শনিবার, ২৩শে নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল daajkaal@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • অক্টোবরে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৭৫ জন নিহত
  • বোয়ালখালীতে আগুনে ৫ বসতঘর পুড়ে ছাই
  • ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি কেলি রদ্রিগেজ
  • প্রথমবার সচিবালয়ে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা
  • এস আলমের ঋণ জালিয়াতি, কেন্দ্রিয় ব্যাংকের ১৩ জনকে তলব
  • সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা
  • ড. ইউনূসের ভিশনের দিকে তাকিয়ে যুক্তরাজ্য: ক্যাথরিন ওয়েস্ট
  • ২০২৫ সালে সরকারি নির্মাণে পোড়া ইট ব্যবহার বন্ধ হবে
  • নাম ও পোশাক বদলাচ্ছে র‌্যাব
  • গণহত্যা মামলায় ৮ পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেফতারের নির্দেশ

ঘূর্ণিঝড় আইলায় সৃষ্ট বিশালাকার খালটি মানুষ পাড়ি দিচ্ছে প্লাস্টিকের ড্রামের ভেলায়

কয়রা, খুলনা প্রতিনিধি

প্রকাশিত:
৬ আগষ্ট ২০২৩, ১১:২৪

খুলনার কয়রা উপজেলার মঠবাড়ি গ্রামের খালের দুই পারের মানুষদের প্রতিদিন এভাবে ঝুঁকি নিয়ে ড্রামের ভেলায় চেপে খাল পার হতে হয়

প্লাস্টিকের ড্রাম চারকোনা করে বেঁধে ওপরে তক্তার পাটাতন বিছিয়ে তৈরি করা হয়েছে ভেলা। পানিতে থই থই খালের দুই পাশে একটি লম্বা রশি আড়াআড়িভাবে খুঁটির সঙ্গে টানিয়ে রাখা হয়েছে। ভেলায় চড়ে ওই রশি টেনে টেনে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে শত শত শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। খুলনার কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের মঠবাড়ি গ্রামের খালপারের নিত্যদিনের চিত্র এটি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলায় বিধ্বস্ত হয় মঠবাড়ি গ্রাম। বেড়িবাঁধ ভেঙে গ্রামের মধ্য দিয়ে সৃষ্টি হয় খালটির। নতুন খালটি মঠবাড়ি গ্রামকে দুই ভাগে বিভক্ত করে পার্শ্ববর্তী শাকবাড়িয়া খালে গিয়ে মিশে যায়। খালটি আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১৬০ মিটার চওড়া, গভীরতা প্রায় ৩৫ ফুট। আইলার ১৪ বছর পেরিয়ে গেলেও মঠবাড়ি গ্রামের খালের ওপর বাঁধ কিংবা সেতু নির্মাণ না হওয়ায় ভাসমান ড্রামের ভেলায় ঝুঁকি নিয়ে পাড়ি দিতে হচ্ছে গ্রামের চার হাজার মানুষকে।

শনিবার (৫ আগষ্ট )মঠবাড়ি গ্রামের খালপাড়ে গিয়ে দেখা যায়, লোকজন প্লাস্টিকের ড্রামের ভেলায় উঠে নিজেরাই রশি টেনে পারাপার হচ্ছেন। খালটির পশ্চিম পারে প্রতাপ স্মরণী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মঠবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। আছে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক ও মিঠা পানির জলাধার। তবে সেখানকার বাসিন্দাদের উপজেলা সদরে যেতে হচ্ছে ড্রামের ভেলায় খাল পেরিয়ে। খালটির পূর্ব পারে মঠবাড়ি গ্রাম পেরিয়ে সুন্দরবন। রয়েছে একাধিক বাজার ও ফরেস্ট স্টেশন। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যাতায়াত ও সুপেয় পানির প্রয়োজনে কিংবা ক্লিনিকে সেবা গ্রহীতাদের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম এই খাল পাড়ি দেওয়া।

মঠবাড়ি খালটির পূর্ব পারের বাসিন্দা রুহুল আমিন বলেন, বিভিন্ন সময়ে ভোট এলে জনপ্রতিনিধিরা খালে বাঁধ দেবেন, সেতু দেবেন এ রকম প্রতিশ্রুতি দেন, কিন্তু পরে আর তা বাস্তবায়ন করেন না। গ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের পারাপারের জন্য ড্রামের ভেলা বানিয়ে দিয়েছেন। তাতেই এখন ঝুঁকি নিয়ে এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীরা পারাপার হচ্ছে।

২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলায় বিধ্বস্ত হয়েছিল মঠবাড়ি গ্রামটি। সে সময় নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে গ্রামের মধ্য দিয়ে সৃষ্টি হয় খালটির

খালটির পশ্চিম পারের প্রতাপ স্মরণী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বিশ্বজিৎ মণ্ডল জানায়, প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে ড্রামের ভেলায় খাল পার হতে হয়। ভেলা থেকে পড়ে গেলে বই–খাতা ভিজে যায়। অনেক সময় ভেলায় লোকজন বেশি উঠলে পার হতে পারে না তারা। এ জন্য অনেক সময় ক্লাসে উপস্থিত হতে দেরি হয়ে যায়।

খালের পশ্চিম পারের মঠবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবদুল রহিম বলেন, ‘আমি নিজেও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতিদিন ভেলায় করে খাল পার হয়ে বিদ্যালয়ে যাই। বর্ষায় যখন ঝড়বৃষ্টি বেশি থাকে, তখন অভিভাবকেরা শিক্ষার্থীদের খাল পারাপার নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন। এ সময় অনেকেই বিদ্যালয়ে আসে না।’

মঠবাড়ি খালের জন্য গ্রামের চার হাজার মানুষ কমিউনিটি সেবা, সুপেয় পানি ও বিদ্যালয়ে যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে বলে জানান মহারাজপুর ইউনিয়নের মঠবাড়ি এলাকার ইউপি সদস্য আবু সাইদ। তিনি বলেন, গ্রামের খালে একটি বাঁধের ব্যবস্থা করতে পারলে পারাপারের দুর্ভোগ লাঘবের পাশাপাশি খালে বৃষ্টির পানি আটকে রাখা সম্ভব হবে। এতে গ্রামটির কয়েক হাজার বিঘা জমিতেও বছরে দুবার ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হবে।

কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, ঘূর্ণিঝড় আইলার সময় নদীর পানির তোড়ে মঠবাড়ি গ্রামের মধ্য দিয়ে খাল হয়ে যায়। সেখানে বাঁধ নির্মাণ ব্যয়বহুল হওয়ায় স্থানীয়ভাবে তা করা সম্ভব হয়নি। বড় ধরনের প্রকল্প অনুমোদনের মাধ্যমে বাঁধের ব্যবস্থা করা গেলে জনগণ উপকৃত হবে। এ বিষয়ে নিজেদের চেষ্টার কথা জানান তিনি।


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর