শনিবার, ২৩শে নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল daajkaal@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • অক্টোবরে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৭৫ জন নিহত
  • বোয়ালখালীতে আগুনে ৫ বসতঘর পুড়ে ছাই
  • ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি কেলি রদ্রিগেজ
  • প্রথমবার সচিবালয়ে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা
  • এস আলমের ঋণ জালিয়াতি, কেন্দ্রিয় ব্যাংকের ১৩ জনকে তলব
  • সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা
  • ড. ইউনূসের ভিশনের দিকে তাকিয়ে যুক্তরাজ্য: ক্যাথরিন ওয়েস্ট
  • ২০২৫ সালে সরকারি নির্মাণে পোড়া ইট ব্যবহার বন্ধ হবে
  • নাম ও পোশাক বদলাচ্ছে র‌্যাব
  • গণহত্যা মামলায় ৮ পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেফতারের নির্দেশ

‘অকারণে’ বাড়ছে ডিমের দাম, ডজন ১৭০ টাকা

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত:
৬ আগষ্ট ২০২৩, ১৩:৫৯

চাল, ভোজ্যতেল, গ্যাস-পানিসহ নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীন। কিছুদিন স্বস্তিতে পার হওয়ার পর আবারও বেড়েছে ডিমের দাম।

ডিমের মূল্যবৃদ্ধিতে প্রভাব পড়ছে দরিদ্র মানুষের আমিষের চাহিদা মেটানোতে। দুর্মূল্যের বাজারে পরিবারের খাবার খরচ কমাতে যারা ডিম খাচ্ছিলেন, তাদের ঘাড়ের বোঝাটাও আরেকটু ভারী হয়েছে।

গত কয়েক দিনের ব্যবধানে প্রতি ডজন মুরগির ডিমের দাম খুচরায় ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে ১৭০ টাকা হয়েছে। কোনো কারণ ছাড়াই কারসাজির মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা ডিমের দাম বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভোক্তারা।

বিক্রেতারা বলছেন, গত মাসেও প্রতি হালি ডিমের দাম ছিল ৫০ টাকার মধ্যে। এর আগে কখনো কোনো ডিমের দাম এত বেশি হয়নি। খামার থেকে এখন ডিম কম আসছে। ডিমের সরবরাহ কম, এ কারণে দাম বেড়েছে। কম দামে আনতে পারলে ভোক্তাদের কম দামে ডিম দিতে পারব। তবে এ বছর মূল্যবৃদ্ধির হার অস্বাভাবিক। এভাবে দাম বাড়ানো যুক্তিঙ্গত নয়। কোনো কিছুর দাম বাড়াতে হলে সুনির্দিষ্ট কারণ থাকতে হবে।

জানা গেছে, ডিম শুধু দরিদ্র বা বিক্রেতারা নন, ডিম এখন প্রতিটি ঘরে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয়। সস্তা ও সহজলভ্য বিবেচনায় এমন পুষ্টি উপাদানে ভরপুর খাদ্য দ্বিতীয়টি আর নেই। এছাড়া যারা মাছ-মাংস কিনে খেতে পারছেন না, তাদের আমিষের চাহিদার বেশি অংশ এখন ডিম পূরণ করে। পাশাপাশি বিভিন্ন খাদ্যের প্রধান উপাদান হিসেবে শিশু থেকে বৃদ্ধ প্রায় সব বয়সীদের কাছে জনপ্রিয় ডিম।

শনিবার (০৫ আগস্ট) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আকার ভেদে ফার্মের মুরগির ডিমের ডজন পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা দরে। সেই হিসাবে প্রতি হালি ডিমের দাম পড়ে ৪৮ টাকা ৩৩ পয়সা থেকে ৫০ টাকা। আর সেই ডিম খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা ডজন। আর সুপারশপগুলোতে ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৭০-১৮০ টাকায়। খুচরায় ছোট আকারের ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়। আর একটু বড় আকারের ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৫৬ টাকা ৬৬ পয়সা টাকায়। আর সুপারশপে ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৫৭ থেকে ৬০ টাকায়।

অন্যদিকে হাঁসের ডিমের ডজন পাইকারিতে ২১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি হালি ৭০ টাকা। খুচরায় প্রতি ডজন ২৪০ টাকা। হালি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। অথচ কয়েকদিন আগেও খুচরা বাজারে মুরগির ডিমের হালি বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকায়। আর হাঁসের ডিম প্রতি হালি বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকায়।

পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে রিকশাচালক আব্দুল বলেন, অভাবের সংসারে ডিম সবচেয়ে ভালো খাবার। সবার পছন্দ। কম দাম, পোষায় বেশি। ডিম ছিল বলে এ অভাবের সংসারে একবেলা ঝোল-ভাত খাওয়ার সাধ মেটে। সেটাও বেড়ে গেলে না খেয়ে মরার দশা হবে!

সুত্রাপুর কাঁচাবাজারে ডিম কিনতে আসা গৃহিণী জেসমিন আক্তার বলেন, কয়েকদিনের মধ্যে এক হালি ডিমের দাম ১০ টাকা বেড়ে গেছে! এত দামে আমি কখনো ডিম কিনিনি। সাশ্রয়ী দামে এই একটি খাবারই ছিল। সেটাও এখন অস্বাভাবিক চড়া। কী কারণে দাম বাড়ছে, কেউ বলতে পারে না।

সুত্রাপুর বাজারে দীর্ঘদিন ডিম বিক্রি করেন সুমন বেপারী। তিনি বলেন, এখন ডিমের দাম সবোর্চ্চ। জীবনে কখনো এত দামে ডিম বিক্রি করিনি। বর্তমানে পাইকারিতে প্রতি হালি ফার্মের মুরগির ডিম লালটা বিক্রি করছি ছোট হলে ৪৫ টাকা আর বড় হলে ৫০ টাকা। আর হাঁসের ডিম প্রতি হালি ৭০ টাকা। কক মুরগির ডিম প্রতি হালি ৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহেও হালিতে ৫ টাকা কম ছিল। আমরা আড়ৎ থেকে ডিম আনি। এখানে খুচরা ও পাইকারি বিক্রি করি। কম দাম পেলে আমরা কম দামে বিক্রি করি। বেশি দাম পেলে বেশি দামে বিক্রি করি। ডিমে দাম কেন বাড়ছে সেটা বলতে পারব না। আড়তে জিজ্ঞেস করলে বলে সরবরাহ কমেছে। আসলে সরবরাহ কমেছে কি না জানি না।

রায়সাহেব বাজারের পাইকারি খুচরা ডিম বিক্রেতা রিয়াজ মিয়া বলেন, কাপ্তান বাজারের আড়ৎ থেকে ১০০টি ডিম খরচসহ ১১৮০ টাকা কেনা পড়ে। সেই ডিম আমরা পাইকারি বিক্রি করি ১২০০ থেকে ১২৫০ টাকা। সে হিসাবে প্রতি হালি ডিমের দাম পড়ে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। আর খুচরা বাজারে প্রতি হালির ডিমের দাম আকার ভেদে ৫৫ থেকে ৫৭ টাকা বিক্রি হয়। সেখানে আমাদের কী করার আছে? আমরা কী করবো? দাম বাড়লে বাড়াই, কমলে দাম কমাই। তবে কী কারণে দাম বড়ছে সেটা বলতে পারি না।

রায়সাহেব বাজারে খুচরা ডিম বিক্রেতা শাহীন মিয়া বলেন, আগে কখনো ডিমের দাম এত বেশি ছিল না। গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিনই ডিমের দাম বাড়ছে। এ কারণে ডিম কিনতে আসা প্রায় প্রত্যেক ক্রেতার সঙ্গে দাম নিয়ে বাগবিতণ্ডা হচ্ছে। দাম শুনে ফিরে যাচ্ছেন বেশির ভাগই। আমরা কী করব? পাইকারি বিক্রেতার এককথা, নিলে নেন, না নিলে নাই।

রায়সাহেব বাজারে আসা ক্রেতা দীপু কর্মকার বলেন, ডিমের বাজারে এখন খেলা চলছে। গত মাসের শেষের দিকে এক ডজন ডিম কিনেছি ১৫৫ টাকা করে। আজ সেই ডিম কিনতে হচ্ছে ১৭০ টাকায়। ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে দাম বাড়াচ্ছে। বাজার মনিটরিং যদি ঠিক মতো হতে তাহলে সব কিছু নিয়ন্ত্রণে থাকতো। আসলে দেখার কেউ নেই। মরলে শুধু গরিব মরবে, তাতে কার কী?

পাইকারি কাপ্তান বাজারের ব্যবসায়ী অগর মন্ডল বলেন, খামার থেকে এখন ডিম কম আসছে। ডিমের সরবরাহ কম, এ কারণে দাম বেড়েছে। কম দামে আনতে পারলে ভোক্তাদের কম দামে ডিম দিতে পারব। আমরা তো খামারিদের কাছ থেকে কম দামে আনতে পারছি না, মুরগির খাবারের দাম বৃদ্ধির পর যাতায়াত ভাড়া বেড়েছে। ফলে খামারিদেরও ডিম বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

পাইকারি এই ব্যবসায়ী বলেন, ফার্মের মুরগির সাদা-লাল ডিমের হালি বিক্রি করছি ৪৭ টাকা। আর ডজন বিক্রি করছি ১৪০ থেকে ১৪২ টাকায়। আর হাঁসের ডিমের হালি বিক্রি করছি ৬৫ টাকায়। ডজন ১৯৫ টাকায় বিক্রি করছি।

অন্যদিকে খামারিরা বলছেন, মুরগির খাদ্য ও ওষুধের দাম বেড়েছে। এ কারণে উৎপাদন খরচও বেড়েছে। ফলে খরচ কমাতে অনেকে মুরগি কমাচ্ছে। এতে চাহিদার তুলনায় ডিমের সরবরাহ কমেছে।

অন্যদিকে প্রাণিসম্পদ বিভাগের উৎপাদনের তথ্য বলছে, ২০১০ সালে দেশে ডিমের উৎপাদন ছিল ৬০০ কোটি পিস, যা এখন ১ হাজার ৭৩৬ কোটিতে পৌঁছেছে। অর্থাৎ এক দশকে উৎপাদন প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। দেশে প্রতিদিন মুরগি, হাঁস, কবুতর ও কোয়েলের প্রায় পৌনে পাঁচ কোটি ডিম উৎপাদন হয়। পৃথক হিসাবে, কেবল মুরগির ডিম উৎপাদন হয় সাড়ে তিন থেকে চার কোটি। হাঁসের ডিমের সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর