প্রকাশিত:
১০ জুন ২০২৫, ১০:৩৬
ঈদুল আজহার পর রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরগুলো থেকে ঘরমুখো মানুষের চলে যাওয়া দেখা যায় দারুণভাবে। তবে এবার চিত্রটা ভিন্ন—শহর থেকে গ্রামের দিকে ফিরছে নিম্ন আয়ের বহু শ্রমজীবী মানুষ, যাঁরা ঈদের আগে বাড়ি যেতে পারেননি। পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে তারা এখন ফিরছেন, তবে নানা বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে, জীবন ঝুঁকি নিয়েই।
সিরাজদিখান উপজেলার বাসাইল ইউনিয়নের পাথরঘাটা বাজারের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল একটি ছোট পিকআপভ্যান। গাদাগাদি করে বসে আছেন অন্তত ১৫ জন নারী-পুরুষ ও শিশু, সঙ্গে রয়েছে ফ্রিজ, ফ্যান, চৌকি ও দৈনন্দিন ব্যবহারের নানা আসবাবপত্র। দেখলেই বোঝা যায়, তারা কেবল যাচ্ছেন না—একপ্রকার শহর ছেড়ে ফিরে যাচ্ছেন নিজ গ্রামে।
কথা বলে জানা গেল, তারা দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা—পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলার দিকের বাসিন্দা। ঈদের আগে ফেরার ইচ্ছে থাকলেও নানা অজুহাতে ফেরা হয়নি। কাজ শেষ না হওয়ায় সময় হয়নি। কেউ কেউ ইটভাটায় শ্রম দিয়েছেন, কেউ কৃষি জমিতে দিনমজুর হিসেবে কাজ করেছেন। এক ব্যক্তি বলেন, ‘ভাই, কোরবানির মাংস নিয়া যাই। পরিবাররে দিমু। ঈদ তো বাড়িতেই হয় আসল।’ ঈদের আগে বাড়িতে গেলে যাওয়া একটু আধটু মাংস এখন নিয়ে যেতে পারি, তখন পারতাম না। তাছাড়া, গাড়ি ভাড়া বেশি।
তবে এসব যাত্রায় আছে মারাত্মক ঝুঁকি। অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামালে বোঝাই পিকআপভ্যান দ্রুতগতিতে চলতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনার শঙ্কা তৈরি করে। এমনকি পেছনের গেট খোলা অবস্থায় বসে থাকা যাত্রীরা খুব সহজেই ছিটকে পড়তে পারেন।
তারা জানান, বাস বা লঞ্চে করে গেলে প্রতিজনের ভাড়া দ্বিগুণ লাগত। সেই সঙ্গে মালামাল বহনের বাড়তি ঝামেলা। তাই সকলে মিলে অল্প ভাড়ায় একটি পিকআপ ভাড়া করেছেন। এতে একদিকে খরচ কম, অন্যদিকে সবাই একসঙ্গে যাওয়া যায়। কিন্তু নিরাপত্তার বিষয়টি তেমন মাথায় নেই।
হাসাড়া হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঈদের আগে বা পরে এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রার প্রবণতা বেড়ে যায়। আইন অনুযায়ী এটি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলেও জনবল সংকট ও স্থানীয় প্রভাবের কারণে অনেক সময় ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না।
সড়ক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন যাত্রা কেবল যাত্রীদের জন্যই নয়, অন্য যানবাহনের জন্যও হুমকিস্বরূপ। সরকারিভাবে এই শ্রেণির মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ ও নিরাপদ করতে বিকল্প গণপরিবহন এবং সহায়ক নীতিমালা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
নিম্ন আয়ের এই মানুষগুলো কেবল ঈদের আনন্দ নয়, জীবনের অস্তিত্বও ঝুঁকির মুখে ফেলে রওনা হচ্ছেন প্রিয়জনের কাছে। যদিও এভাবে যাতায়াত ব্যবস্থা একেবারেই ঝুঁকিপূর্ণ, তবুও মনে আনন্দ। কম টাকায় ভাড়া দিয়ে যাচ্ছেন, সঙ্গে আছে কোরবানির মাংস—যা দিয়ে পরিবারে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নেবেন।
মন্তব্য করুন: