প্রকাশিত:
৮ জুন ২০২৩, ১৬:৪৩
তীব্র প্রাকৃতিক তাপপ্রবাহের মধ্যেও বিদ্যুতের লোডশেডিং যেইভাবে মাত্রাতিরিক্ত হইয়া উঠিয়াছে, উহা কোনো বিবেচনাতেই অগ্রাহ্য করিবার অবকাশ নাই। খোদ রাজধানী তো বটেই, অন্যান্য বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলিতেও পরিস্থিতি তথৈবচ। বিশেষত পল্লি অঞ্চলে বিদ্যুৎ থাকে না বলিলেই চলে। সোমবার সমকালের এক প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, দেশের সর্বাধিক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বপ্রাপ্ত পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড চাহিদার অন্তত ৪০ শতাংশ কম বিদ্যুৎ পাইতেছে। এইরূপ পরিস্থিতি শুধু জনজীবনকেই নাকাল করিতেছে না; উৎপাদন ব্যবস্থাতেও নিঃসন্দেহে বিঘ্ন ঘটাইতেছে। গাজীপুরের এক শিল্পকারখানার ব্যবস্থাপককে উদ্ধৃত করিয়া প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, রবিবার কারখানাতে প্রতিবার এক হইতে দেড় ঘণ্টা করিয়া অন্তত পাঁচবার বিদ্যুৎ গিয়াছে। ফলস্বরূপ কারখানা চালু করাই দুরূহ। উক্ত ব্যবস্থাপকের মতে, লোডশেডিংয়ের কারণে দিনে তাঁহাদের প্রায় এক লক্ষ টাকার ডিজেল লাগিতেছে। উহার কারণে কেবল পণ্য উৎপাদনেই অনাকাঙ্ক্ষিত মাশুল যুক্ত হইতেছে না; দেশের ডিজেল মজুতেও সংকটের ছায়াপাত ঘটাইতেছে। ডলার সংকটের কারণে যেইখানে জ্বালানির স্বাভাবিক প্রবাহে বিঘ্ন ঘটিতেছে, ডিজেলের অপ্রত্যাশিত ব্যবহার সেইখানে জাতীয় অর্থনীতির জন্য নূতন সংকট ডাকিয়া আনিতে পারে।
সন্দেহ নাই, অন্তত বিগত দুই দশকের বড় অংশ জুড়িয়া দেশ যেই ভয়াবহ বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলা করিয়াছে, বর্তমান সরকারের বহুবিধ পদক্ষেপের কারণে সাম্প্রতিক বৎসরগুলিতে উহা হইতে অনেকাংশেই মুক্তি পাইয়াছিলাম। ইতোমধ্যে প্রায় শতভাগ এলাকা বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা অবশ্যই প্রশংসনীয়। কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির কার্যটি যে বহুলাংশে অপরিকল্পিত এবং অস্বচ্ছ উপায়ে সম্পাদনে চেষ্টিত– বর্তমানে উহাও স্পষ্ট। যেমন দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহের নামে স্থাপিত কুইক রেন্টাল কেন্দ্রগুলি বিশেষত উহাদের ব্যাপক জ্বালানি ক্ষুধা ও অতিরিক্ত ক্যাপাসিটি চার্জের কারণে অর্থনীতিতে ক্ষত সৃষ্টিকারীরূপে বহু পূর্বেই চিহ্নিত। তৎসত্ত্বেও রহস্যজনক কারণে ওইগুলির চুক্তি কয়েক দফা নবায়ন করা হইয়াছে। বৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্রসমূহের জন্য নিরবচ্ছিন্ন ও সাশ্রয়ী জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণের বিষয়টিও পরিকল্পনার মধ্যে ছিল বলিয়া মনে হয় না।
দুঃখজনক হইল, পরিকল্পনাহীনতা বিদ্যমান লোডশেডিং পরিস্থিতি মোকাবিলা প্রচেষ্টায়ও পরিলক্ষিত। যেমন– বিদ্যমান পরিস্থিতির জন্য রবিবার বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ডলার ঘাটতিজনিত তেল ও গ্যাসের আমদানি সংকটকে দায়ী করিয়াছেন। তিনি ইহাও বলিয়াছেন, প্রয়োজনীয় ডলার সংগ্রহ করিতে দুই মাস সময় লাগায় কয়লা আমদানিতে বিলম্ব হইতেছে। এই জন্য পায়রাসহ কয়েকটি কেন্দ্র বর্তমানে বন্ধ। কিন্তু বিগত বৎসরের ফেব্রুয়ারি-মার্চে ডলার সংকট প্রকট রূপ ধারণ করার পর হইতেই তো বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় ও লেনদেন ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণকারী বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি বিভিন্ন মন্ত্রী বলিয়া আসিতেছেন, অন্তত জরুরি পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ডলারের সংকট হইবে না। তাহা হইলে যথাসময়ে কয়লা আমদানি হইল না কেন? প্রতিমন্ত্রী অবশ্য ইহারও জবাব দিয়াছেন। তিনি ইহার জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাসমূহের মধ্যে ‘সমন্বয় বাধাগ্রস্ত’ হওয়াকে দায়ী করিয়াছেন।
যাহা হউক, আগামী ১০ হইতে ১৫ দিনের মধ্যে দেশে কয়লা আসিবে এবং লোডশেডিংয়ের তীব্রতা হ্রাস পাইবে বলিয়া প্রতিমন্ত্রী প্রদত্ত আশ্বাসে আমরা ভরসা রাখিতে চাই। একই সঙ্গে উদ্ভূত পরিস্থিতির স্থায়ী সমাধানেও চেষ্টা চলিতে থাকেবে– এই প্রত্যাশাও আমরা রাখি।
মন্তব্য করুন: