প্রকাশিত:
১২ জুন ২০২৫, ১৩:০২
সাবেক সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ ও কলাম লেখক গোলাম মাওলা রনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতি এখন লন্ডনমুখী। আমরা যারা বাংলাদেশে আছি তারা প্রায় সবাই লন্ডন থেকে কি সিদ্ধান্ত আসে সেই বিষয়ের ওপর অধীর আগ্রহে নজর রাখছি। কারণ হলো বাংলাদেশের এই মুহূর্তে ক্ষমতার যে প্রতিভু এবং বলা হয়ে থাকে যে নির্বাচন হলে যারা ক্ষমতায় আসবেন তাদের প্রধান নেতা এখন লন্ডনে আছেন। আবার অন্যদিকে এখন এই মুহূর্তে রাষ্ট্র পরিচালনায় নিযুক্ত ডক্টর মোহাম্মদ ইউনূস তিনিও লন্ডন গিয়েছেন। তার এই লন্ডন গমন নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে নানা রকম কথাবার্তা রয়েছে।’
রনি বলেন, ‘ইংল্যান্ডে দুটো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে গেছে। সেটি হলো— তার ইংল্যান্ড গমন উপলক্ষে সেখানে বর্তমান সরকারদলীয় সংসদ সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকী ড. মোহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে একটি চিঠি দিয়েছেন। অর্থাৎ তিনি তাকে পার্লামেন্টে যে টিউলিপ সিদ্দিকীর অফিস রয়েছে সেই অফিসে তাকে লাঞ্চ অথবা ডিনারের দাওয়াত দিয়েছেন।
চিঠির ভাষায় তার বক্তব্য, ইটস পলিটিক্স। আমরা যেটিকে ব্রিটিশ পলিটিক্স বলি। সেই ব্রিটিশ পলিটিক্সে তিনি সেখানে ড. মোহাম্মদ ইউনূসকে স্বীকার করেননি, অস্বীকার করেননি। তিনি সেখানে সম্মানও জানাননি আবার অসম্মানও জানাননি। তিনি ড. মহম্মদ ইউনুসকে কতগুলো প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন এবং তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছেন।’
‘দ্বিতীয় যে বিষয় সেটি হলো— ড. মোহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠক। তো প্রথমদিকে এই বৈঠকটি নিয়ে কোনো রা-শব্দ হয়নি। এই বৈঠকটি আসলে বিএনপির পক্ষ থেকে করা হচ্ছে। অর্থাৎ বিএনপি আগ্রহ দেখিয়ে তারেক রহমানের সঙ্গে ড. মোহাম্মদ ইউনূসের যে বৈঠক সেটি আয়োজন করতে চাচ্ছে; নাকি ড. মোহাম্মদ ইউনূস তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চাচ্ছেন।
যেহেতু সরকারের পক্ষ থেকে ওভাবে মিডিয়াতে বিশেষ করে আমাদের সামাজিক মাধ্যমে স্ট্রংলি রিপ্রেজেন্ট করার মতো কোনো ব্যক্তিত্ব নেই; কাজেই বিএনপিপন্থী যারা লোকজন তারা সামাজিক মাধ্যমে যেভাবে একটি উত্তাপ ছড়াচ্ছেন, তাতে মনে হচ্ছে যে ড. মোহাম্মদ ইউনূস বা তার সরকার তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করার জন্য রীতিমতো মরিয়া হয়ে পড়েছেন।’
‘এখন যে বিষয়টি গুরত্বপূর্ণ তা হলো— তারেক রহমান কি ড. ইউনূসের সঙ্গে বসবেন? এটি বিএনপির লোকজনের প্রধান প্রশ্ন। এখন জুন মাসের ১৩ তারিখে ড. মোহাম্মদ ইউনূস এবং তারেক রহমানের মধ্যে একটা সম্ভাব্য বৈঠক হতে পারে। এখন এই বৈঠকে কি আলোচনা হবে? আমরা এখান থেকে অনেক আন্দাজ করছি। মানে বিএনপি যারা লোকজন তারা আন্দাজ করছেন যে ড. মোহাম্মদ ইউনূস যে নির্বাচনটি করতে চাচ্ছেন এপ্রিল মাসে সেটিকে বিএনপি বা তারেক রহমান ফেব্রুয়ারি মাসে নিয়ে আসার জন্য তার প্রতি অনুরোধ জানাবেন, চাপ প্রয়োগ করবেন বা দাবি জানাবেন বা তিনি প্রস্তাবনা দিবেন বা তাকে কনভিন্স করার চেষ্টা করবেন। আর ড. মোহাম্মদ ইউনূস যদি এই দাবি মেনে নেন তাহলে তো আর কোনো কথাই রইলো না।’
‘ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হবে এবং ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলো মোটামুটি ঐক্যমতে পৌঁছে গেছে। জামায়াতও বলেছে যে ফেব্রুয়ারি মাস নির্বাচন হতে পারে। তাহলে আর কোনো সমস্যা রইলো না। আর এরকম যদি একটা সরল সমীকরণ হয়ে যায়, ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হবে; তাহলে তো আর কোনো অনিশ্চয়তা থাকলো না। ড. মোহাম্মদ ইউনূস একটি নির্বাচন দিবেন, বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। আর ড. মোহাম্মদ ইউনূস ক্ষমতা হস্তান্তর করে সসম্মানে তার জায়গায় পৌঁছে যাবেন এটাই আপাতত মনে হচ্ছে।’
‘কিন্তু ঘটনা কি এত সহজ? রাজনীতি কি এতটা সরল এবং আমরা যেভাবে কাউন্ট করি বা আমরা যেভাবে হিসাব করি ঠিক ওইভাবে কি রাজনীতির মাঠ গোছানো সম্ভব বা রাজনীতির মাঠে ওই ধরনের কার্যক্রম চলে। মোটেও নয়, বাস্তব ব্যাপার হলো এটা ভীষণ রকম একটা জটিল প্রক্রিয়া। রাজনীতির অঙ্গনে প্রতি মিনিটে মিনিটে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়ে যায়, পরিবেশ পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়ে যায় এবং ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে রাজা ফকির হয়ে যায়, আর ফকির রাজা হয়ে যায়। কাজেই সেখানে ২০২৬ সালের এপ্রিল মাস হোক কিংবা ফেব্রুয়ারি মাস হোক কিংবা জুন মাস হোক। যেটি ড. মোহাম্মদ ইউনূসের একেবারে চূড়ান্ত মনোবাসনা ছিল যে ২০২৬ সালের এপ্রিল মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে নির্বাচন হবে।’
‘আমার ব্যক্তিগত অভিমত ছিল, এটি যদি বিএনপি মেনেও নেয় তবুও ২০২৬ সালের জুন মাসে নির্বাচন হবে না। আবার এই যে ড. মোহাম্মদ ইউনুস বলেছেন যে এপ্রিল মাসে নির্বাচন হবে প্রথমার্ধে মানে ১৫ তারিখের মধ্যে। এটাও আমার কাছে মনে হচ্ছে যে একটি কৌশল। অর্থাৎ এই নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিএনপিকে স্টপ রাখা। পরবর্তীতে যা হবে তা হবে। আবার বিএনপির পক্ষ থেকে যা কিছু করা হচ্ছে কাউন্টার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে বা ড. মোহাম্মদ ইউনুসের সঙ্গে একটা সমঝোতার চেষ্টা করা হচ্ছে, এটিও শেষ পর্যন্ত হবে না।’
গোলাম মাওলা রনি বলেন, ‘লন্ডনের মাটিতে এই দুই ব্যক্তি যখন মুখোমুখি হবেন, সেখানে ভালো কিছু আসবে বলে আমি আশা করি না। বরং যেটা মনে হচ্ছে যে, তাদের ব্যক্তিত্ব শিক্ষা-দীক্ষা চরিত্র এটার একটা চূড়ান্ত পারফরমেন্স দেখানোর জন্য একে অপরের প্রতি প্রভাব বিস্তার করার জন্য তারা উভয়ে চেষ্টা করবেন। আর সে চেষ্টা করতে গিয়ে এখন যতটুকু সম্পর্ক আছে সরকারের সঙ্গে বিএনপি সেটি আরো ঝুঁকিতে পড়বে বলে আমি মনে করছি।’
মন্তব্য করুন: