প্রকাশিত:
১২ জুন ২০২৫, ১১:৩৩
বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস আজ (১২ জুন)। বিশ্বের অন্য দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালন করা হচ্ছে। এ উপলক্ষে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা এবং ইউনিসেফসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা নানা কর্মসূচি নিয়েছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য, ‘স্বপ্নের ডানায় ভর করি, শিশুশ্রমের শৃঙ্খল ছিঁড়ি—এগিয়ে চলি দৃপ্ত পায়ে, আশার আগুন বুকে জ্বালি।
’এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ২০২৫ সালের মধ্যে দেশকে সব ধরনের শিশুশ্রম থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০২১-২৫ প্রণয়ন করা হয়েছে। এ কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ‘জাতীয় শিশুশ্রম কল্যাণ পরিষদ’ কাজ করছে।
সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের পুনর্বাসন এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর বিকাশ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ ও ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমবিষয়ক আইএলও কনভেনশন অনুসমর্থন করেছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর শিশুশ্রম সমীক্ষা-২০০৩ অনুযায়ী, বাংলাদেশে শ্রমে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা ছিল প্রায় ৩২ লাখ। সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপে এ সংখ্যা কমে ১৭ লাখে নেমেছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যম দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরে অনুষ্ঠান, টিভিসি প্রচার করবে। সারা দেশে কলকারখানা ও শ্রমঘন এলাকায় ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার টানানো হবে। শিশুশ্রম নিরসনে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়। বিভিন্ন শিল্প এলাকার কলকারখানায় শিশুশ্রম নিরুৎসাহিত করতে বিশেষ পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়।
বিবিএসের জরিপ অনুযায়ী, দেশে শ্রমে নিয়োজিত ২০ লাখ ১০ হাজার শিশুই পারিশ্রমিক পায় না। আর যারা পারিশ্রমিক পায়, তাদের গড় আয় মাসে ৬ হাজার ৬৭৫ টাকা। অনানুষ্ঠানিক খাত; যেমন গৃহকর্ম, ছোট কারখানায় নিয়োজিত শিশুদের পারিশ্রমিক দেওয়া হয় না। কারখানায় কাজ শেখানোর কথা বলে মাসের পর মাস শিশুকে বেতন-ভাতার বাইরে রাখা হয়।
শিশু অধিকারকর্মীরা জানান, খুব কম খরচে শিশুদের দিয়ে বেশি কাজ করিয়ে নেওয়া যায় বলে নিয়োগকর্তারা শিশুদের কাজে নেন। আর পরিবারগুলো কখনো দারিদ্র্যের কারণে, কখনো বাড়তি আয়ের আশায়, কখনো আবার নিরাপত্তাহীনতা কিংবা অসচেতনতার কারণে শিশুদের কাজে পাঠায় ৷
এমন প্রেক্ষাপটে আজ ১২ জুন বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস।
জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতি, ২০১০ অনুযায়ী, ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে যারা সপ্তাহে ৪২ ঘণ্টা পর্যন্ত হালকা পরিশ্রম বা ঝুঁকিহীন কাজ করে, তাদের এই শ্রমকে অনুমোদনযোগ্য হিসেবে ধরা হয়। তবে ৫ থেকে ১১ বছর বয়সী কোনো শিশু যদি ঝুঁকিহীন কাজও করে, তবে সেটা শিশুশ্রম হবে। আর ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী কেউ যদি সপ্তাহে ৪২ ঘণ্টার বেশি কাজ করে, সেটি ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, শিশুশ্রম নিরসনে এক যুগে ৩৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে নানা প্রকল্প ও কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। কিন্তু শিশুশ্রম না কমে বরং বেড়েছে। জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ, ২০২২ অনুসারে, দেশে শ্রমে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা ৩৫ লাখ ৩৬ হাজার ৯২৭। এটা ২০১৩ সালের জরিপের তুলনায় প্রায় ৩ শতাংশ বেশি।
শিশুশ্রম নিরসনে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মসূচির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিশু অধিকারকর্মীরা। এ বিষয়ে বেসরকারি সংস্থা এডুকো বাংলাদেশের ব্যবস্থাপক (শিশুশ্রম নিরসন) আফজাল কবির খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, শিশুশ্রম নিরসনে যে পরিকল্পনা ও প্রকল্পগুলো নেওয়া হয়, তা বাস্তবায়নের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ থাকে না। যেটা বরাদ্দ থাকে, সেটাও সঠিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে কি না, তা তদারক করা হয় না।
আফজাল কবির জানান, শিশুশ্রম নিরসনে আইন প্রয়োগের দৃষ্টান্ত থাকা দরকার। যাঁরা প্রকৃতপক্ষেই দারিদ্র্যের কারণে সন্তানকে কাজে দিচ্ছেন, তাঁদের সন্তানকে স্কুলে ফিরিয়ে নিতে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আনা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে প্রয়োজন সচেতনতা বাড়ানো।
মন্তব্য করুন: