প্রকাশিত:
১১ মে ২০২৫, ১৩:২২
সিরাজগঞ্জে চলমান তাপদাহে প্রাণীকুল অতিষ্ঠ হয়ে পরেছে। দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় গরমের তীব্রতা বেড়েই চলেছে। গরমের তীব্রতা সহ্য করতে না পেরে বিভিন্ন প্রাণী পানিতে নেমে দীর্ঘ সময় অবস্থান করছে একটু স্বস্তির আশায়। গরমের কারণে দুধের উৎপাদন ও মুরগির ডিম উৎপাদনও কমেছে বলে জানিয়েছেন খামারিরা।
বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ এসিসিয়েশন সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মাহফুজুর রহমান জানান, তীব্র গরমের কারণে মুরগি খামারিদের ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলায় প্রায় ২ হাজার মুরগির খামার রয়েছে। খামারগুলোতে মুরগি রয়েছে প্রায় ৪৫ লাখ এর মতো।
তিনি আরও বলেন, প্রতিদিনই হিটস্ট্রোকে প্রতি হাজারে ৩-৪ টি মুরগি মারা যাচ্ছে। বিদ্যুত না থাকলে সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এতে ডিমের উৎপাদনও কমেছে।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার হরিনহাটা গ্রামের খামারি এস এম তফিজউদ্দিন বলেন, চলমান গরমে খামারে ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। প্রতিদিনই আমার খামারে বেশ কিছু মুরগি মারা যাচ্ছে। তাছাড়াও খাদ্যের দাম বৃদ্ধি থাকায় আমরা বিপাকে পড়েছি।
এছাড়াও সদর উপজেলা শিয়ালকোল ইউনিয়নের ক্ষুদ্র বিলধোলি গ্রামের খামারী রকি জানান, আমার খামারে প্রায় ৪০ হাজার মুরগী রয়েছে। প্রতিদিনই খামারে মুরগি মারা যাচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ শহরের বড় বাজারের মুরগি ব্যবসায়ি ইমান আলী জানান, গরমের কারণে প্রতিদিনই মুরগি মারা যাচ্ছে। যে কারণে আমরা মুরগি কম ক্রয় করছি। ফলে দাম অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে।
শাহজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া গ্রামের গরু খামারি মমতাজ উদ্দিন জানান, তার খামারে শতাধিক গরু আছে। প্রতিদিন ৮-৯ মন দুধ হতো। গরমের কারণে এখন দুধ উৎপাদন হয় ৬ মন। প্রচণ্ড গরমে গরুগুলো হাঁসফাঁস করে পানিতে নামতে চায়। আবার গোসল করালে ঠাণ্ডা লেগে যায়। এ অবস্থায় আমরা গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছি।
যমুনা চরে মহিষের বাথান নিয়ে আসা মজিবর রহমান জানায়, প্রতিবছরই এই সময়ে আমরা যমুনার চরে বাথান নিয়ে আসি। এবারের তীব্রগরমে গবাদি পশু নিয়ে আমরা পড়েছি বিপাকে। অধিকাংশ সময় এদেরকে পানিতে নামিয়ে রাখতে হয়। চর এলাকায় গরমের কারণে আমাদেরও টিকে থাকা দায় হয়ে পড়েছে।
শাহজাদপুর উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. বিল্লাল হোসেন জানান, শাহজাদপুরে তিন হাজার গো-খামার রয়েছে। এ খামারগুলোতে প্রাণীর সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ। গরমের কারণে আমরা খামারিদের গরুকে দিনে তিনবার গোসল করানো, ছায়ায় রাখার পরামর্শ দিয়ে আসছি।
তিনি আরও বলেন, এখনো খামারগুলোতে বড় ধরনের কোন ক্ষতি হয়নি। তবে এই তাপদহ অব্যাহত থাকলে খামারিরা আরও ক্ষতির মুখে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকতা ডা. এ কে এম আনোয়ারুল হক জানান, জেলায় মোট প্রায় ৮ হাজার খামার রয়েছে। গরমের হাত থেকে রক্ষার জন্য প্রতিদিন ২-৩ বার গোসল করানোর জন্য পরামর্শ দেন। এছাড়াও গরুর ঘরের চাল পানি দিয়ে ভিজানো এবং গবাদি পশু গুলোকে ভিটামিন ‘সি’ জাতীয় খাবার ও পর্যাপ্ত পানি পান করানোর পরামর্শ দেন। এছাড়াও গবাদি পশুগুলোকে ছায়াযুক্ত খোলা জায়গায় রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
মন্তব্য করুন: