প্রকাশিত:
২৫ জুন ২০২৪, ১৫:২৩
ছাগলকাণ্ডে আলোচনায় আসার পর থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মতিউর রহমানের হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। তার বিভিন্ন বাসভবনে খোঁজ নিয়েও সন্ধান মেলেনি। এমনকি কোরবানির ঈদের ছুটির পর অফিস খুললেও তিনি আর অফিসে আসেননি। এই সময়ে প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তিনি দেশ ছেড়েছেন বলে খবর পাওয়া যায়।
এদিকে মতিউর রহমান একের পর এক পদ হারাচ্ছেন। সূত্র বলছে, এরই মধ্যে তিনি দেশ ছেড়েছেন। তবে এনবিআরের সদস্য পদ থেকে ওএসডি হওয়ার পর নির্দেশনা অনুযায়ী অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে যোগদান করার কথা ছিল। চেয়ার-টেবিলবিহীন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে ‘গায়েবীভাবে’ যোগদান করেছেন মতিউর রহমান।
অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এনবিআরের পদ থেকে মতিউর রহমানকে সরিয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্তি করার পরই তিনি অন্য লোকের মাধ্যমে গায়েবীভাবে মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেছেন। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে মতিউরের জন্য আলাদা কোনো কক্ষ নেই। এমনকি তার বসার জন্য কোনো চেয়ার-টেবিলও নেই। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করার পর তিনি মন্ত্রণালয়েও আসেননি।
অন্য ব্যক্তির মাধ্যমে তিনি যোগদানপত্র পাঠিয়ে যোগ দিয়েছেন। সংস্থাপন বা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের জন্য ওএসডি করার বিধান আছে। এর বাইরে অন্য বিভাগ, সংস্থা বা মন্ত্রণালয়ের জন্য ওএসডির বদলে সংযুক্ত করার পদ্ধতি চালু আছে। মতিউর রহমানের ক্ষেত্রে সেটিই করা হয়েছে।
এনবিআরের এক কর্মকর্তা বলেন, মতিউর রহমান পদোন্নতি পেয়ে এনবিআরের সদস্য (কাস্টমস ও ভ্যাট) হয়েছেন।
তিনি এখনো ওই পদেই আছেন। তবে তাকে যেহেতু অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে, সুতরাং তিনি এনবিআরের কোনো কার্যক্রম করতে পারবেন না। তার কর্মক্ষেত্র হবে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে তার জন্য আলাদা কোনো কক্ষ বা চেয়ার-টেবিল থাকার কথা নয়। আমরা শুনেছি, মতিউর রহমান দেশে নেই। তিনি দেশের বাইরে চলে গেছেন। এ কারণেই হয়তো তিনি অন্যের মাধ্যমে যোগদানপত্র পাঠিয়ে যোগদান দেখিয়েছেন।
এদিকে মতিউর রহমানকে সোনালী ব্যাংকের পরিচালক পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন পরিচালক হিসেবে অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আবু ইউসুফকে তিন বছরের জন্য ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এক চিঠিতে নতুন পরিচালক নিয়োগের এ আদেশ দিয়েছে।
মতিউর রহমান এনবিআরের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। রবিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এনবিআর সদস্য এবং কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট মতিউর রহমানকে বর্তমান কর্মস্থল থেকে সরিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করা হলো। তবে কেন এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, প্রজ্ঞাপনে তা উল্লেখ করা হয়নি। বলা হয়েছে, জনস্বার্থে জারি করা এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।
পৃথক প্রজ্ঞাপনে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ জানায়, কাস্টমস, এক্সসাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের সদস্য সুরেশ চন্দ্র বিশ্বাসকে ট্রাইব্যুনালের সভাপতি পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
ঈদুল আজহায় রাজধানীর মোহাম্মদপুরের 'সাদিক অ্যাগ্রো' থেকে মতিউরের ছেলে মুশফিকুর রহমান ওরফে ইফাত ১৫ লাখ টাকায় একটি ছাগল কেনা ছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন খামার থেকে ৭০ লাখ টাকার গরু কিনেছেন বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। এর পর থেকে মতিউর রহমানের ছেলের দামি ব্র্যান্ডের ঘড়ি, গাড়ি, আলিশান জীবনযাপন এবং মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে রিসোর্ট, শুটিং স্পট, বাংলোবাড়ি, জমিসহ নামে-বেনামে সম্পত্তি থাকা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।
মতিউরের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তার অবৈধ সম্পদের অভিযোগ তদন্ত করতে গতকাল দুদকের উপপরিচালক আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন হয়েছে।
মন্তব্য করুন: