প্রকাশিত:
৩০ মে ২০২৪, ১৩:৪০
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে গত রবি (২৬ মে) ও সোমবার (২৭ মে) দেশের বিভিন্ন স্থানে টানা বৃষ্টি হয়। তাপমাত্রাও কমে আসে অনেকটা। কিন্তু গত মঙ্গলবার (২৮ মে) থেকেই আবার গরম পড়তে শুরু করেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আরও অন্তত দুই দিন এমন গরম থাকতে পারে। কোনো স্থানে তাপপ্রবাহও হতে পারে। তবে টানা তাপপ্রবাহের সম্ভাবনা কম। আর আজই মৌসুমি বায়ুর আগমনের কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এবার একটু আগাম চলে এল এ বায়ু।
ভারী বৃষ্টির পর এত তাপ ও অসহনীয় গরমের কারণ কী, তা জানতে চাইলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম আজ বৃহস্পতিবার (৩০ মে) সকালে বলেন, বৃষ্টি বেশি হলে এরপর বাতাসে জলীয় বাষ্প থেকে যায়। এখন বাতাসে আর্দ্রতার উপস্থিতি অনেক।
আজ সকাল ৬টার দিকে ঢাকার বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৮৪ শতাংশ।
শাহীনুল ইসলাম বলেন, এত আর্দ্রতার জন্যই গরম যা–ই থাকুক, মানুষের মধ্যে অস্বস্তি বেশি থাকবে।
রাজধানীতে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় রাজশাহীতে, ৩৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এমন গরম আজ (৩০ মে) ও কাল শুক্রবারও (৩১ মে) থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক। তিনি আজ বলেন, শনিবার (১ জুন) থেকে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়লে গরম কিছুটা কমতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর আজ (৩০ মে) সকালে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেছে, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের দুয়েক জায়গায় আজ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। দেশের উত্তরাঞ্চলে তাপমাত্রা আজ কিছুটা কমলেও বাড়তে পারে দেশের অন্য এলাকার তাপমাত্রা।
মৌসুমি বায়ু আসছে আগাম
এত গরমের মধ্যে আবহাওয়ার ভালো খবর, এবার মৌসুমি বায়ু এসেছে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই।
বাংলাদেশে সাধারণত ৩১ মে বা ১ জুনের মধ্যে মৌসুমি বায়ু প্রবেশ করে টেকনাফ উপকূল দিয়ে। তবে আবহাওয়া অধিদপ্তর আজ (৩০ মে) সকালে দেওয়া বার্তায় বলেছে, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু টেকনাফ উপকূল পর্যন্ত এগিয়ে এসেছে।
আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম বলেন, এবার একটু আগেই মৌসুমি বায়ু চলে এল।
ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর তাদের বার্তায় বলেছে, ইতিমধ্যে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব শুরু হয়েছে। বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সাগরের এই দ্বীপের সাধারণত ২২ মের মধ্যে মৌসুমি বায়ুর আগমন ঘটে। তবে এবার ২১ মে–তে তা এসে গেছে।
মৌসুমি বায়ুর একটু আগে আসার বিষয়টি তুলে ধরে বুয়েটের পানিসম্পদ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এ কে এম সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘গত কয়েক বছরে আমাদের দেশে মৌসুমি বায়ু দেরিতে এসেছে। এবার যথাসময়ে তা আসবে বলে মনে হচ্ছে। তাতে বৃষ্টিও তাড়াতাড়ি শুরু হতে পারে। এবার ঝড়ের পরপরই এ বায়ু চলে এসেছে।’
ভারতের বেসরকারি আবহাওয়াবিষয়ক ওয়েবসাইট স্কাইমেট ওয়েদারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ বছর স্বাভাবিকের চেয়ে ২ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হতে পারে।
এর আগে ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরও চলতি বছর বেশি বৃষ্টি হওয়ার কথা বলেছিল। এবার বেশি বৃষ্টির কারণ হিসেবে লা নিনার সক্রিয়তার কথা বলছেন আবহাওয়া ও জলবায়ুবিশারদেরা।
এল নিনো মধ্য ও পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের দুটি বায়ুপ্রবাহের একটি। এল নিনো বলতে মূলত উষ্ণায়নের অবস্থা বোঝায়। অন্যদিকে লা নিনা বলতে বোঝায় এর উল্টো অবস্থাকে। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে এল নিনোর সক্রিয়তার কথা জানায়। এর কারণে যে এবার বিশ্বজুড়েই তাপপ্রবাহ বাড়বে, তা আগে থেকেই সতর্ক করা হয়। অস্ট্রেলিয়া ব্যুরো অব মেটেরোলজি এল নিনোর তথ্য জানায়। গত ১৬ এপ্রিল তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, এল নিনো শেষ হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়া দপ্তর এল নিনোর সমাপ্তির কথা ঘোষণার পাশাপাশি লা নিনার আগমনের কথা জানায়।
অধ্যাপক এ কে এম সাইফুল ইসলাম বলেন, লা নিনার সক্রিয় হয়ে ওঠার অর্থ হলো, এবার বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত বৃষ্টি হতে পারে। কারণ, সমুদ্র তো বটেই, ভূপৃষ্ঠেও জমা হয়ে আছে এখন তৈরি হওয়া অতিরিক্ত তাপ। এতে প্রচুর জলীয় বাষ্প তৈরি হবে আর বৃষ্টি ঝরবে বেশি।
মন্তব্য করুন: