প্রকাশিত:
২৯ অক্টোবর ২০২৪, ২৩:১৩
জাল সনদে চাকুরি-এমপিও সহ বহুমাত্রিক অভিযোগ উঠেছে রাজধানীর বেইলি রোডে অবস্থিত দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সিদ্ধেশ্বরী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ইংরেজি ভার্সনের সহকারি প্রধান শিক্ষিকা শামীমা আক্তার শামার বিরুদ্ধে। নির্ভর যোগ্য সূত্রের তথ্য যাচাই করে এবং শামা আক্তারের শিক্ষা সনদের কপি ঘেটে দেখা যায়, শামা আক্তার যে সনদ জমা দিয়ে চাকুরিতে যোগদান করেন এবং পরে যে সনদ দিয়ে এমপিও ভূক্ত হন তার অনার্স মাস্টার্স এবং বিএডের যে সনদ তা জাল করে চাকুরিতে প্রবেশ করেন। স্কুলের শিক্ষক বিবরণী থেকে জানা যায়, শামীমা আক্তার শামা ১৯৯১ সালে এসএসসি তে ২য়, ১৯৯৩ সালে এইচ এসসিতে ২য়, বিএ সম্মান ১৯৯৬ ২য়, এমএ (ইতিহাস) ২য় ১৯৯৭, এমএ ইংরেজি ২০১৩ (৩.৬) বিএড ৩.৬১ ২০০৮ ।
১/০৩ /২০০৪ তারিখে তিনি বর্তমান কর্মস্থলে জয়েন করেন এবং ১/০৩/২০০৭ তারিখে তিনি এমপিও ভুক্ত হন। সূত্র বলছে শামীমা আক্তারের উচ্চ মাধ্যমিক সনদটি রহস্যে ঘেরা। কারণ কুমিল্লা বোর্ডের যে রোল নাম্বারে শামীমা আক্তার চ্ট্রগ্রাম মহিলা কলেজ থেকে পাশ করেছেন বলে দেখিয়েছেন, সূত্র বলছে নির্ধারিত সালে উক্ত রোল নং এ কোন শিক্ষার্থী চট্ট্রগ্রাম মহিলা কলেজ থেকে পাশ করেছেন তার তথ্য নেই। সেই সাথে অনার্স ও মাস্টার্সেও শামীমা আক্তারের মুল সনদ তৃতীয় বিভাগের হলেও তিনি সেই সনদ জাল করে দ্বিতীয় বিভাগ করে তা জমা দিয়েই তিনি চাকুরিতে প্রবেশ করেন। মাস্টার্স পাশের বহু বছর পর তিনি নতুন করে অখ্যাত এক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ জোগাড় করে তার উপর ভিত্তি করে তিনি স্কুলে ইংরেজি ভার্সনের সহকারি প্রধান শিক্ষকের পদ বাগিয়ে নেন। এ ছাড়া বিএডের যে সনদ তিনি জমা দিয়ে স্কেল বাড়িয়েছেন তাও সরকার নিষিদ্ধ তালিকায় থাকা রয়্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ ।
অথচ তিনি বিএড স্কেল পেতে যে আবেদনটি করেছেন সেই আবেদনে তিনি বিএড সনদ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বলে উল্ল্যেখ করেছেন। এর পর ঘুষের বিনিময়ে তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে বিএড স্কেল পাশ করিয়ে আনেন বলে সূত্র দাবি করেছে। সূত্র মতে, নিজের দূর্বলতা ঢেকে স্কুলের সব সুযোগ অতিমাত্রায় আদায় করতে গিয়ে বিগত আওয়ামী সরকারের পুরো সময় জুড়ে তিনি ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে পরিচিতি আওয়ামীলীগ নেতা ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রইসুল ইসলাম ময়নার সকল অন্যায় কাজ ও লুট পাটের প্রকাশ্য দোসর হিসেবে ভূমিকা পালন করেছেন। নানা অজুহাতে স্কুল ফান্ডের বিপুল পরিমাণ অর্থ লুটে চেয়ারম্যানকে সহযোগিতা করে নিজেও নজির বিহীন সুবিধা গ্রহণ করেছেন। স্কুলের নিয়মে প্রাপ্য বেতনের কয়েকগুন বেশী বেতন ভাতা গ্রহণ করেছেন শামীমা আক্তার।
গত ৫ আগষ্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলে একই দিনে আত্ম গোপনে চলে যায় স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রইসুল ইসলাম ময়না। সে সময় স্কুলের ছাত্রীদের পক্ষ থেকে স্কুল ফান্ডের লুটপাট এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের আন্দোলনে বিরোধীতা করার কারণে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও শামীমা আক্তারের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন শুরু করে ছাত্র অভিভাবকরা। সেই সময় ছাত্রীদের সে আন্দোলনে শামার নির্দেশনায় ছাত্রীদের উপর হামলা চালায় ইংরেজি ভার্সনের কয়েকজন অভিভাবক ও বহিরাগত সন্ত্রাসীরা। শামা আক্তারের নিদের্শনায় সে হামলায় আহত হয় ৬ জন আন্দোলনকারি ছাত্রী। তারা আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। এদের একজনকে হত্যারও চেষ্টা করা হয় বলে ঐ আহত ছাত্রীর মা আদালতে অভিযোগ দায়ের করেছে বলে জানা গেছে।
যেখানে স্কুলের প্রধান শিক্ষক শাহাবুদ্দিন মোল্লাকে আসামী করা হলেও সূত্র বলছে স্কুল ফান্ডে ব্যাপক দূর্নীতির দোসর হিসেবে প্রধান শিক্ষকের পাশাপাশি শামাও ফেসে যাওয়ার ভয় থেকে ছাত্রীদের সে আন্দোলনে বহিরাগতদের দিয়ে হামলা করে। সেই ঘটনায় গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসতে শুরু করে শামাও তার পরিবারের আধার ঘেরা সব কাহিনী।
মন্তব্য করুন: