প্রকাশিত:
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:২০
দীর্ঘ সাড়ে তিন মাসেরও বেশি সময় পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান। ১১৫ দিন পর ক্লাসে ফিরতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হয়। উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউট ঘুরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং পড়াশোনার খোঁজখবর নেন।
ক্লাস খোলার প্রতিক্রিয়া জানতে একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয়। তারা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন পর ক্লাসে ফিরতে পেরে তারা স্বস্তিবোধ করছেন।
বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের শিক্ষার্থী আশুরা খান বলেন, দীর্ঘদিন পড়াশোনা থেকে দূরে থেকে এক ধরনের একঘেয়েমি তৈরি হয়েছে। গত কয়েক মাসের ঘটনায় শিক্ষাজীবনে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তা কেটে যাচ্ছে।
বিজয় একাত্তর হলের শিক্ষার্থী আবু বকর সিদ্দিক বলেন, কাল বিকেলে রুটিন দিয়েছে। আজ বাসা থেকে এসে সকাল ৯টার ক্লাস ধরতে হলো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ (স্নাতক প্রথম বর্ষ) বাদে সব বর্ষের ক্লাস রোববার শুরু হয়। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ক্লাস ৩০ সেপ্টেম্বর শুরু হবে।
চলতি বছরের ২ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত গ্রীষ্মকালীন ছুটি ও ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ছুটি দেওয়া হয়। কোনো কোনো বিভাগে এই ছুটির মধ্যে চূড়ান্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১ জুলাই থেকে ক্লাস খোলার কথা থাকলেও প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক কর্মবিরতি ঘোষণা করে। শিক্ষকদের সঙ্গে কর্মবিরতি ঘোষণা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অচল হয়ে পড়ে।
এদিকে জুলাইয়ের শুরু থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। ৭ জুলাই থেকে তারা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস আর শুরু হয়নি। এরমধ্যে কোটা আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে এবং আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
কোটা সংস্কারের দাবি থেকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। এদিকে সরকার প্রত্যয় স্কিম থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করলে ৪ আগস্ট তারা কর্মসূচি তুলে নেন।
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয় এবং প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। সরকার পতনের পর ১০ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল পদত্যাগ করেন।
২৭ আগস্ট উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান। নিয়োগের পর তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের হল, বিভাগ, অফিসপ্রধান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করেন।
এসময় অফিস কার্যক্রম স্বাভাবিক হলেও ক্লাস খোলেনি। পরে ১৩ সেপ্টেম্বর এক জরুরি সিন্ডিকেট সভায় ক্লাস শুরুর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়।
গত ১০ বছরে কখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস এত দিন বন্ধ ছিল না।
মন্তব্য করুন: