প্রকাশিত:
৩০ মে ২০২৪, ১৬:৩১
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের দীর্ঘ প্রচার পর্ব শেষে নরেন্দ্র মোদি সেখানেই ধ্যানমগ্ন হওয়ার কথা জানিয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবারই (৩০ মে) তার কন্যাকুমারী পৌঁছনোর কথা এবং সন্ধ্যা থেকেই টানা দুই দিন তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারীতে ধ্যানে বসবেন তিনি। ২০১৪ সাল থেকেই বিজেপির দেশজুড়ে ভোট প্রচারের শেষে এ ধরনের বিশ্রাম বা ধ্যানে যান তিনি।
কন্যাকুমারীর ধ্যানগৃহ বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়াল, যেখানে স্বামী বিবেকানন্দ ধ্যান করেছিলেন সেখানেই প্রধানমন্ত্রী মোদি ধ্যান করবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তামিলনাড়ুর এক বিজেপি নেতা জানান, ‘কন্যাকুমারীতে যে জায়গায় স্বামীজী ধ্যান করেছিলেন সেই একই জায়গায় ধ্যান করবেন প্রধানমন্ত্রী এবং তিনি বিকশিত ভারত গড়ার দায়বদ্ধতাকে তুলে ধরবেন। কন্যাকুমারীকে বেছে নিয়ে জাতীয় ঐক্যকে তুলে ধরতে চাইছেন মোদিজী।’
এর আগেও ২০১৯ সালের মে মাসে লোকসভা ভোটের প্রচার পর্ব শেষ হওয়ার পরদিনই মোদি ধ্যানে বসেছিলেন হিমালয়ের তুষারতীর্থ কেদারনাথে। কেদারনাথে ১১ হাজার ৭০০ ফুট উঁচুতে গুহার মধ্যে ধ্যানে বসেছিলেন তিনি।
এদিকে গতকাল বুধবার (২৯ মে) এই খবর সামনে আসতেই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে বিরোধীরা।
তামিলনাড়ু সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক কে বালকৃষ্ণান দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে একটি চিঠি দেন। সেই চিঠিতে সিপিএম নেতা লেখেন, মোদি ব্যক্তিগতভাবে কোথাও ধ্যানে বসতেই পারেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ধ্যানমগ্ন হওয়া বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হলে দেশে সপ্তম দফা ভোটের আগে তা নির্দিষ্ট একটি দলকে (বিজেপি) বিশেষ সুবিধা দেবে।
নির্বাচন কমিশনের আদর্শ আচরণবিধি যাতে ভঙ্গ না হয়, সে কারণে এই সম্প্রচার বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছেন বালকৃষ্ণান।
আগামী ১ জুন ভারতে সপ্তম দফার ভোট হবে। কমিশনের বিধি অনুযায়ী, ভোট শেষ হওয়ার ৪৮ ঘণ্টা আগে প্রচার পর্ব শেষ হয়ে যায়। অর্থাৎ আজ বৃহস্পতিবার (৩০ মে) বিকেল ৫টার পরে আর কোনো প্রচার চালানো যাবে না। মোদির ধ্যানের ছবি সরাসরি সম্প্রচারিত হলে দেশে শেষ দফার ভোটের আগে কমিশনের আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘিত হবে।
এ নিয়ে মোদিকে কটাক্ষ করেন মমতা ব্যানার্জি। তিনি বলেন, ‘ধ্যান করবে তো ক্যামেরা নিয়ে কেন? লোকে পূজা ক্যামেরার সামনে ছবি তুলে করে?’
মমতা আরো অভিযোগ করে বলেন, এই সময়টাকেও খুব কৌশল করে মোদি প্রচারের কাজে ব্যবহার করছেন। কারণ প্রধানমন্ত্রী ধ্যানে বসেছেন, এটা সব মিডিয়াই তুলে ধরবে। এখন দেখার বিষয় কমিশন এ নিয়ে কী পদক্ষেপ নেয়।
একই আবেদন জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছে কংগ্রেসও। দলটির নেতা রণদীপ সুরজেওয়ালা, অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি ও সৈয়দ নাসির হুসেন কমিশনের কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দেন। কংগ্রেস বলেছে, এমনটা হলে ১৯৫১ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনও লঙ্ঘন করবেন মোদি। ৩০ মে সন্ধ্যা থেকেই প্রচার পর্ব শেষ। ভোটাররা এ সময় ভোটদান নিয়ে ভাবনা করেন। তখন মোদি ধ্যানে বসলে এবং তা টেলিভিশনে প্রচার হলে ভোটাররা প্রভাবিত হবেন। এটাও তার একধরনের পরোক্ষ প্রচার। যেখানে মোদি নিজেই এবারের পর্বে বারানসিতে প্রার্থী। তাই কংগ্রেসের দাবি, কমিশন যেন কোনোভাবেই টেলিভিশন বা অন্যান্য গণমাধ্যমে এ ঘটনা প্রচার করার নির্দেশ না দেন।
বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়াল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র। কন্যাকুমারীর ত্রিবেণী সঙ্গমে (যেখানে তিন দিক থেকে বঙ্গোপসাগর, আরব সাগর আর ভারত মহাসাগর এসে মিশেছে) পাথরের ওপর বসে স্বামী বিবেকানন্দ ১৮৯২ সালে ধ্যান করেছিলেন।
মন্তব্য করুন: