প্রকাশিত:
৬ আগষ্ট ২০২৩, ১৪:১৪
আজ ৬ আগষ্ট বন্ধু দিবস। নির্ভরতা, বিশ্বাস ও ভালোবাসার অপর নাম বন্ধুত্ব। ‘বন্ধু’ শব্দটি খুব ছোট হলেও এর ব্যাপ্তি অনেক। বন্ধুত্বে নেই কোনো বয়সের বেড়াজাল। দূরত্ব বা সম্পর্কের ঊর্ধ্বে বন্ধুত্বের অবস্থান। একজন প্রকৃত বন্ধু ব্যথিত হয় তার বন্ধুর ব্যথায়, খুশি হয় বন্ধুর সাফল্যে-আনন্দে, আর বন্ধুর বিপদে ভাগ করে নেয় নিজের জীবনের নানা প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির মুহূর্তগুলো।
বন্ধুত্বের বন্ধন আসলে কোনো কিছু দিয়ে মাপা যায় না। তবে এ ক্ষেত্রে আমার ভালো লাগার বিষয় হলো যে কোনো চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই বন্ধুর সঙ্গে জীবনের সব বিষয়ে আলাপ করতে যায়। কে কি ভাবল বা কি বললো, কোন কথাটা বললে কি উত্তর আসবে বা সমস্যা হবে কি না, এই বিষয়গুলো মাথায় আসে না। এ যেন বন্ধুত্বের আকাশে মনের কথা নাটাইবিহীন ঘুড়ির মতো উড়তে থাকে।
শুধুমাত্র সহপাঠিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব তৈরি হবে তা কিন্তু নয়। পরিবারের যে কারোর সঙ্গে বন্ধুত্বের বন্ধন তৈরি হতে পারে। সেটা হতে পারে দাদার সঙ্গে নাতি-নাতনি, বাবা- মায়ের সঙ্গে সন্তানের বা স্বামীর সঙ্গে স্ত্রীর।
তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে পুরো পৃথিবী এখন হাতের মুঠোয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে বন্ধু খুঁজে নেওয়া যায় এক ক্লিকেই। আবার দীর্ঘকাল যে বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না তাকেও এক নিমিষেই খুঁজে পাওয়া যায়। তাই বন্ধুত্বের পরিধি এখন বিশ্বব্যাপী। এখন বন্ধুদের সঙ্গে দীর্ঘদিন দেখা বা যোগাযোগ না হলেও সম্পর্কটা সব সময় প্রাণবন্ত থাকে। এ কারণেই আমেরিকার রাজনীতিবিদ হাবার্ট এইচ হামফ্রে বলেছেন, ‘জীবনের সবচেয়ে বড় উপহার হচ্ছে বন্ধুত্ব, এবং আমি তা গ্রহণ করেছি।‘
বন্ধুত্ব আপনা-আপনি গড়ে ওঠে না। শিক্ষাজীবনে আমাদের অনেক সহপাঠী থাকেন। কিন্তু সবাই বন্ধু হয়ে ওঠে না। যার সঙ্গে মনের মিল থাকে, নির্ভর করা যায় তার সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। জোর করে বন্ধু হওয়াও যায় না আর পাওয়াও যায় না। ঠিক তেমনি কর্মক্ষেত্রে অনেক সহকর্মী থাকলেও সবাই একে অন্যের কাছের বন্ধু হয়ে উঠতে পারেন না। তবে, বন্ধুত্বের গভীরতা ও স্থায়ীত্বের বিচারে ছোটবেলার বন্ধুরাই সবচেয়ে ভালো বন্ধু হিসেবে জীবনে স্থান করে নেয়।
আমাদের জীবনে অনেক ঘটনাই ঘটে বা অনেক কথাই থাকে যেগুলো আমরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারি না। অথচ বন্ধুদের সঙ্গে সে বিষয়গুলো আলাপ করতে পারি অনায়াসেই। বিপদ-আপদের সত্যিকারের বন্ধুদের একমাত্র কাছে পাওয়া যায়। একজন ভালো বন্ধু হতে হলে ভাল শ্রোতা হওয়াটা জরুরি। বন্ধুত্বের আরেকটি আবশ্যক বিষয় হলো বিশ্বস্ততা। নিজের স্বার্থকে মুখ্য করে না দেখে বন্ধুর জন্য ভাবনা, বন্ধুত্বের একটি শক্ত ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।
বন্ধুত্ব আসলে এমন এক সম্পর্ক, যা রক্তের সম্পর্ককে ছাপিয়ে আত্মার সম্পর্ক হিসেবে মানুষের জীবনে জায়গা করে নেয়। ভালোবাসা, মায়া, সম্মান বন্ধুত্বের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বন্ধুত্বের সম্পর্কটা তাই সহপাঠি, সমবয়সী কিংবা প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। যার সঙ্গে যার মনের মিল থাকবে তার সঙ্গেই তার বন্ধুত্ব তৈরি হবে। সে কাছে থাকুক বা দূরে, বয়সে ছোট হোক বা বড়। বন্ধু দিবসের ভালোবাসার আভা ছড়িয়ে যাক সকল বন্ধুদের মাঝে। সকল বন্ধু সম্প্রীতি ও ভালোবাসার বন্ধনে মুছে দিক ভুল বোঝাবুঝি আর মন খারাপের গল্প।
মন্তব্য করুন: