণাদায়ী হয়ে নিভৃতে কাজ করে গেছেন। মহান স্বাধীনতা অর্জনে এ মহীয়সী নারীর রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা।
তিনি বলেন, লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতার পর দেশ পুনর্গঠনে রেখে গেছেন অনন্য ভূমিকা। তিনি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করেন এবং স্বাধীন বাংলাদেশে নারীদের কর্মসংস্থানসহ নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের প্রকৃত পথ প্রদর্শক ছিলেন। তিনি নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে দক্ষতা এবং সক্ষমতা বৃদ্ধি ও কুটির শিল্পসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব নিজ জীবনের কঠিন দুঃসময়েও অসহায় মানুষের আর্থিক সহায়তা করেছেন এবং তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সাহস যুগিয়েছেন। বঙ্গমাতার এই মহানুভবতাকে স্মরণ করে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় বঙ্গমাতার জন্মদিনে অসচ্ছল নারীদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে সেলাই মেশিন ও আর্থিক অনুদান দিয়ে আসছে। এবারও সারাদেশে অসচ্ছল ও অসহায় নারীদের প্রায় পাঁচ হাজার সেলাই মেশিন এবং ৬০ লাখ টাকা দেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, সারাদেশে জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে সমন্বয় করে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর-সংস্থা বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকী উদযাপনে আলোচনা সভার আয়োজন করবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস ও মিশনসমূহ বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠান উদযাপন করবে। যার মাধ্যমে দেশের নতুন প্রজন্ম বঙ্গমাতার সংগ্রামী জীবন, আত্মত্যাগ, সাহসিকতা, দেশপ্রেম, মহান মুক্তিযুদ্ধে তার অপরিসীম অবদান এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের অজানা তথ্য জানতে পারবে। দিবসটি উপলক্ষে জাতীয়ভাবে ক্রোড়পত্র ও পোস্টার প্রকাশ করা হবে। মহীয়সী নারী বঙ্গমাতার গৌরবময় কর্মজীবনের ওপর প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ ও স্মরণিকা প্রকাশ করা হবে। এছাড়া বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হবে। বঙ্গমাতার কর্মময় ও বর্ণাঢ্য জীবনের বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন দিয়ে সাজানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারেক, জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান চেমন আরা তৈয়ব, অতিরিক্ত সচিব মো. মুহিবুজ্জামান, জাতীয় মহিলা সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আবেদা আক্তারসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন: