প্রকাশিত:
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪:০৮
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি ঘনীভূত হয়ে স্থল গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে রাজধানীতেও।
গত দুদিন ধরে চলা টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে তিলোত্তমা এ নগরীর জনজীবন। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন শ্রমজীবীরা।
নিম্নচাপের প্রভাবে গত শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাত থেকেই রাজধানীতে ঝড়ছে বৃষ্টি। কখনো ঝিরিঝিরি তো কখনো মুষলধারে নামছে বারিধারা। সঙ্গে বইছে ঝোড়ো হাওয়া, যা রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে।
গত দুদিনের এ বৃষ্টিতে অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে রাজধানীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। তীব্র তাপপ্রবাহের পর বৃষ্টি জনজীবনে কিছুটা স্বস্তি নিয়ে এলেও একইসঙ্গে ভোগান্তিতে ফেলেছে চাকরিজীবী ও শ্রমজীবীদের। টানা বৃষ্টির কারণে অনেকে ঘর থেকে বের না হলেও শ্রমজীবীদের পেটের দায়ে রাস্তায় বের হতে হচ্ছে। সামর্থ্যবানরা বৃষ্টি থেকে বাঁচতে ছাতা বা রেইনকোট ব্যবহার করলেও শ্রমজীবীদের বৃষ্টিতে ভিজেই তাদের কাজ করতে হচ্ছে। তবুও হচ্ছে না চাহিদামতো আয়।
রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ও সড়ক ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে তুলনামূলক সড়কে মানুষের চলাচল অনেক কম। জরুরি প্রয়োজন ও কর্মজীবীরা ছাড়া সাধারণ মানুষ ঘর থেকে তেমন বের হচ্ছেন না। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও কম দেখা গেছে। ফলে রিকশাচালক, ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের যাত্রী ও ক্রেতা সংকটে পড়তে হচ্ছে। বৃষ্টিতে ভিজে ঠাণ্ডায় কাঁপলেও উঠছে না পেট চালানোর অর্থ। যারা রাস্তায় ঘুরে ঘুরে চা-সিগারেট বা বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করেন, তাদের থমকে থাকতে হচ্ছে কোনো ছাদের নিচে। শ্রমজীবীদের পাশাপাশি কর্মজীবীদেরও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে রাস্তায় গণপরিবহন কম চলাচল করায় কর্মস্থলে যেতে দীর্ঘ সময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে তাদের। যাত্রী সংকটে ভুগতে হচ্ছে রাইড শেয়ারিং করা মোটরসাইকেল চালকদেরও।
তেমনি একজন সজীব আহমেদ। ধানমন্ডি-২৭ নম্বরে রাফা প্লাজার সামনে মোটরসাইকেল রেখে মার্কেটের সিঁড়িতে কাকভেজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে তাকে। তিনি বলেন, কয়দিন রোদ-গরমের কারণে যাত্রী পাইনি। এখন বৃষ্টির কারণে যাত্রী নেই। কেউই বৃষ্টিতে মোটরসাইকেলে যাচ্ছে না। বৃষ্টিতে ভিজে সকালে বের হয়েও এখনো কোনো যাত্রী পাইনি। রাইড শেয়ারিং করা ছাড়া আর কোনো আয়ের উৎস নেই আমার। তাই বাধ্য হয়েই বের হতে হয়েছে। তাতেও কোনো লাভ হয়নি। আয়-রোজগার পুরোই বন্ধ।
বৃষ্টিতে স্বস্তি প্রকাশ করলেও যাত্রী না পাওয়ার অনুযোগ করেছেন রিকশাচালক মো. হায়দার। সোবহানবাগ মসজিদের সামনে কথা হলে তিনি বলেন, মাঝে কয়দিন গরমে খুব কষ্ট হইছে। এখন বৃষ্টিতে লাগছে ঠাণ্ডা। তাও গরমের থেকে বৃষ্টি ভালো। কিন্তু বৃষ্টিতে তেমন যাত্রী নেই। তাও কোনো অভিযোগ নেই। আল্লাহ যা করেন, ভালোর জন্য করেন।
একই এলাকায় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে বেসরকারি চাকরিজীবী দেবদাস বিশ্বাসকে। তিনি বলেন, রাস্তায় যানবাহন কম। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়েও নির্দিষ্ট গন্তব্যের বাস পাচ্ছি না। অন্য সময় হলে বাইকে চলে যেতাম। বৃষ্টির কারণে সেটি করতে পারছি না। আবার অফিস যেতেও দেরি হয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টিতে গরম কমালেও ভোগান্তি বাড়িয়েছে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি ঘনীভূত হয়ে স্থল গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে যশোর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছিল। এটি বর্তমানে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থান করছে। এটি আরও পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। এতে রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে। পাশাপাশি সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে।
মন্তব্য করুন: