প্রকাশিত:
১২ জুন ২০২৪, ১১:৪৬
হামাস বা ইসরায়েল একটি চুক্তি করতে এখনো প্রকাশ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ না হওয়ায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েই গেছে।
হামাস বুধবার (১২ জুন) বলেছে, গাজায় যুদ্ধবিরতির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনায় ‘ইতিবাচক’ সাড়া দিয়ে তারা একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর বিষয়ে ‘বিস্তৃত সম্ভাবনা’ তৈরি করেছে।
কিন্তু ফিলিস্তিনি এই স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীটি বা ইসরায়েল একটি চুক্তি করতে প্রকাশ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ না হওয়ায় অনিশ্চয়তা রয়েই গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ৩১ মে গাজা যুদ্ধবিরতির বিষয়ে যে রূপরেখা প্রস্তাব করেছেন মঙ্গলবার তাতে আনুষ্ঠানিক সম্মতি দিয়েছে হামাস। কিন্তু ইসরায়েল বলছে, হামাসের এই সম্মতি প্রত্যাখ্যানের সমতুল্য যখন হামাসের একজন কর্মকর্তা বলেছেন যে তারা কেবল তাদের দীর্ঘদিনের দাবিগুলো পুনর্ব্যক্ত করেছেন, প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনায় তা পূরণ হয়নি।
মিশর ও কাতার জানিয়েছে, তারা হামাসের আনুষ্ঠানিক সম্মতিপত্র গ্রহণ করেছে কিন্তু তাতে কী আছে তা প্রকাশ করেনি।
বুধবারের শুরুতে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য ইজ্জত আল-রিশক এক বিবৃতিতে বলেছেন, যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের বিষয়ে তাদের জবাব ‘দায়িত্বপূর্ণ, ঐকান্তিক ও ইতিবাচক’ এবং তা একটি চুক্তির বিষয়ে ‘একটি প্রশস্ত পথ খুলে দিয়েছে’।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন হামাস কমকর্তা মঙ্গলবার (১১ জুন) রয়টার্সকে বলেছেন, একটি যুদ্ধবিরতি অবশ্যই গাজায় শত্রুতার স্থায়ী অবসান, ইসরায়েলি বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার, গাজার পুনর্গঠন এবং ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তি নিশ্চিত করবে- সম্মতিপত্রে নিজেদের এ অবস্থানই পুনর্ব্যক্ত করেছেন তারা।
“আমাদের আগের অবস্থানই পুনর্ব্যক্ত করেছি আমরা। আমার বিশ্বাস সেখানে বড় কোনো ফাঁক নেই। বল এখন ইসরায়েলের উঠানে,” বলেছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ইসরায়েল তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করেছে, কিন্তু ইসরায়েল প্রকাশ্যে একথা জানায়নি।
ইসরায়েল গাজার মধ্যাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলে হামলা অব্যাহত রেখেছে, আট মাস ধরে চলা গাজা যুদ্ধের সবচেয়ে প্রাণঘাতী কয়েকটি দিনও এরমধ্যে ছিল। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বারবার বলে যাচ্ছেন, হামাসকে পুরোপুরি নির্মূল না করা পর্যন্ত গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধ করার কোনো প্রতিশ্রুতি দেবে না ইসরায়েল।
ইসরায়েলি এক কর্মকর্তা মঙ্গলবার (১১ জুন) বলেছেন, তারা মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে হামাসের জবাব হাতে পেয়েছেন আর হামাস যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের ‘সব মূল ও সবচেয়ে অর্থপূর্ণ পয়েন্টগুলোকে চ্যালেঞ্জ করেছে’।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেছেন, “হামাস প্রেসিডেন্ট বাইডেনের উপস্থাপন করা জিম্মি মুক্তির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।”
এর আগে পরিচয় না দিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত এক অ-ইসরায়েলি কর্মকর্তা জানান, ইসরায়েলের সঙ্গে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও রাফাসহ গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের একটি নতুন সময়সীমা প্রস্তাব করেছে হামাস।
বাইডেনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের রূপরেখা নিয়ে সোমবার (১০ জুন) জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব তুলেছিল যুক্তরাষ্ট্র। ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদের ১৪ সদস্যের ভোটে প্রস্তাবটি অনুমোদিত হয়।
এরপরই মঙ্গলবার (১১ জুন) জাতিসংঘ-সমর্থিত প্রস্তাব মেনে নেওয়ার কথা জানায় হামাস। হামাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সামি আবু জুহরি এদিন রয়টার্সকে বলেন, হামাস যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবনা মেনে নিয়েছে এবং এই প্রস্তাবের খুঁটিনাটি নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত, তবে ইসরায়েলের এই প্রস্তাব মেনে চলার বিষয়টি নিশ্চিত করার ভার যুক্তরাষ্ট্রের।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন মঙ্গলবার (১১ জুন) তেল আবিবে ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ব্লিঙ্কেন হামাসের মন্তব্যকে ‘আশাব্যঞ্জক ইঙ্গিত’ বলে বর্ণনা করে তাদের জবাবের অপেক্ষায় আছেন বলে জানিয়েছিলেন।
মন্তব্য করুন: