প্রকাশিত:
১০ মে ২০২৫, ১১:১৯
অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, সাংবাদিকতার স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করা না গেলে আইনের শাসন, মানবাধিকার, গণতন্ত্র কিছুই থাকবে না। তারা সবাই সে লক্ষ্যে (সাংবাদিকতার স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা) কাজ করবেন।
সংবাদপত্রের মালিকদের সংগঠন নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার (৯ মে) রাতে রাজধানীর গুলশান ক্লাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে নোয়াবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম বর্তমানে ২৬৬ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যা অথবা সহিংসতা-সংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগে মামলা হওয়ার সমালোচনা করে বক্তব্য দেন। এ বিষয়ে বক্তব্যে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমরা অনেকবার বলেছি, আমি নিজে অনেকবার বলেছি, মিথ্যা মামলাকারীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মিথ্যা মামলাকারীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়, যখন এটা মিথ্যা মামলা প্রমাণিত হয়। মামলায় তদন্ত হবে, চার্জশিট হবে, বিচার শেষ হবে, তখন মিথ্যা মামলা প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নিতে পারেন, তার আগে ব্যবস্থা নিতে পারেন না। আমরা সবাই যদি নিশ্চিতভাবে জানিও এটি মিথ্যা মামলা, এখানে অনেককে অভিযুক্ত করা হয়, হয়তো তারা জড়িত না, কিন্তু আমাদের কিছু করার থাকে না।’ তবে মিথ্যা মামলা প্রমাণিত হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা নিয়ে সরকার বিব্রত জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, এর সমাধানে আইনি পরিবর্তন করা দরকার বা যেটা করা দরকার তা করা হবে।
একটা দেশে ১৫ বছর ধরে মিথ্যা মামলার চর্চা হয়েছে, সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি মিথ্যা মামলাকারীদের উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে বলেন, শেখ হাসিনাকে সরানো হলো কি তাঁর খারাপ বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করার জন্য? এ সময় মিথ্যা মামলা দায়েরকারীদের ধিক্কার জানান আইন উপদেষ্টা।
এ বিষয়ে পুলিশকে কঠোরভাবে নির্দেশ দেওয়া আছে জানিয়ে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, গ্রহণযোগ্য প্রমাণ না পেলে কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না।
স্বাধীন সাংবাদিকতা নিয়ে সব সরকারের আমলকে এক না করার আহ্বান জানান আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, কোনো সরকারের আমলে কি ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনামের বিরুদ্ধে দেড় শ মামলা হয়েছে? প্রথম আলো সম্পাদকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে? কোনো সরকারের আমলে কি কোনো পত্রিকায় বেসরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ করা হয়েছে? শুধু আওয়ামী লীগ আমলে করেছে। এমন অনেক কিছু আওয়ামী লীগের সরকারের আমলে করা হয়েছে, যা অন্য কোনো সরকার, এমনকি এরশাদ সরকারও করেনি।
৫৩ বছরেও বাংলাদেশে স্বাধীন সাংবাদিকতা প্রতিষ্ঠা করা যায়নি বলে মন্তব্য করেন সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম। তিনি বলেন, সরকারগুলো সব সময় প্রশংসা পছন্দ করে, কিন্তু যখনই সমালোচনা হয় তখনই কেমন জানি একটা পরিবর্তন ঘটে এবং সাংবাদিকদের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
বর্তমানে ২৬৬ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যা অথবা সহিংসতা-সংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগে হওয়া মামলার প্রসঙ্গ টেনে মাহ্ফুজ আনাম বলেন, খুনের মামলায় সাংবাদিকদের জড়ানো হচ্ছে, এটি দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। এ রকম মামলা সাংবাদিকদের জীবনকেও প্রভাবিত করছে।
মাহ্ফুজ আনাম বলেন, ‘আগে সাংবাদিকদের ওপর অত্যাচার হতো সরকারের তরফ থেকে। এখন সরকার কিন্তু আমাদের কাজে হস্তক্ষেপ করে না। এ জন্য প্রশংসা। কিন্তু এই বাস্তবতা? আমার বিরুদ্ধে কালকে মামলা হয়ে যাবে, যাকে আমি চিনি না, জানি না সে মামলা দিচ্ছে, কোথায় দিচ্ছে, কোন শহরে দিচ্ছে, কিছু জানি না। এই পরিবেশে সাংবাদিকতা হতে পারে না।’ এ বিষয়ে কিছু করার জন্য আইন উপদেষ্টার প্রতি অনুরোধ করেন মাহ্ফুজ আনাম।
নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। শুক্রবার রাতে রাজধানীর গুলশান ক্লাবে
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের খুব ইচ্ছা মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে প্রাতিষ্ঠানিক করা।
ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের আমলে নানা ধরনের চাপের কথা উল্লেখ করেন নোয়াবের সভাপতি এ কে আজাদ। তিনি বলেন, এখন আবার সংবাদপত্রশিল্পে কিছু নতুন হুমকি দেখা দিয়েছে। সংবাদপত্রের প্রচারসংখ্যা কমছে, আয় কমছে। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতির কারণে খরচও বাড়ছে। সংবাদপত্রশিল্পকে নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর ও করপোরেট কর এই শিল্পের বিকাশের ক্ষেত্রে বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে।
নোয়াবের কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচিত সদস্য ও দৈনিক বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এ কে এম আবদুল হাকিমও বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা ও ব্যবসায়ী, পত্রিকার সম্পাদক, রাজনীতিবিদ ও কয়েকটি দেশের কূটনীতিকেরা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন: