প্রকাশিত:
২৫ জুন ২০২৪, ১৩:৫৮
বাংলাদেশে গত মাস কয়েক ধরেই রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। গত কিছুদিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে রাসেলস ভাইপার সাপ মনে করে আতঙ্কে সব ধরনের সাপ পিটিয়ে মারা হচ্ছে।
এই সাপের হঠাৎ প্রাদুর্ভাবে ছড়ানো হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের গুজবও।
তবে বন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশে ৮৫ ভাগের বেশি সাপেরই বিষ নেই। এমনকি রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপ বিষধর সাপের তালিকায় নয় নম্বরে রয়েছে। আর এখন আতঙ্কিত হয়ে মানুষ যেসব সাপগুলো মারছে তার বেশিরভাগই নির্বিষ ও পরিবেশের জন্য উপকারী।
প্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাপ জীববৈচিত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্যই অন্যান্য প্রাণীর মতই সাপও গুরুত্বপূর্ণ।
বন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, রাসেলস ভাইপার সাপের আতঙ্কে যেগুলো মারা হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে শঙ্খিনী, অজগর, ঘরগিন্নি , দারাজ, ঢোঁড়াসাপ, গুইসাপসহ বিভিন্ন প্রজাতির সাপ রয়েছে। এরাই রাসেলস ভাইপার সাপ খেয়ে পরিবেশের ভারসাম্য আনে। অথচ এই উপকারী সাপগুলো মেরে ফেলা হচ্ছে।
তারা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাসেলস ভাইপার সাপ নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা চালানোয় মানুষ আতঙ্কিত হয়ে না জেনেই মেরে ফেলছে প্রকৃতির বন্ধু নির্বিষ বিভিন্ন ধরনের সাপ ও সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী। যে কোন সাপ দেখলেই মারা হচ্ছে।
হঠাৎ প্রাদুর্ভাব রাসেলস ভাইপার সাপের
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেসব বিষয় নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা চলছে তার মধ্যে অন্যতম রাসেলস ভাইপার সাপ।
বাংলাদেশে রাসেলস ভাইপার সাপ চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া সাপ নামে পরিচিত।
একসময় এই সাপটি বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু ১০ - ১২ বছর আগে আবারো এই সাপের কামড়ে মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটে। অর্থাৎ ২০১৩ সাল থেকে এই সাপটি বেশি দেখা যায় বলে জানান সাপ গবেষকরা।
২০২১ সালে আবার দেশের উত্তর- পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি এলাকায় বিশেষ করে পদ্মা তীরবর্তী কয়েকটি জেলা ও চরাঞ্চলে চন্দ্রবোড়া বা রাসেলস ভাইপার সাপের কামড়ে দুইজন নিহত ও কয়েকজন আহত হওয়ার ঘটনা সে সময় বেশ আলোড়ন তুলেছিল।
এ বছর আবার মানিকগঞ্জে এই সাপের কামড়ে গত তিন মাসে পাঁচজন মারা গেছে বলে জানিয়েছেন সরকারি কর্মকর্তারা। যারা মারা গেছেন তাদের বেশিরভাগই কৃষক বলে জানিয়েছেন তারা। কারণ এখন ধান কাটার মৌসুম চলছে। ফলে ফসলের ক্ষেতে স্বাভাবিকভাবেই সাপের উপদ্রব হয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ আহসান বলেন, "পদ্মার অববাহিকা ধরেই মানিকগঞ্জের চরাঞ্চলে গেছে রাসেলস ভাইপার সাপ"।
এদিকে, রাজশাহীতে এই সপ্তাহেই সাপের কামড়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ধান কাটার এই মৌসুমে পদ্মা তীরবর্তী এলাকায় সবচেয়ে বেশি আতঙ্কে রয়েছে কৃষকরা।
রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার সারদায় পদ্মার পাড়ে অবস্থিত পুলিশ একাডেমি চত্বর থেকে রোববার (২৪ জুন) আটটি রাসেলস ভাইপার সাপের বাচ্চা উদ্ধার করা হয়েছে। তবে পুলিশ সদস্যরা পিটিয়ে সাপের বাচ্চাগুলো মেরে ফেলেছে বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে গণমাধ্যমে।
এমনকি ফরিদপুরের স্থানীয় একজন রাজনীতিবিদ প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছিলেন যে রাসেলস ভাইপার সাপ মারতে পারলে প্রতিটির জন্য ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেয়া হবে। যদিও রোববার (২৪ জুন) সেই ঘোষণা প্রত্যাহার করেছেন ওই রাজনীতিবিদ।
বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, ''রাসেলস ভাইপার আগ্রাসী সাপ নয়। তাকে আঘাত করলেই কেবল সে তেড়ে আসে। সাপ মারার কোন দরকার নেই। সতর্ক হতে হবে। আমরা সচেতনতা তৈরির জন্য কাজ করছি''।
বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, মেডিকেল সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী বছরে সাপের কামড়ে প্রায় সাড়ে সাত হাজার মানুষ মারা যায়। এর মধ্যে একশ বিশ জন রাসেলস ভাইপারের কামড়ে মারা যায়।
''ফসলি ক্ষেতে প্রচুর পরিমাণ সাপ থাকে। তাই সাপ না মারার জন্য এবং কৃষকদের যাতে সচেতন করে তোলা হয় সেজন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন এবং স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছে। কারণ সচেতনতা বাড়লে ও সোশাল মিডিয়ায় নেতিবাচক প্রচার কমলে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এটা কমে আসবে,'' বলেন মি. হোসাইন।
মন্তব্য করুন: