রবিবার, ৬ই অক্টোবর ২০২৪, ২১শে আশ্বিন ১৪৩১ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল daajkaal@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • পূর্বাঞ্চলে বন্যায় ১৪ হাজার ৪২১ কোটি টাকার ক্ষতি: সিপিডি
  • অভিন্ন জলরাশি নীতিমালা না হলে বন্যাঝুঁকি আরও বাড়বে: রিজওয়ানা
  • ব্যাংক নোটে নতুন নকশা, বাদ যেতে পারে বঙ্গবন্ধুর ছবি
  • মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মাল্টিপল ভিসা দেওয়ার আহ্বান ড. ইউনূসের
  • ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতির শোক
  • সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল হবে: আসিফ নজরুল
  • বৈরী আবহাওয়া, উপকূলীয় অঞ্চলে নৌযান চলাচল বন্ধ
  • শহীদ পরিবারের পক্ষে আজ মামলা করবে নাগরিক কমিটি
  • ৪ বন্দরে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত
  • সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা কামালসহ গ্রেপ্তার ৪

বেনজীর ঘনিষ্ঠদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক

ডেস্ক রির্পোট

প্রকাশিত:
৮ জুন ২০২৪, ১৩:৫৯

বেনজীর আহমেদ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার, র‌্যাবের মহাপরিচালক ও পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) থাকাকালে যারা তার অবৈধ অর্থ উপার্জনের সহযোগী ছিলেন, তাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। এ তালিকায় পুলিশ কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, ভূমি কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদসহ অনেকেই রয়েছেন। বেনজীরের অপকর্মে সহায়তাকারী কয়েকজন ইতোমধ্যে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। এর মধ্যে ‘ক্যাশিয়ার’ হিসেবে পরিচিত এক সহযোগী বেনজীরের অবসরের দিনই দুবাই পালিয়ে যান।

দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) সরকারি একাধিক সংস্থা বেনজীরের সুবিধাভোগীদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে। তাদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বেনজীরের দুর্নীতিতে অনেকের যোগসাজশ রয়েছে যাদের বেশিরভাগই পুলিশ সদস্য। বেনজীরের পাশাপাশি তাদের অনেকেই অপকর্মের মাধ্যমে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।

গাজীপুরের ভাওয়াল রিসোর্টের মতো কিছু সম্পত্তিতে বেনজীরের সঙ্গে কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার অংশীদারত্বও আছে। আবার কিছু পুলিশ সদস্য বেনজীরের আস্থায় থাকতেন, তার হুকুম তামিল করেই তুষ্ট থাকতেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা ও বেনজীর ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডিএমপি কমিশনার, র‌্যাবের ডিজি ও আইজিপি থাকাকালীন তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে শত শত কোটি টাকা কামিয়েছেন। তিনি মূলত কেনাকাটা থেকে কমিশন হিসেবে অর্থ হাতাতেন।

এ ক্ষেত্রে তার দোসর হিসেবে ছিলেন মধ্যম সারির কতিপয় কর্মকর্তা ও নিম্নস্তরের কর্মচারী। র‌্যাবের ডিজি থাকাকালীন তৃতীয় শ্রেণির এক কর্মচারী ছিলেন তার ‘ক্যাশিয়ার’। তার দাপটে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ছিলেন তটস্থ। ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর আইজিপির পদ থেকে বেনজীর অবসরে যাওয়ার দিনই সেই ক্যাশিয়ার দুবাই পালিয়ে যান। ভয়ে রয়েছেন দেশে থাকা তার সহযোগী কর্মকর্তারাও।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রায় আড়াই বছর বেনজীর পুলিশপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে লজিস্টিক আর ইকুইপমেন্ট ডিপার্টমেন্ট থেকে প্রচুর অর্থ হাতিয়েছেন। এসব ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে তিনি মধ্যমসারির কর্মকর্তাদের কাজে লাগাতেন। কেনাকাটার ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের তেমন কোনো ভূমিকা থাকত না, শুধু স্বাক্ষর করা ছাড়া। এক্ষেত্রে বেনজীর আহমেদ এবং তার সিন্ডিকেটে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সিদ্ধান্তই ছিল শেষ কথা। বেনজীর অবসরে যাওয়ার পর সেসব কর্মকর্তাদের দেওয়া হয়েছে তুলনামূলকভাবে ‘পানিশমেন্ট’ পোস্টিংয়ে। কারো কারো আটকে দেওয়া হয়েছে পদোন্নতি। বেনজীর দেশ ছেড়ে পালানোর পর তারা অনেকেই রয়েছেন আতঙ্কে।

সিআইডির একাধিক মানিলন্ডারিং মামলা থেকে বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাবেক এক প্রধান এবং বর্তমান এক ডিআইজি ছিলেন বেনজীর আহমেদের ‘সিন্ডিকেটে’। ফরিদপুরের আলোচিত বরকত-রুবেলের ২ হাজার কোটি টাকা পাচারের মামলায় ২০২১ সালের ৩ মার্চ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তৎকালীন সিআইডির সহকারী পুলিশ কমিশনার (এএসপি) উত্তম কুমার সাহা ১০ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন। অর্থ আত্মসাতের মামলায় দুই আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে নাম আসা একাধিক আসামির নাম অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়া হয়।

অভিযোগ ওঠে, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) তদন্তে ৪২ জনকে বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে লেনদেন হয় বিপুল পরিমাণ অর্থের। এ কাণ্ড নিয়ে ২০২২ সালের ১৩ ডিসেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে ‘বরকত-রুবেলের ২ হাজার কোটি টাকা লুটপাটের মামলা: ৪২ আসামিকে পুলিশের ছাড়’ শিরোনামে বিশেষ প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। এ ঘটনায় ‘সংক্ষুব্ধ’ হয়ে মামলা পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। তদন্ত করে চলতি বছরের ২২ এপ্রিল আরো ৩৭ জনকে আসামি করে পুনরায় চার্জশিট দাখিল করেছে সিআইডি।

অভিযোগ রয়েছে, বরকত-রুবেলের অর্থপাচারের মামলায় ৪২ জনের নাম চার্জশিট থেকে বাদ দিতে ৬৩ কোটি টাকা লেনদেন হয়। এ লেনদেনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন পুলিশের শীর্ষস্থানীয় কিছু কর্মকর্তা। তখন পুলিশের আইজিপি ছিলেন বেনজীর আহমেদ এবং সিআইডির প্রধান হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন অতিরিক্ত আইজিপি ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার উত্তম কুমার সাহা গোঁজামিল চার্জশিট দেন। গত ৩০ মে দুদকের মামলায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অবসরপ্রাপ্ত) উত্তম কুমারের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।

জানা গেছে, পুলিশের পাশাপাশি ব্যবসায়ী ও তার ঘনিষ্ঠজনরাও বেনজীরের অপকর্মের সহযোগী ছিলেন। বেনজীর আহমেদের ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত রাজধানীর পূর্ব গোড়ানের বিকাশ সাব্বির। বেনজীর আহমেদের পরিবারের ব্যবসায়িক বিভিন্ন বিষয় দেখাশোনা করতেন এই সাব্বির। এই সুযোগে তিনি নিজেও গড়ে তোলেন অঢেল সম্পদ।


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর