প্রকাশিত:
৪ জুলাই ২০২৩, ১৭:৫৪
ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে দ্বিতীয় দফায় সাগর নন্দিনী-২ নামে তেলবাহী ট্যাঙ্কারের আগুন নেভার পর বিভিন্ন সংস্থা পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর মধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদারসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা
মঙ্গলবার (৪ জুলাই) পরিদর্শন শেষে দুপুরের দিকে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, পদ্মার অয়েল লিমিটেডের নিজস্ব ট্যাঙ্কার নাই। তাই তারা আমাদের এনলিস্টেড ট্যাঙ্কারের মাধ্যমে তেল আনা নেওয়া করে।
শনিবার (১ জুলাই) সাগর নন্দিনী-২ ট্যাঙ্কারের ইঞ্জিনরুমে যখন আগুন লাগে, তখন আরেকটি জাহাজ দিয়ে আমরা তেলগুলো উত্তোলনের কার্যক্রম শুরু করি। ডিজেল থেকে পেট্রোল বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় প্রথমে আমরা ট্যাঙ্কারে থাকা ৭ লাখ লিটার ডিজেল সরানোর উদ্যোগ নিই। তারপর ৪ লাখ লিটার পেট্রোল উত্তোলনের চিন্তা করা হয়। তবে গরমের কারণে সোমবার (৩ জুলাই) সকালে পেট্রোল উত্তোলন করা হয়নি।
তিনি বলেন, সোমবার (৩ জুলাই) পেট্রোল উত্তোলন শুরু হলে একপর্যায়ে বিস্ফোরণ হয়। এ কারণে ২৫ হাজার লিটার পেট্রোল উত্তোলন করা সম্ভব হলেও বাকিটা জাহাজে থেকে যায়। আর এখন আমাদের ধারণা, আগুনের কারণে পেট্রোল যা ছিল অধিকাংশই নষ্ট হয়ে গেছে।
সচিব বলেন, তবে এখানকার সম্পূর্ণ কাজ ঝালকাঠি জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ড, নেভি পরিবেশ অধিদপ্তর মিলে সমন্বিতভাবে করেছে। বিশেষ করে তেলটা যাতে ছড়িয়ে পড়ে পরিবেশগত বিপর্যয় না ঘটে, সেটি দূর করতে সক্ষম হয়েছে তারা। ধ্বংসপ্রাপ্ত ট্যাঙ্কারের তেল কীভাবে আরেকটা বিস্ফোরণে ঘটনা না ঘটিয়ে নিরাপদ মেজারমেন্টের মধ্য দিয়ে ডিপোয় স্থানান্তর করা যায়, সে চিন্তা আমরা করছি।
ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ভবিষ্যতে যাতে এ ধরণের ঘটনা না ঘটে সেজন্য প্রিভেন্টিভ সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার চিন্তা আমাদের রয়েছে। সে কারণে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের একটি কমিটি গঠন করেছি। ফায়ার সার্ভিস, জেলা প্রশাসন, আমাদের মন্ত্রণালয়ের ডিপিসির করা পৃথক কমিটিগুলো কাজ শেষ করলে ওই কমিটি কাজ শুরু করবে। আমাদের লক্ষ্য হলো এ ধরনের ঘটনা যে কারণে ঘটছে সেগুলো চিহ্নিত করা। জাহাজগুলোয় ফায়ার ফাইটিং ইকুয়েপমেন্ট পর্যাপ্ত রয়েছে কিনা; এছাড়া আরও কি কি বিষয় প্রয়োজন রয়েছে- ইনস্যুরেন্সের ব্যাপারসহ বিভিন্ন বিষয়গুলো দেখে সমন্বিত প্রচেষ্টা নেব যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে।
ঝালকাঠিতে নদী ফায়ার স্টেশন করার কোনো চিন্তা রয়েছে কিনা, সাংবাদিকরা জানতে চাইলে সচিব বলেন, এটা অন্য মন্ত্রণালয়ের বিষয়। তবে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের কমিটির তদন্তের রিপোর্টে এলে আমরা সেই সুপারিশ করবো। একইসাথে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের কমিটির তদন্তের রিপোর্টের পর আইনগত ব্যবস্থার নেওয়ার বিষয়টিও দেখা হবে।
পৃথক দুটি বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার সমন্বিত তদন্ত করার জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয়ের কমিটিতে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের যুগ্ম সচিব (প্রশাসন-২) ও বিস্ফোরক পরিদপ্তরের প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক মোহা. নায়েব আলীকে প্রধান করা হয়েছে। যেখানে বিস্ফোরণ ও আগুনের ঘটনা পরবর্তী কার্যক্রমে যেসব এজেন্সি কাজ করেছে তাদের একজন করে প্রতিনিধি থাকবে ও ১৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে বলেও জানান সচিব।
উল্লেখ্য, শনিবার (১ জুলাই) দুপুর আড়াইটার দিকে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে সাগর নন্দিনী-২ তেলের ট্যাঙ্কারে বিস্ফোরণ ও আগুনের ঘটনা ঘটে। সোমবার (৩ জুলাই) উদ্ধার অভিযান শেষ করার ১ ঘণ্টার মাথায় সন্ধ্যায় সাড়ে ৬টার দিকে একই জাহাজে বিস্ফোরণ ও আগুনের ঘটনা ঘটে। এ দুই ঘটনায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছেন ১৯ জন।
মন্তব্য করুন: