প্রকাশিত:
৪ আগষ্ট ২০২৪, ১৬:২৫
তেহরানে হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়াকে হত্যার পর নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাসহ ২৪ জনের বেশি লোককে গ্রেপ্তার করেছে ইরান। ইরান ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনে এই খবর বলা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের অভিষেকের অনুষ্ঠানে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে, যেটি গুরুত্বর নিরাপত্তার লঙ্ঘন বলে মনে করা হচ্ছে। এর জেরেই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, এটা অভ্যন্তরীণ কাজ হতে পারে।
নিউইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার জন্য জ্যেষ্ঠ গোয়েন্দা কর্মকর্তা, সামরিক কর্মকর্তা এবং গেস্টহাউসের কর্মচারীসহ ২৪ জনের বেশি ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে।
রেভল্যুশনারি গার্ডস কর্পস (আইআরজিসি) বিশেষ গোয়েন্দা ইউনিট এখন তদন্তের নেতৃত্ব দিচ্ছে। দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
ইরানি কর্তৃপক্ষ এখনও এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করার বিষয়টি নিশ্চিত করেনি।
নিউইয়র্ক টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের ইরানের পরিচালক। তিনি বলেন, ‘ইরান তার মাতৃভূমি বা তার প্রধান মিত্রদের রক্ষা করতে পারে না, এমন ধারণা ইরানী শাসনের জন্য মারাত্মক হতে পারে। কারণ এটি তাদের শত্রুদের এই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, যদি ইসলামী প্রজাতন্ত্রকে পতন করতে না পারে তবে তারা এর শিরশ্ছেদ করতে পারবে।’
এই ঘটনাটি ইরান এবং ইসরায়েলের মধ্যে একটি দীর্ঘ গোপন যুদ্ধের পটভূমিতে আবির্ভূত হয়েছে। যার লক্ষ্যবস্তু হত্যা এবং নাশকতা। ইরানী কর্মকর্তারা এবং হামাস ইসরায়েলকে হামলার পরিকল্পনার জন্য অভিযুক্ত করেছে। অন্যদিকে ইসরায়েল এ বিষয়ে নীরবতাই পালন করে আসছে। এর সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত বা অস্বীকারও করেনি।
আইআরজিসি শনিবার বলেছে, ‘তেহরানে আনুমানিক ৭ কিলোগ্রামের ওয়ারহেডসহ স্বল্প-পাল্লার প্রজেক্টাইল দিয়ে হানিয়াহকে হত্যা করা হয়েছে।’ আইআরজিসি আরো জোর দিয়ে বলেছে, ‘এই পদক্ষেপটি ইহুদিবাদীদের পরিকল্পিত এবং বাস্তবায়িত করা হয়েছিল এবং সেখানে আমেরিকা সাহায্য করেছিল।’
ইরানের সংসদের জাতীয় নিরাপত্তা কমিশনের সদস্য আহমাদ বখশায়েশ আরদাস্তানি শনিবার নিশ্চিত করেছেন,ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা ব্যবস্থায় ফাঁক এবং ব্যর্থতা রয়েছে। তিনি হানিয়ার মৃত্যুর বিষয়ে দুটি সম্ভাব্য পরিস্থিতির রূপরেখা দিয়েছেন।
একটি হলো, ইসরায়েলিরা একটি ড্রোন ব্যবহার করে তেহরানের উত্তর পর্বত থেকে অবস্থানটিকে লক্ষ্যবস্তু করেছিল। দ্বিতীয়টি, হত্যায় ড্রোন ব্যবহার করা হয়নি বরং ইরানের মধ্যে বেশ কয়েকটি অনুপ্রবেশকারী অবস্থান করেছিল। তারাই পাহাড়ের কাছে এবং হানিয়ার বাসভবনে হামলার জন্য একটি ক্ষেপণাস্ত্রের মতো অস্ত্র ব্যবহার করেছিল।
পশ্চিমা মিডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হানিয়াকে তার কক্ষে আগে থেকে পেতে রাখা বোমা ডিভাইস দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে এবং তাকে হত্যা করা হয়েছে। সম্ভবত ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ কর্তৃক নিয়োগকৃত এজেন্টদের এই কাজ করেছে।
দ্য টেলিগ্রাফের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডিভাইসগুলো গেস্টহাউসের তিনটি পৃথক কক্ষে স্থাপন করা হয়েছিল এবং তা করা হয়েছিল সতর্কতার সঙ্গে এবং পরিকল্পিতভাবে। গত মে মাসেই ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময় হানিয়াকে হত্যা করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু তখন ভবনের ভিতরে প্রচুর ভিড়ের কারণে অপারেশনটি বাতিল করা হয়েছিল। কারণ এই অভিযান ব্যর্থ হওয়ায় সম্ভবনাই বেশি ছিল।
ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউটের একজন জ্যেষ্ঠ্ বিশ্লেষক এবং পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে ইরানের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ফারজিন নাদিমি বোমা হামলার সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি ইরান ইন্টারন্যাশনালকে বলেছেন, ‘ইসরায়েলের এই ধরনের বোমা হামলা চালানোর ক্ষমতা আছে।
কিন্তু খবরে বলা হয়েছে, ঘটনার দিন রাত পর্যন্ত হানিয়াহ একটি হোটেলে অবস্থান করছিলেন। এটা নির্দিষ্ট ছিল না তিনি কোথায় অবস্থান করবেন। তাই বলা যেতে পারে, কয়েক মাস আগে বোমা পেতে এই বিস্ফোরণ ঘটানো যাবে কিনা?’ নাদিমি আরো বলেছেন, একটি প্রজেক্টাইল দিয়ে হানিয়াহকে লক্ষ্যবস্তু করা সবচেয়ে সহজ ছিল।
ঘটনাটি ইরানের নেতৃত্বকে শুধু বিব্রতই করেনি বরং দেশটির নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতাগুলো প্রকাশ পেয়েছে। আইআরজিসি এখন নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার এবং প্রতিরোধে একটি অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। হানিয়াকে কীভাবে হত্যা করা হয়েছিল তা এখনও পুরোপুরি পরিষ্কার না হলেও, ঘটনাটি আইআরজিসির জন্য একটি প্রচণ্ড বিব্রতকর অবস্থা তৈরি করেছে।
মন্তব্য করুন: