রবিবার, ২৪শে নভেম্বর ২০২৪, ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল daajkaal@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • অক্টোবরে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৭৫ জন নিহত
  • বোয়ালখালীতে আগুনে ৫ বসতঘর পুড়ে ছাই
  • ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি কেলি রদ্রিগেজ
  • প্রথমবার সচিবালয়ে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা
  • এস আলমের ঋণ জালিয়াতি, কেন্দ্রিয় ব্যাংকের ১৩ জনকে তলব
  • সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা
  • ড. ইউনূসের ভিশনের দিকে তাকিয়ে যুক্তরাজ্য: ক্যাথরিন ওয়েস্ট
  • ২০২৫ সালে সরকারি নির্মাণে পোড়া ইট ব্যবহার বন্ধ হবে
  • নাম ও পোশাক বদলাচ্ছে র‌্যাব
  • গণহত্যা মামলায় ৮ পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেফতারের নির্দেশ

পদ্মা সেতু প্রকল্পে নদীশাসনে হাজার কোটি টাকা বাড়তি চায় চীনা ঠিকাদার

ডেস্ক রির্পোট

প্রকাশিত:
১৮ মে ২০২৪, ১৩:০৮

সেতু চালুর সময় নদীশাসনের কাজ কিছু বাকি ছিল। আগামী জুনে নদীশাসনসহ পদ্মা সেতু প্রকল্পের সম্পূর্ণ কাজের মেয়াদ শেষ হচ্ছে।

পদ্মা সেতু প্রকল্পে নদীশাসনের কাজে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আরও ১ হাজার কোটি টাকা চায়। চুক্তির চেয়ে বাড়তি কাজ করেছে—এমন দাবি করে ঠিকাদার এই অর্থ সেতু বিভাগের কাছে চেয়েছে। সেতু বিভাগ বাড়তি ৬০০ কোটি টাকা দিতে চায়।

নদীশাসনের কাজটি করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশন। এর আগে বাড়তি কাজ, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও সরকারের ভ্যাট–করহার পরিবর্তনের কারণে গত বছরের সেপ্টেম্বরে নদীশাসন কাজে ৮৭৮ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানো হয়েছিল।

চুক্তির বাইরে বাড়তি কাজসহ অন্যান্য খরচ দেখিয়ে ব্যয় বৃদ্ধিকে ঠিকাদারি ভাষায় ‘ভেরিয়েশন’ বলা হয়। সেতু বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভেরিয়েশন মানে চুক্তির চেয়ে বেশি কাজ করেছে ঠিকাদার। ঠিকাদারি কাজে এ ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা নেওয়ার সুযোগ থাকে। কারণ, অনেক সময় প্রকৃত কাজ না করে বাড়তি টাকা যোগসাজশে তুলে নেন ঠিকাদার।

নদীশাসনে ব্যয় বাড়লেও পুরো প্রকল্পের ব্যয় বাড়বে না। কারণ, গত বছরের এপ্রিলে প্রকল্পের প্রস্তাব সংশোধনের মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ‘ভ্যারিয়েশন’ হতে পারে ভেবে বাড়তি টাকা রাখা হয়েছে।
মো. শফিকুল ইসলাম, পরিচালক, পদ্মা সেতু প্রকল্প।

সেতুর দুই প্রান্তে নদীশাসনে ২০১৪ সালের নভেম্বরে সিনোহাইড্রোকে ৮ হাজার ৭০৮ কোটি টাকায় নিয়োগ দিয়েছিল সেতু বিভাগ।

সেতু বিভাগ বলছে, পদ্মা সেতু প্রকল্পে নদীশাসনের কাজে বিশ্ব রেকর্ড হয়েছে। একক চুক্তির আওতায় এর চেয়ে বেশি টাকায় নদীশাসনের জন্য কোনো ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়নি। গত সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। নতুন করে ৬০০ কোটি টাকা যোগ হলে এ কাজের ব্যয় দাঁড়াবে ১০ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা।

২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা সেতুতে যানবাহনের চলাচল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখন সেতু দিয়ে পুরোদমে যানবাহন চলছে। সেতুর টোল থেকে আয়ের পরিমাণ দেড় হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। কিন্তু সেতু চালুর সময় নদীশাসনের কাজ কিছু বাকি ছিল। আগামী জুনে নদীশাসনসহ পদ্মা সেতু প্রকল্পের সম্পূর্ণ কাজের মেয়াদ শেষ হচ্ছে।

এর মধ্যে ঠিকাদারের চাওয়া মেনে বাড়তি বরাদ্দের বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশন ও সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে তৎপরতা শুরু করেছে সেতু বিভাগ। গত ২৮ এপ্রিল সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, নদীশাসনে ব্যয় বাড়লেও পুরো প্রকল্পের ব্যয় বাড়বে না। কারণ, গত বছরের এপ্রিলে প্রকল্পের প্রস্তাব সংশোধনের মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ‘ভেরিয়েশন’ হতে পারে ভেবে বাড়তি টাকা রাখা হয়েছে।

সেতু বিভাগ সূত্র বলছে, সর্বশেষ সংশোধনীতে প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ হয়ে যাওয়ার পরও পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং বাড়তি কাজ করা লাগতে পারে ধরে নিয়ে ১ হাজার কোটি টাকা রাখা হয়। এখন সেই টাকা থেকে নদীশাসনে ঠিকাদারের দাবি মেটানো হবে। এর জন্য সরকারের অনুমোদন লাগবে।

সাম্প্রতিক সময়ে বড় প্রকল্পগুলোতে বড় ‘ভ্যারিয়েশনের’ একটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় কাজ যুক্ত করে ব্যয় বাড়ানো হয়। এসব কাজ সম্পন্ন করা হয় রাজনৈতিকভাবে প্রভাব রাখে, এমন সহযোগী ঠিকাদারের মাধ্যমে। ফলে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ে, কাজের মানও খারাপ হয়।
সামছুল হক, অধ্যাপক, পুরকৌশল বিভাগ, বুয়েট।

পদ্মা সেতুর জন্য নদীশাসন করা হয়েছে মোট ১২ দশমিক ৯২ কিলোমিটার। এর মধ্যে মাওয়া প্রান্তে ১ দশমিক ৮৪ ও জাজিরা প্রান্তে ১১ দশমিক ৮ কিলোমিটার নদীশাসন করা হয়।

সেতু বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, গত বছর প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করার সময় দেখা গেছে, নদীশাসনের মূল কাজের ব্যয় ৯৬২ কোটি টাকা কমেছে। যদিও তখন চুক্তির বাইরের কাজের জন্য ব্যয় বেড়েছিল। এবার বাড়তি কাজের যে ব্যয়ের কথা বলা হচ্ছে, তার বেশির ভাগ চীনা ঠিকাদার নিজে করেনি। তারা প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র ছাড়াই সহঠিকাদার (সাবকন্ট্রাক্টর) নিয়োগ করে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সহঠিকাদারের মধ্যে অন্যতম ছিল মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ‘বালিশ–কাণ্ড’ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হলের ছাদধসের ঘটনায় আলোচিত।

আগে ব্যয় বেড়েছে যেসব কারণে

সেতু বিভাগ সূত্র বলছে, গত সেপ্টেম্বরে ৫০০ কোটি টাকার বেশি ব্যয় বেড়েছে ডলারের মূল্য এবং ভ্যাট ও করহার বৃদ্ধির কারণে। এর বাইরে চুক্তি অনুসারে চার বছরে নদীশাসনের কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু বাড়তি সময় লাগে সাড়ে চার বছরের বেশি। এ সময় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও পরামর্শকের বেতন-ভাতার জন্যও বাড়তি ব্যয় করতে হয়।

আবার সেতুর টোল প্লাজা, সমীক্ষার জন্য নৌযান ক্রয়, অপটিক্যাল ফাইবার বসানোসহ নানা কেনাকাটা করা হয় নদীশাসনের অধীনে। করোনা মহামারিতে বিদেশ থেকে কর্মী আসতে পারেননি, এ ক্ষতিও ব্যয় হিসেবে এসেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে বন্যা ও নদীর স্রোতের কারণে নদীশাসনে বাড়তি খরচ দেখায় ঠিকাদার।

চুক্তি অনুসারে, সিনোহাইড্রো করপোরেশনকে চুক্তি মূল্যের প্রায় ৭০ শতাংশ ডলারে পরিশোধ করতে হচ্ছে। বাকি ৩০ শতাংশ টাকায় পরিশোধ করা হচ্ছে।

প্রকল্পের মোট ব্যয়

পদ্মা সেতু প্রকল্পটি প্রথম অনুমোদন পায় ২০০৭ সালের আগস্টে। ব্যয় ধরা হয় ১০ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। ২০১৫ সালের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। ২০১১ সালের জুনে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা।

২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে ২৯ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা নির্ধারণ করে সরকার। সেতুর কাজ শেষ করার সময় নির্ধারণ করা হয় ২০১৮ সাল। ২০১৮ সালের জুনে বাড়তি জমি ক্রয়ের জন্য ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ে এবং বিশেষ অনুমোদন দিয়ে ব্যয় দাঁড়ায় ৩০ হাজার ৯৩ কোটি টাকা। সর্বশেষ গত বছর ব্যয় ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়।

নদীশাসনে বাড়তি ব্যয়ের বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও বড় প্রকল্প বিষয়ে বিশেষজ্ঞ সামছুল হক গতকাল শুক্রবার (১৭ মে) বলেন, পদ্মার মতো নদীশাসনের কাজ জটিল। তবে প্রায় ১৭ শতাংশ ‘ভেরিয়েশন’ বেশি। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বড় প্রকল্পগুলোতে বড় ‘ভেরিয়েশনের’ একটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় কাজ যুক্ত করে ব্যয় বাড়ানো হয়। এসব কাজ সম্পন্ন করা হয় রাজনৈতিকভাবে প্রভাব রাখে, এমন সহঠিকাদারের মাধ্যমে। ফলে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ে, কাজের মানও খারাপ হয়। এ বিষয়ে সরকারের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) আরও দায়িত্ব নিয়ে কাজ করার সুযোগ আছে।

 


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর