শনিবার, ২৩শে নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল daajkaal@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি কেলি রদ্রিগেজ
  • প্রথমবার সচিবালয়ে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা
  • এস আলমের ঋণ জালিয়াতি, কেন্দ্রিয় ব্যাংকের ১৩ জনকে তলব
  • সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা
  • ড. ইউনূসের ভিশনের দিকে তাকিয়ে যুক্তরাজ্য: ক্যাথরিন ওয়েস্ট
  • ২০২৫ সালে সরকারি নির্মাণে পোড়া ইট ব্যবহার বন্ধ হবে
  • নাম ও পোশাক বদলাচ্ছে র‌্যাব
  • গণহত্যা মামলায় ৮ পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেফতারের নির্দেশ
  • আজারবাইজানের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন প্রধান উপদেষ্টা
  • পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে সিঙ্গাপুরের সহায়তা চান প্রধান উপদেষ্টা

ফয়সালের স্বজনদের ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা, খুলেছেন ৭০০ অ্যাকাউন্ট

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত:
৭ জুলাই ২০২৪, ১৪:১৩

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক প্রথম সচিব কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালসহ তার স্বজনদের নামে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হিসাবে প্রায় ৫০ কোটি টাকা জমা রয়েছে। এসব স্বজনদের মধ্যে তার স্ত্রী, শ্বশুর-শাশুড়ি ও শ্যালক ছাড়াও রয়েছেন তার মা, ভাই, বোন ও ভগ্নিপতি। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) জানিয়েছে, অপরাধলব্ধ আয় লুকানোর জন্য স্বজনদের নামে ৭০০টির মতো ব্যাংক হিসাব খুলেছিলেন ফয়সাল।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ২০১৬ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ওই টাকা জমা (সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগসহ) হয়েছিল। এর বাইরে ফয়সাল, তার মা, বোন, স্ত্রী, শ্বশুর-শাশুড়ি ও ভগ্নিপতি আবদুল্লাহর নামে ২১ কোটি টাকা মূল্যের (দলিল মূল্য) ফ্ল্যাট, প্লট ও জমি কেনা হয়। যদিও তাদের কেউ বড় কোনো ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত নন। এমনকি সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চ কোনো পদেও তারা চাকরি করেন না।

ফয়সালের মা, বোন, স্ত্রী, শাশুড়ি, খালাশাশুড়ি গৃহিণী। স্বজনদের মধ্যে শুধু ফয়সালের ভগ্নিপতি সৈয়দ আবদুল্লাহ পুলিশের পরিদর্শক। তিনি এখন ফেনী জেলা পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত। এর আগে তিনি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছিলেন। আর ফয়সালের ভাই পেশায় আইনজীবী।

রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের বিপুল সম্পদ থাকার বিষয়টি বেরিয়ে আসে মূলত তার ভগ্নিপতি আবদুল্লাহর সম্পদের খোঁজ করতে গিয়ে।

দুদকের একজন কর্মকর্তা জানান, আবদুল্লাহ যখন পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থানার ওসির দায়িত্বে ছিলেন, তখন তার অস্বাভাবিক সম্পদ অর্জনের বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়। এরপর দুদকের পিরোজপুরের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের তিনজন কর্মকর্তার নেতৃত্বে অনুসন্ধান কমিটি (গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে) গঠন করা হয়।

সৈয়দ আবদুল্লাহ ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ থেকে ২০২০ সালের ২৪ মার্চ পর্যন্ত মঠবাড়িয়া থানার ওসির দায়িত্বে ছিলেন।

দুদকের ওই কর্মকর্তা বলেন, সেই কমিটির অনুসন্ধানে আবদুল্লাহর বিপুল সম্পদ থাকার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া যায়। এরপর গত বছরের মে মাসে আবদুল্লাহর স্ত্রী ফারহানা আক্তারের (ফয়সালের বোন) নামে ঢাকায় দুটি ফ্ল্যাট ও একটি কমার্শিয়াল স্পেস (বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের জন্য), শাশুড়ি কারিমা খাতুনের (ফয়সালের মা) নামে গুলশানে একটি ফ্ল্যাট থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হয় দুদক। এর বাইরে ফয়সালের বোনের ব্যাংক হিসাবে কয়েক কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়। এরপর ফয়সালের বোন, মা, ভগ্নিপতির নামে থাকা সম্পদ ক্রোক (জব্দ) করতে আদালতে আবেদন করে দুদক। এর ভিত্তিতে আদালত গত বছরের ২৮ মে তাদের নামে থাকা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি জব্দ করার আদেশ দেন। এই সম্পত্তির মূল্য ১৮ কোটি টাকা।

মা, বোন ও ভগ্নিপতি— এই তিনজনের সম্পত্তি জব্দ হওয়ার ১১ মাস পর ফয়সালসহ আরও ১১ জনের সম্পত্তির তালিকা আদালতের কাছে তুলে ধরে দুদক। এর ভিত্তিতে গত ২৭ জুন ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আস্সামছ জগলুল হোসেন ফয়সালের সম্পত্তি জব্দের আদেশ দেন। আদালত যখন এই আদেশ দেন, তখন ফয়সাল ছিলেন এনবিআরের ঢাকা কার্যালয়ের প্রথম সচিব (কর)। পরে তাকে এনবিআর থেকে ‘অবমুক্ত’ করে বগুড়া কর অঞ্চলের পরিদর্শী রেঞ্জ-১-এ বদলি করা হয়।

ফয়সালের বিষয়ে আদালতে দেওয়া প্রতিবেদনে দুদক বলেছে, ক্ষমতার অপব্যবহার ও ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি বিপুল সম্পদ অর্জন করেছেন। আরও বলেছে, আয়কর কর্মকর্তাদের অর্থের বিনিময়ে বদলি এবং আয়করদাতাদের ভয় দেখিয়ে অর্থ নেওয়াসহ দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন।

দুদক আদালতে জানিয়েছে, ফয়সাল তার অপরাধলব্ধ আয় লুকানোর জন্য স্বজনদের নামে ৭০০টির মতো ব্যাংক হিসাব খুলেছিলেন। এর মধ্যে দুদক ৮৭টি ব্যাংক হিসাবে লেনদেনের সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়েছে।

ফয়সালের ভগ্নিপতি সৈয়দ আবদুল্লাহর বিষয়েও আদালতে দেওয়া পৃথক প্রতিবেদনে একই ধরনের কথা বলেছে দুদক। আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ক্ষমতার অপব্যবহার, মাদক ও চোরাকারবারিদের সঙ্গে সখ্যসহ দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি বিপুল সম্পদের মালিক হন।

দুদক লিখিতভাবে আদালতকে জানিয়েছে, আবু মাহমুদ ফয়সাল সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঘুষ লেনদেন করেছেন।

দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত আয়ের উৎস গোপনের জন্য নিজের নামসহ তার আত্মীয়স্বজনের নামে ৭০০টির বেশি হিসাব খোলেন। উদ্দেশ্য হচ্ছে, অপরাধলব্ধ আয়ের উৎস গোপন করা। দুদকের পক্ষ থেকে আবু মাহমুদ ফয়সালের সম্পদের বিস্তারিত বিবরণ আদালতের কাছে তুলে ধরা হয়েছে।

দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, পুলিশ কর্মকর্তা আবদুল্লাহর সম্পদের সিংহভাগ রয়েছে স্ত্রী ফারহানা (ফয়সালের বোন) ও শাশুড়ি কারিমার (ফয়সালের মা) নামে। ফারহানা ও কারিমা দুজনই গৃহিণী।

সম্পদ জব্দের বিষয়ে আদালতের আদেশ অনুযায়ী, ফারহানার নামে ১ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র রয়েছে। এ ছাড়া তার নামে ৯টি ব্যাংক হিসাব আছে। এর মধ্যে ৬টি ব্যাংক হিসাব খোলা হয় ২০২১ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে। ২০২১ সালে খোলা একটি হিসাবে জমা রাখা হয় ১ কোটি টাকা। তাঁর ৯টি ব্যাংক হিসাবে মোট ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা জমা হয়েছিল। এর বাইরে ফারহানার নামে কাকরাইলের একটি বাণিজ্যিক ভবনে ২৩৮৬ বর্গফুট কমার্শিয়াল স্পেস রয়েছে। যার দাম ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এ ছাড়া মগবাজারে তাঁর নামে ২ কোটি টাকা মূল্যের ফ্ল্যাট ও খিলগাঁওয়ে ৪০ লাখ টাকা মূল্যের ফ্ল্যাট রয়েছে। আর গুলশানে ফয়সালের মা কারিমা খাতুনের নামে ৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা মূল্যের ফ্ল্যাট রয়েছে।

এর বাইরে ফয়সালের ভগ্নিপতি আবদুল্লাহর নামে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আনন্দ পুলিশ হাউজিং লিমিটেডে ১২ কাঠার প্লট রয়েছে।

দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফয়সাল তার সম্পদ করেছেন স্ত্রী আফছানা নাজনীন, শ্বশুর আহম্মেদ আলী ও শাশুড়ি মমতাজ বেগমের নামে। নিজের নামে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে প্লট ও জমি কিনেছেন ফয়সাল। এ ছাড়া তার নামে ছয়টি ব্যাংক হিসাব আছে। এসব হিসাবে ২০১৬ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে জমা হয়েছিল ৫ কোটি ২১ লাখ টাকা।

দুদক আদালতে দেওয়া আবেদনে বলেছে, ফয়সালের স্ত্রীর নামে ৫০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র রয়েছে। এর বাইরে তার নামে পাঁচটি ব্যাংক হিসাব পাওয়া গেছে। ২০১৬ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে খোলা হিসাবগুলোয় জমা হওয়া অর্থের পরিমাণ ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এর বাইরে ২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে তার নামে ঢাকা ও রূপগঞ্জে মোট ১০ কাঠার প্লট কেনা হয়।

অন্যদিকে ফয়সালের শাশুড়ি মমতাজ বেগমের নামে ২০২২ সালে ঢাকায় ১০ কাঠার প্লট কেনা হয়। দলিলমূল্যে এর দাম ৫২ লাখ টাকা দেখানো হলেও দুদক এ বিষয়ে আদালতকে জানিয়েছে, ওই প্লটের দাম সাড়ে ৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া ২০১৬ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে তাঁর নামে খোলা আটটি ব্যাংক হিসাবে ৬ কোটি টাকার বেশি অর্থ জমা হয়।

দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ফয়সালের শ্বশুর আহম্মেদ আলীর (অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা) নামে গত বছর এক কোটি টাকা দিয়ে ঢাকায় ফ্ল্যাট কেনা হয়। এ ছাড়া তার নামে ২০২০ ও ২০২১ সালে ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কেনা হয়। এ ছাড়া তার নামে থাকা আটটি ব্যাংক হিসাবে ১১ কোটি টাকা জমা হওয়ার তথ্য পেয়েছে দুদক। ফয়সালের শ্যালক আফতাব আলীর নামে ২০২০ ও ২০২১ সালে ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কেনা হয়। এ ছাড়া তার নামে ২০১৬ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে পাঁচটি ব্যাংক হিসাব খোলা হয়। এতে জমা হওয়া অর্থের পরিমাণ ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফয়সালের ভাই কাজী খালিদ হাসানের (আইনজীবী) নামে ২০২১ সালে ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কেনা হয়। এ ছাড়া ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে তাঁর ছয়টি ব্যাংক হিসাবে ২ কোটি ১২ লাখ টাকার অর্থ জমা হয়। ২০২১ ও ২০২২ সালের মধ্যে ফয়সালের মামাশ্বশুর শেখ নাসির উদ্দিনের দুটি ব্যাংক হিসাবে জমা হয় ১ কোটি ৭১ লাখ টাকা। অন্যদিকে ফয়সালের খালাশাশুড়ি মাহমুদা হাসানের নামে ২০২১ সালের একটি ব্যাংক হিসাবে জমা হয় ৩ কোটি ৭৬ হাজার টাকা। এ ছাড়া খালাশাশুড়ি মাহমুদার মেয়ে ফারহানা আফরোজের চারটি ব্যাংক হিসাবে (২০২০-২৩ সালের মধ্যে খোলা) ১ কোটি ২১ হাজার টাকা জমা হয়।

আদালতে দেওয়া দুদকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালে ফয়সালের পূর্বপরিচিত খন্দকার হাফিজুর রহমানের (মৌসুমি ধান ব্যবসায়ী) নামে ৪০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কেনা হয়। এর বাইরে ২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে তাঁর নামে খোলা পাঁচটি ব্যাংক হিসাবে জমা হওয়া অর্থের পরিমাণ ১৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা।

আদালতে দেওয়া দুদকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফয়সালের এক স্বজন রওশন আরা খাতুনের নামে থাকা দুটি ব্যাংক হিসাবে ৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা জমা হয়। এই দুটি ব্যাংক হিসাব খোলা হয় ২০১৯ ও ২০২০ সালে।

খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী মাহফুজুর রহমান লিটন জানান, তাদের সম্পদশালী হিসেবেই এলাকার মানুষ জানে। কাজী ফয়সাল এলাকায় কম আসতেন। তবে তার স্ত্রী আফসানা জেসমিন কয়েক দফা তার কাছে সনদ দিতে এসেছেন। এছাড়া প্রায় তিনি টয়েটা ‘হ্যারিয়ার’ গাড়িতে ঘোরাফেরা করতেন।

গত বৃহস্পতিবার কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ জব্দের নির্দেশ দেন আদালত।

দুদকের সরকারি কৌঁসুলি মোশারফ হোসেন কাজল বলেন, এনবিআরের প্রথম সচিব কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক বনে গেছেন। এ বিষয়ে দুদকের অনুসন্ধান চলমান রয়েছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, সরকারের উচিত সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব নেওয়া। যাদের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ থাকবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর