প্রকাশিত:
৪ জুন ২০২৪, ১৭:৪৬
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের ভোট গণনা চলছে। এখন পর্যন্ত প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন জোট এগিয়ে রয়েছে।
কিন্তু এখন পর্যন্ত ফলাফলের যে প্রবণতা তাতে এটা স্পষ্ট যে বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হতে পারে। অন্যদিকে জয়ের ধারায় ফেরায় শেষ পর্যন্ত বড় চমক দেখাতে পারে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট।
বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ ভারতে সাত দফার বিশাল নির্বাচনী যজ্ঞ শুরু হয় গত ১৯ এপ্রিল। টানা দেড় মাস পর গত শনিবার (১ জুন) শেষ হয়।
পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ৫৪৩ সদস্যের লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে একটি দল বা জোটের ২৭২টি আসন প্রয়োজন। তবে ভোট শেষ হওয়ার পরপরই প্রকাশিত বেশিরভাগ বুথফেরত জরিপই জানায়, এনডিএ জোট ৩৫০টির বেশি আসন পেতে পারে এনডিএ। টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফিরতে পারেন মোদি।
বুথফেরত জরিপের ফলাফলে বেশ উচ্ছ্বসিত ও উজ্জীবিত হয়ে ওঠে গেরুয়া শিবির। তবে ইন্ডিয়া জোট বুথফেরত জরিপ ‘ভুয়া’ বলে উড়িয়ে দেয়। জোটের নেতারা বলেন, ভোটের ফলাফল হবে বুথফেরত জরিপের ‘পুরোপুরি’ উল্টো।
চারদিনের মাথায় মঙ্গলবার (৪ জুন) যখন ভোট গণনা শুরু হলে দেখা গেল, আনুষ্ঠানিক ফলাফলের সাথে মিলছে না বুথফেরত জরিপের ফল।
নির্বাচনী প্রচারণায় মোদির স্লোগান ছিল ‘আব কি বার, ৪০০ পার’। কিন্তু এবার সেই আশার গুড়েবালি। ভোট গণনা শুরু হওয়ার পরই পাল্টে যেতে শুরু করে সব সমীকরণ। সময় যত গড়াচ্ছে, এনডিএ ও কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোটের মধ্যে ব্যবধান তত কমছে।
বিকেল ৫টা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের বরাতে টাইমস অব ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডি জোট ২৯৬টি আসনে এগিয়ে রয়েছে। অন্যদিকে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোট এগিয়ে ২৩১টি আসনে।
গতবার অর্থাৎ ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এনডিএ জোট পেয়েছিল ৩৫৩টি আসন। আর বিজেপি এককভাবে জিতেছিল ৩০৩টি। এবার নির্বাচনী প্রচারণায় মোদি বলেছিলেন, বিজেপি এককভাবে ৩৭০টি আসনে জিতবে।
কিন্তু আনুষ্ঠানিক ফলাফলের প্রবণতায় দেখা যাচ্ছে, তাতে বিজেপির সম্মান টেকানোই দায় হয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে। গণনা শুরু হওয়ার পর আট ঘণ্টারও বেশি সময় পার হলেও ফলের মূল প্রবণতা খুব বেশি পরিবর্তিত হয় নি।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ৩০০ দূরে থাক এবার বিজেপির ২৭২ আসনের প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে হিমশিম খেতে হবে। এখন পর্যন্ত প্রকাশিত ফল অনুযায়ী, দলটি ২৪১টি আসন এগিয়ে রয়েছে। যা দল ও প্রধানমন্ত্রীর নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম।
বিজেপি ২০১৯ সালে এককভাবে ৩০৩টি এবং ২০১৪ সালে ২৮২টি আসন জিতেছিল। আর বিরোধী কংগ্রেস ২০১৯ সালে ৫২টি এবং ২০১৪ সালে ৪৪টি আসন জিতেছিল। এবার জয়ের ধারায় ফিরেছে কংগ্রেস। এখন পর্যন্ত ৯৯টি আসনে এগিয়ে রয়েছে দলটি। জোটগতভাবে এগিয়ে আছে ২৩১টিতে।
শেষ পর্যন্ত একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে ক্ষমতাসীন বিজেপিকে জোট সরকারের পথেই হাটতে হবে। সেক্ষেত্রে নির্ভর করতে হবে অপেক্ষাকৃত ছোট দলগুলোর ওপর। জোট সরকারে পার্লামেন্টে কোনো সিদ্ধান্তই আর নিজের মতো করে নিতে পারবে না বিজেপি।
এমনটাই বলছেন বিশ্লেষকদের একাংশ। লন্ডন-ভিত্তিক অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি আলকুইটি’র মাইক সেল বলেন, এই মুহূর্তে ভোটের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বিজেপির সাথে পরবর্তী সরকার গঠনে এনডিএ-এর সমর্থন। তার মতে, বিজেপিকে এনডিএ-র সমর্থন সরকারের নীতির ধারাবাহিকতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
মন্তব্য করুন: