শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর ২০২৪, ৮ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল daajkaal@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি কেলি রদ্রিগেজ
  • প্রথমবার সচিবালয়ে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা
  • এস আলমের ঋণ জালিয়াতি, কেন্দ্রিয় ব্যাংকের ১৩ জনকে তলব
  • সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা
  • ড. ইউনূসের ভিশনের দিকে তাকিয়ে যুক্তরাজ্য: ক্যাথরিন ওয়েস্ট
  • ২০২৫ সালে সরকারি নির্মাণে পোড়া ইট ব্যবহার বন্ধ হবে
  • নাম ও পোশাক বদলাচ্ছে র‌্যাব
  • গণহত্যা মামলায় ৮ পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেফতারের নির্দেশ
  • আজারবাইজানের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন প্রধান উপদেষ্টা
  • পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে সিঙ্গাপুরের সহায়তা চান প্রধান উপদেষ্টা

পরিবেশ

বৈদ্যুতিক গাড়ির মধুচন্দ্রিমা ফুরিয়ে আসছে

রোয়ান অ্যাটকিনসন

প্রকাশিত:
৮ জুন ২০২৩, ১৬:৪২

রোয়ান অ্যাটকিনসন

বিষয় হিসেবে তাত্ত্বিকভাবে বৈদ্যুতিক গাড়ি সম্পর্কে আমার কিছু ধারণা রয়েছে। আমার ইউনিভার্সিটির প্রথম ডিগ্রির বিষয় ছিল ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং। এর পর আমি কন্ট্রোল সিস্টেমের ওপর স্নাতকোত্তর করি। একাডেমিক ডিগ্রি এবং মোটরগাড়ির ব্যাপারে আমার আজীবনের আবেগ; এই দুই মিলে আমি বৈদ্যুতিক গাড়ি গ্রহণের জন্য প্রথমদিকে আকৃষ্ট হয়েছিলাম। ১৮ বছর আগে আমি প্রথম ইলেকট্রিক হাইব্রিড গাড়ি ক্রয় করি। আর পুরোপুরি ইলেকট্রিক গাড়ি কিনি ৯ বছর আগে। আমাদের দুর্বল বৈদ্যুতিক চার্জিং ব্যবস্থাপনা সত্ত্বেও উভয় যানই আমি খুব উপভোগ করেছি। বৈদ্যুতিক যানগুলো কিছুটা প্রাণহীন হলেও সেগুলো খুব ভালো চলে। দ্রুত, নিঃশব্দ এবং খুব সহজে চালানো যায়। কিন্তু ধীরে ধীরে মনে হচ্ছে, আমি প্রতারিত হচ্ছি। যখন আপনি তথ্যগুলো ভালোভাবে জানতে পারবেন তখন বুঝবেন, বৈদ্যুতিক গাড়িকে পরিবেশের প্রতিষেধক হিসেবে যে দাবি করা হয়, তা যথার্থ নয়।

আপনি হয়তো জানেন, ইংল্যান্ড সরকার ২০৩০ সাল থেকে পেট্রোল ও ডিজেলচালিত নতুন যান ক্রয়ে নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব করেছে। সমস্যা হলো, মনে হচ্ছে এই উদ্যোগটি কেবল গাড়ি পরিচালনার একটি বিষয়কে ধরে উপসংহারে পৌঁছার ওপর ভিত্তি করে নেওয়া। গাড়ির পাইপ থেকে যে ধোঁয়া বের হয়, তার ওপর ভিত্তি করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটা সত্য, বৈদ্যুতিক গাড়িতে শূন্য নির্গমন হয়, যা স্বাগত। বিশেষ করে শহরের বায়ুর গুণগত মান উন্নয়নে এটি ভালো। কিন্তু যদি একটু গভীরে যান; গাড়ির উৎপাদন ব্যবস্থাসহ সামগ্রিক চিত্র দেখলে বুঝবেন, বাস্তব পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন। ২০২১ সালে গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত কপ২৬ জলবায়ু সম্মেলনের আগে ভলভো কোম্পানির পরিসংখ্যানে দাবি করা হয়, বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরিতে পেট্রোলচালিত গাড়ির চেয়ে ৭০ শতাংশ বেশি গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হয়। সমস্যাটি বৈদ্যুতিক যানে লাগানো লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি সংক্রান্ত। ওই ব্যাটারিগুলো অযথাই ভারী। সেগুলোতে বিরল অনেক ধাতু দেওয়া হয়, যেগুলো তৈরি করতে প্রচুর পরিমাণে জ্বালানি প্রয়োজন; অথচ স্থায়িত্ব মাত্র ১০ বছর। সে কারণেই জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় অটোমোবাইলের ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক গাড়ি গ্রহণ করা অযৌক্তিক পছন্দ বলে মনে করি।


এ কারণেই এটা বিস্ময়কর নয় যে, আরও ভালো কিছু খোঁজার জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তথাকথিত নতুন সলিড-স্টেট যে ব্যাটারি তৈরি করা হচ্ছে, সেগুলোতে আরও দ্রুত চার্জ হওয়ার ব্যবস্থা থাকবে এবং এদের ওজন কমিয়ে এক-তৃতীয়াংশে নিয়ে আসা হবে। তবে এগুলো যতদিনে বাজারে আসবে ততদিনে বিপুল পরিত্যক্ত ব্যাটারি জমা হবে। হাইড্রোজেন অসাধারণ বিকল্প জ্বালানি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে, যদিও এটি তৈরিতে সত্যিকারের ‘সবুজ’ ব্যবস্থা খুব ধীর। সবুজায়নের কাজটি দু’ভাবে ব্যবহার হতে পারে। এটি হাইড্রোজেন ব্যাটারিকে জ্বালানি দিতে পারে; গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টয়োটা এ জন্য ব্যাপক অর্থ খরচ করেছে। এ ধরনের ব্যাটারির ওজন লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির অর্ধেক এবং গাড়িকে ফিলিং স্টেশনে হাইড্রোজেন দিয়ে পেট্রোলের মতো দ্রুত জ্বালানি ভরা যায়।

বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি যেমন অনুপযুক্ত তেমনি এটি ওজনের কারণে ট্রাকের জন্যও অনুপযুক্ত। এ ধরনের যানবাহনের জন্য হাইড্রোজেন সরাসরি নতুন ধরনের পিস্টন ইঞ্জিনে লাগানো যেতে পারে। জেসিবি কোম্পানি হাইড্রোজেন ইঞ্জিনের ব্যাপারে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করেছে। তারা আগামী কয়েক বছরের মধ্যে সেগুলো উৎপাদনের প্রত্যাশা করছে। যদি এই হাইড্রোজেন ট্রাকের জ্বালানি হিসেবে উপযুক্ত বিবেচিত হয়, তাহলে প্রতিটি ফিলিং স্টেশন এর স্টক তৈরির জন্য হুমড়ি খাবে। এটি গাড়ির জন্য একটি জনপ্রিয় এবং সুবিধাজনক বিকল্প হতে পারে।


তবে আরেকটু গভীরে গিয়ে পুরো অটোমোবাইল বা গাড়ি উৎপাদন সাইকেল নিয়ে চিন্তা করা যেতে পারে। সে জন্য গাড়ির সঙ্গে সমাজের সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে বড় যে সমস্যাটি মোকাবিলা করতে হবে তা হলো ‘চলতি ফ্যাশন’ সংস্কৃতি, যা কয়েক দশক ধরে গাড়ি শিল্পে দেখা যাচ্ছে। বর্তমানে গড়ে আমরা মাত্র তিন বছর পুরোনো গাড়ি ব্যবহার করি। এর পর বিক্রি করে দিই। এর কারণ অবশ্য সর্বব্যাপী তিন বছরের লিজিং মডেল। এটি অযৌক্তিক। আপনি কল্পনা করুন, তিন বছর বয়সী একটি গাড়ি কতটা দুর্দান্ত অবস্থায় রয়েছে। আমি যখন ছোট ছিলাম তখন দেখতাম পাঁচ বছরের গাড়ি মরিচা পড়া। সে অবস্থা আর নেই। আপনি এখন ১৫ হাজার পাউন্ড দিয়ে একটি গাড়ি তৈরি করে যদি যত্ন করে রখেন তবে সেটি ৩০ বছর ধরে চলবে। তবে নতুন গাড়ির প্রথম মালিকরা যদি গাড়িটি তিন বছরের পরিবর্তে গড়ে পাঁচ বছরও ব্যবহার করে, তাহলেও গাড়ির উৎপাদন এবং এর সঙ্গে যুক্ত কার্বন নির্গমন ব্যাপকভাবে কমে যাবে। সামান্য পুরোনো গাড়ি চালিয়েও আমরা একই আনন্দ উপভোগ করব।

আমাদের এটাও ভাবতে হবে যে, বিদ্যমান গাড়িগুলোতে আমাদের বিপুল সম্পদ রয়ে গেছে (বিশ্বব্যাপী প্রায় ১.৫ বিলিয়ন পাউন্ড)। এই গাড়িগুলো উৎপাদনের মাধ্যমে পরিবেশের অনেক ক্ষতি হয়েছে। যদিও গাড়ির ওপর আমাদের নির্ভরতা কমানোই বুদ্ধিমানের কাজ, তারপরও গাড়ি ব্যবহারের ক্ষেত্রে পরিবেশদূষণের প্রভাবক বিষয়গুলো কমিয়ে আনার উপায় সাবধানতার সঙ্গে খোঁজা যেতে পারে। একটা হতে পারে, আমরা ব্যক্তিগত গাড়ি কম ব্যবহার করতে পারি। একবার এক পরিবেশবিদ আমাকে বলেছিলেন, আপনার যদি সত্যিই গাড়ির প্রয়োজন হয়, তবে পুরোনো গাড়ি কিনুন এবং যতটা সম্ভব কম ব্যবহার করুন। ‘সিনথেটিক ফুয়েল’ ব্যবহার করা যেতে পারে, যা ইতোমধ্যে মোটর রেসিংয়ে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ পণ্যটি দুটি সাধারণ ধারণার ওপর ভিত্তি করে তৈরি– এক. পেট্রোল ইঞ্জিনের পরিবেশগত সমস্যা পেট্রোল নিয়ে, ইঞ্জিনগত নয় এবং দুই. তেলের ব্যারেলে এমন কিছু নেই, যা অন্য কোনো উপায়ে প্রতিস্থাপন করা যায় না। ফর্মুলা ওয়ান গাড়িতে ২০২৬ থেকে ‘সিনথেটিক ফুয়েল’ ব্যবহৃত হবে। এই ধারণা নানাভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। তবে জার্মান গাড়ি কোম্পানি পোরশে চিলিতে একটি জ্বালানি তৈরি করছে, যেখানে শক্তির জন্য বায়ু ব্যবহৃত হবে। যার প্রধান উপাদান হলো পানি এবং কার্বন ডাই অক্সাইড। আরেকটা বিষয় হলো, এটি পেট্রোল-ইঞ্জিনচালিত সব গাড়িতে ব্যবহার করা যেতে পারে। তাতে কার্যত কার্বন নিঃসরণ বন্ধ হবে।

আমি ব্যাপকভাবে মনে করছি, বৈদ্যুতিক গাড়ির মধুচন্দ্রিমার সময় শেষ হয়ে আসছে। সেটি বরং ভালো। আমাদের মোটর গাড়ি ব্যবহারের ফলে পরিবেশগত গুরুতর যে সমস্যা তৈরি হয়েছে, তা সঠিকভাবে মোকাবিলা করতে গেলে ভালো বিকল্প বিস্তৃত পরিসরে এবং ব্যাপকভাবে খোঁজা প্রয়োজনীয়– তা আমরা অনুভব করছি ৷ আমাদের উচিত হাইড্রোজেন ও
সিনথেটিক ফুয়েল বা কৃত্রিম জ্বালানিকে বিকল্প জ্বালানি হিসেবে তৈরিতে কাজ চালিয়ে যাওয়া। যাতে পুরোনো গাড়িগুলোকে বাদ দেওয়ার পরিবর্তে নতুন করে ব্যবহার করা যায়। একই সঙ্গে গাড়ি শিল্পের জন্য একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যবসায়িক মডেল তৈরি করা, যেন আমরা দীর্ঘ সময় ধরে একই গাড়ি ব্যবহার করি।

পরিবেশ সচেতন বন্ধুরা আমাকে প্রায়ই জিজ্ঞেস করে, তাদের বৈদ্যুতিক গাড়ি ক্রয় করা উচিত কিনা। আমি বলতে চাই, যদি তাদের গাড়িটি পুরোনো ডিজেলের হয় এবং শহরে তাদের অনেক বেশি ব্যবহার করতে হয় তবে তাদের সেটি পরিবর্তনের কথা বিবেচনা করা উচিত। অন্যথায় তাদের অপেক্ষা করা উচিত। বৈদ্যুতিক গাড়ি সত্যিকারভাবে বিশ্বের পরিবেশের জন্য উপকারী হবে। কিন্তু সেই দিনের ভোর এখনও হয়নি।

রোয়ান অ্যাটকিনসন: অভিনেতা, কমেডিয়ান ও লেখক; গার্ডিয়ান থেকে ভাষান্তর মাহফুজুর রহমান মানিক


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর