শনিবার, ২৩শে নভেম্বর ২০২৪, ৮ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল daajkaal@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি কেলি রদ্রিগেজ
  • প্রথমবার সচিবালয়ে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা
  • এস আলমের ঋণ জালিয়াতি, কেন্দ্রিয় ব্যাংকের ১৩ জনকে তলব
  • সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা
  • ড. ইউনূসের ভিশনের দিকে তাকিয়ে যুক্তরাজ্য: ক্যাথরিন ওয়েস্ট
  • ২০২৫ সালে সরকারি নির্মাণে পোড়া ইট ব্যবহার বন্ধ হবে
  • নাম ও পোশাক বদলাচ্ছে র‌্যাব
  • গণহত্যা মামলায় ৮ পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেফতারের নির্দেশ
  • আজারবাইজানের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন প্রধান উপদেষ্টা
  • পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে সিঙ্গাপুরের সহায়তা চান প্রধান উপদেষ্টা

মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক শক্তির চ্যালেঞ্জ

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত:
২৪ জুলাই ২০২৪, ১৮:৪৯

মে মাসে মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের বুথিডং শহরের নিয়ন্ত্রণ নেয় বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। অভিযোগ রয়েছে, সেখানে তারা রোহিঙ্গা মুসলিম সংখ্যালঘুদের শত শত ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইনের সব মানুষের রাজনৈতিক অধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতির কথা বলেছে আরাকান আর্মি। তবে রাখাইনের অধিকাংশ অধিবাসীই বৌদ্ধ। তারা এর আগে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে জাতিগত সহিংসতায় লিপ্ত হয়। সাত বছর আগে রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নৃশংস হামলায় যেভাবে তারা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়, বৌদ্ধদের সঙ্গে সংঘাত তার চাইতে কম নয়।

মিয়ানমারের জাতিগত সংখ্যালঘু এবং গণতন্ত্রপন্থিরা দীর্ঘদিন ধরে দেশটির জান্তাকে নিপীড়ক হিসেবে দেখে আসছে। তারা ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অং সান সু চির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা গ্রহণ করে। এর পর থেকে মিয়ানমারের অনেকেই আরাকান আর্মির মতো সশস্ত্র সংগঠনগুলোতে ভরসা রাখে। আরাকান আর্মি দীর্ঘদিন ধরে সীমান্তে রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসনের জন্য লড়াই করেছে। তারা রাখাইন রাজ্যে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এক ধরনের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে নতুন যুগের সূচনা করার জন্য বিভিন্ন গোষ্ঠীর দিকেও নজর দিয়েছে, ২০১১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সেটি তারা পারেনি।

একই সঙ্গে থাই সীমান্তবর্তী মিয়ানমারেও জাতিগত সশস্ত্র কিছু গোষ্ঠী দেশটির দক্ষিণ-পূর্বের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে একই ধরনের ফেডারেল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে মনে হচ্ছে। মিয়ানমারের সেনা অভ্যুত্থানে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ায় জান্তাবিরোধী তরুণরা দেশটির জাতিগত সশস্ত্র সংগঠন থেকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। তার পর থেকেই সামরিক বাহিনী অনেক এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারায়। বিশেষ করে গত বছরের অক্টোবর থেকেই জাতিগত সশস্ত্র বাহিনীগুলোই বৃহত্তর গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনের নায়কে পরিণত হয়।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতির কারণে ২০১০ সালের একটি আইনকে সামনে নিয়ে এসেছে। যেখানে বলা হয়েছে, সশস্ত্র বাহিনী চাইলে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী পুরুষ বা ১৮ থেকে ২৭ বছর বয়সী নারীকে দুই থেকে পাঁচ বছরের জন্য সেনাবাহিনীতে কাজ করার জন্য আহ্বান জানাতে পারবে। মিয়ানমার সরকার বলছে, তারা ইতোমধ্যে ৫০ থেকে ৬০ হাজার নতুন সৈন্য নিয়োগের খসড়া সম্পন্ন করেছে। এই পদক্ষেপই রাখাইনের সর্বশেষ অস্থিতিশীলতায় ভূমিকা রেখেছে। সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গাদের সেনাবাহিনীতে নিয়োগের জন্য একদিকে শক্তি প্রয়োগ করে এবং অন্যদিকে দেয় প্রণোদনা। অর্থাৎ রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেয়। সামরিক জান্তার খসড়ায় রোহিঙ্গাদের আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে প্রথম সারিতে রাখে।

এপ্রিলের মাঝামাঝি বুথিডং শহরে বৌদ্ধ ও হিন্দুদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ করা হয় রোহিঙ্গা ও জঙ্গিদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ আছে, আরাকান আর্মিও পাল্টা জবাব দিয়েছে। তবে দ্য নিউ হিউম্যানিটারিয়ান সংবদ মাধ্যমের কাছে আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে। তারা বলেছে, সামরিক বিমান হামলা এবং রোহিঙ্গা জঙ্গিদের কারণে এমনটি হয়েছে।

তবে অস্ট্রেলিয়ান স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইনস্টিটিউট বলেছে, বিমান হামলা বা গোলাগুলি হলে অন্যরকম ঘটত। তা ছাড়া আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণাধীন শহরের অন্যান্য অংশে একই সময়ে অন্যান্য রোহিঙ্গা গ্রামে আগুন দেওয়া হয়। জাতিসংঘের বক্তব্য হলো, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার দু’দিন আগে মিয়ানমার সেনাবাহিনী বুথিডং ছেড়ে চলে যায়। জাতিসংঘ আরও বলেছে, তারা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে আরাকান আর্মির অপরাধ নথিভুক্ত করেছে, সেখানে চারটি শিরশ্ছেদের ঘটনা নিশ্চিত করা গেছে।

আরাকান আর্মি স্পষ্টভাবে বলেছে, তারা ‘কনফেডারেসি’র অংশ হতে চায়, যা সাধারণত ফেডারেলিজমের চেয়ে বেশি স্বায়ত্তশাসনকে বোঝায়। কিছু অন্য প্রধান জাতিগত সশস্ত্র সংগঠনের কর্মকাণ্ড ভিন্ন গল্প বলছে। উত্তরের শান রাজ্যের মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ) আরাকান আর্মির ঘনিষ্ঠ মিত্র। এমএনডিএএ সদ্য বিজিত অঞ্চলে নিজস্ব বল প্রয়োগের নিয়োগ নীতি চালু করেছে। তারা কোকাং জাতিগত গোষ্ঠীর বাইরে থেকেও সেনা নিয়োগ করেছে, যারা পালানোর চেষ্টা করে তাদের মৃত্যুদণ্ড দিচ্ছে।

মিয়ানমারের জাতীয় ঐক্য সরকার তথা এনইউজি এখন জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে মিলিত আন্দোলন করছে। এনইউজিতে প্রশাসক হিসেবে বিশেষত তারাই আছেন, যারা সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত মিয়ানমারের নির্বাচিত আইনপ্রণেতা। মিয়ানমারের সমান্তরাল এই প্রশাসন সবাইকে একত্রিত করছে। গণতন্ত্রের ন্যূনতম চর্চা নেই, এমন সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর অনেকেই এখন ব্যাপক শক্তিশালী। অভিন্ন শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের স্বার্থে এনইউজে সেগুলোর সঙ্গে তার মতাদর্শগত পার্থক্য ভুলে থাকতে পারে। এনইউজের চূড়ান্ত লক্ষ্য, সেনাশাসনের অবসান ঘটিয়ে মিয়ানমারের ক্ষমতায় ফিরে আসা। কিন্তু যখন এই জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো গণতন্ত্রপন্থিদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, তখন সংকট তৈরির শঙ্কা রয়েছে। সেজন্য এনইউজির চ্যালেঞ্জ হবে এই সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখা। ব্যক্তির অপরাধে যেন সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। পশ্চিমা কূটনীতিক, যারা মিয়ানমারে গণতন্ত্র দেখতে চান, তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হবে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সঠিক পথে নিয়ে যাওয়া।

অ্যান্ড্রু নাচেমসন: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় রাজনীতি, মানবাধিকার ও চীনা উন্নয়নবিষয়ক সাংবাদিক; ফরেন পলিসি থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর মাহফুজুর রহমান মানিক


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর