প্রকাশিত:
১৮ মে ২০২৪, ১৭:৩১
অনিন্দ্য সুন্দর নর্দার্ন লাইট বা অরোরা দেখতে পর্যটকদের সাধারণত মোটা অংকের টাকা খরচ করতে হয়। পাশাপাশি, তীব্র ঠান্ডায় ঘোরাঘুরির জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবেও প্রস্তুত থাকতে হয়। কিন্তু গত সপ্তাহে বিশ্বজুড়ে যে অকল্পনীয় রঙের বর্ণালী দেখা গিয়েছিল, তার জন্য এমন কঠিন পরীক্ষার দরকার হয়নি। কেবল মাথা তুলে আকাশের দিকে তাকালেই মানুষ দেখতে পেয়েছে স্বপ্নের অরোরা।
পৃথিবীতে মূলত উত্তর মেরুর দেশগুলোতে অরোরা দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু গত ১০ মে রাতে মেক্সিকো, দক্ষিণ ইউরোপ, এমনকি দক্ষিণ আফ্রিকার আকাশেও দেখা গেছে রঙিন আলোর খেলা। সবুজ, গোলাপি, বেগুনি- নানা বর্ণের উজ্জ্বল অরোরার ছবিতে ছেয়ে গিয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো।
কিন্তু যে কারণে দেখা দিয়েছিল এমন অনন্য সৌন্দর্য, যার কারণে তৈরি হয়েছিল বিশ্বব্যাপী অরোরা, সেই সৌরঝড়ের কথা ভেবেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এই মহাজাগতিক ঘটনার পেছনে ভয়ানক বিপদের ছায়া দেখতে পাচ্ছেন তারা।
ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার (ইএসএ) স্পেস সেফটি প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর কুয়েন্টিন ভারস্পিয়ারেন বলেন, আমাদের বুঝতে হবে, এই সৌন্দর্যের পেছনে বিপদ রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্পেস ওয়েদার প্রেডিকশন সেন্টারের মাইক বেটউইয়ের কথায়, আমরা সৌরঝড়ের আরও ভয়ংকর সম্ভাব্য প্রভাবের দিকে মনোনিবেশ করছি; যেমন- পাওয়ার গ্রিড ও স্যাটেলাইট অচল হয়ে যাওয়া বা নভোচারীরা বিপজ্জনক মাত্রায় বিকিরণের সম্মুখীন হওয়া।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওসেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনওএএ)-এর স্পেস ওয়েদার প্রেডিকশন সেন্টারের মতে, গত ১০ মে বাংলাদেশ সময় রাত ১০টার পর থেকে বেশ কয়েকটি করোনাল ম্যাস ইজেকশনের (সিএমই)-এর ঘটনা ঘটে। সূর্য থেকে প্লাজমা এবং চৌম্বক ক্ষেত্র বেরিয়ে আসার ঘটনাকে সিএমই বলা হয়ে থাকে।
পরে এটি ‘মারাত্মক’ ভূ-চৌম্বকীয় ঝড়ে রূপান্তরিত হয়। ২০০৩ সালের অক্টোবরে তথাকথিত ‘হ্যালোইন স্টর্মস’-এর পরে এ ধরনের ঘটনা ছিল এটিই প্রথম। ২১ বছর আগের ওই সৌরঝড়ে সুইডেনে ব্ল্যাকআউট এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় বিদ্যুৎ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
এমন ভূ-চৌম্বকীয় ঝড়ের কারণেই গত সপ্তাহে দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল অরোরা। তবে সাম্প্রতিক সৌরঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি কিছুটা কম হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও স্যাটেলাইট কোম্পানিগুলোর সমস্যা প্রকাশ করতে প্রায়শ সপ্তাহখানেক লেগে যায় বলে জানিয়েছেন বেটউই।
তিনি বলেছেন, সৌরঝড়ের কারণে জিপিএস সিস্টেম অচল হয়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে কিছু স্ব-চালিত ট্রাক্টর কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল বলে খবর পাওয়া গেছে।
বিপদ শেষ হয়নি
সূর্যের পৃষ্ঠে বিশাল বিস্ফোরণ ঘটলে তা থেকে অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে প্লাজমা, বিকিরণ এবং কখনো কখনো চৌম্বক ক্ষেত্র নিক্ষিপ্ত হয়। এর প্রভাব পড়ে পৃথিবীতেও।
সাম্প্রতিক সৌরঝড়টি এসেছিল পৃথিবীর আকার থেকে ১৭ গুণ বড় একটি সানস্পট ক্লাস্টার থেকে, যা এখনো সক্রিয় রয়েছে। গত মঙ্গলবার এটি বছরের মধ্যে দেখা সবচেয়ে শক্তিশালী সৌরশিখার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল।
সানস্পটটি সূর্যের ডিস্কের প্রান্তের দিকে ঘুরছে। তাই আশা করা হচ্ছে, সাময়িকভাবে এর প্রভাব বন্ধ হবে। কারণ এর বিস্ফোরণগুলো আমাদের গ্রহ থেকে দূরে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে।
কিন্তু, মোটামুটি দুই সপ্তাহের মধ্যেই সানস্পটটি ঘুরে আবারও পৃথিবীর দিকে আসবে।
ইএসএ’র স্পেস ওয়েদার সার্ভিসের সমন্বয়ক অ্যালেক্সি গ্লোভার জানান, এরই মধ্যে আরেকটি সানস্পট নজরে আসছে, যা আগামী দিনগুলোতে বড় ধরনের কার্যকলাপ শুরু করতে পারে। সুতরাং, সৌর কার্যকলাপ অবশ্যই শেষ হয়ে যায়নি।
এই সানস্পটগুলো কতটা ভয়ানক হতে পারে বা তারা আরও অরোরা ছড়াতে পারে কি না, তা অনুমান করা কঠিন।
কিন্তু বেটউই বলেছেন, সৌর কার্যকলাপ কেবল তার প্রায় ১১ বছর চক্রের শীর্ষে পৌঁছেছে। তাই এখন থেকে আগামী বছরের শেষের মধ্যে আরেকটি বড় সৌরঝড়ের আশঙ্কা বেশি।
মন্তব্য করুন: