প্রকাশিত:
১০ মে ২০২৫, ১৬:২৪
বিশ্বব্যাপী উষ্ণায়নের শঙ্কা যেখানে প্রতিদিন প্রকট হচ্ছে, সেখানে অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে সম্প্রতি এক গবেষণার ফলাফল বিশ্বজুড়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
চীনের টংজি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী দাবি করেছেন, ২০২১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত অ্যান্টার্কটিকায় বরফের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এই তথ্য সামনে আসতেই জলবায়ু পরিবর্তন অস্বীকারকারীরা বিষয়টিকে ‘প্রমাণ’ হিসেবে তুলে ধরেছেন যে, গ্লোবাল ওয়ার্মিং আসলে ‘ভুয়া’।
গবেষণায় বলা হয়, ওই তিন বছরে অস্বাভাবিক মাত্রার তুষারপাতের কারণে প্রতি বছর প্রায় ১০৮ বিলিয়ন টন বরফ জমেছে অ্যান্টার্কটিকায়। এর ফলে সাময়িকভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির হার কমে আসে প্রায় ১৫ শতাংশ। তবে এই পরিসংখ্যান যেন আত্মতুষ্টির কারণ না হয়—এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন গবেষকরা।
উল্লেখ্য, ২০০২ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত অ্যান্টার্কটিকায় বরফ গলছে ভয়াবহ হারে, বছরে প্রায় ১২০ বিলিয়ন টন। এই দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতা অনুযায়ী, আগামী কয়েক দশকে বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, টুভালু এবং অন্যান্য উপকূলীয় দেশগুলো ভয়াবহ সাগরভাঙন ও স্থায়ী ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলাগুলো, খুলনা, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী, ভোলা, ও কক্সবাজার ইতোমধ্যেই উচ্চ জোয়ারে পানি ওঠা এবং লবণাক্ততা বৃদ্ধির সমস্যায় ভুগছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাময়িকভাবে বরফ বাড়লেও অ্যান্টার্কটিকার পূর্বাংশে বরফ গলে গেলে বিশ্বব্যাপী সমুদ্রপৃষ্ঠ ১৭১ ফুট পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।
বিজ্ঞানীদের মতে, তিন বছরের বরফ বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে অস্বাভাবিক আবহাওয়ার কারণে ‘প্রেসিপিটেশন অ্যানোমালিজ’—অর্থাৎ হঠাৎ ভারি তুষারপাত। তবে এই পরিস্থিতি স্থায়ী নয় এবং বরফ গলার দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতা চলছে আগের মতোই। এর অর্থ, বাংলাদেশে সাইক্লোন, জলাবদ্ধতা, এবং স্থায়ী উদ্বাস্তু সংকট বাড়তে থাকবে।
একজন জলবায়ু বিজ্ঞানী বলেন, এই বরফ বাড়ার খবর শুনে অনেকে বিভ্রান্ত হতে পারেন, কিন্তু এটা মূল সমস্যার সাময়িক ‘ব্রেক’। বরং এখনই সময়, যখন বাংলাদেশসহ উপকূলীয় দেশগুলোকে আরও প্রস্তুত হতে হবে।
বিজ্ঞানীরা সতর্ক করছেন, জলবায়ু সংকটের সমাধান শুধু বিজ্ঞান নয়, এটি নীতিনির্ধারক এবং বৈশ্বিক সহযোগিতার ক্ষেত্র। কারণ, অ্যান্টার্কটিকার বরফের গতি প্রকৃতি পাল্টালেই বদলে যাবে বিশ্বের মানচিত্র।
মন্তব্য করুন: