প্রকাশিত:
১৬ মে ২০২৪, ১৪:০০
ভারতের নির্বাচনের ইতিহাসে সবচেয়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে যাচ্ছে এ বছর। এমনকি ১৯৭৭ সালে ইন্দিরা গান্ধীর ক্ষমতাকালেও এতটা রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতি দেখা যায়নি।
সে নির্বাচনের পর ৭৭ বছর পেরিয়েছে, পাল্টে গেছে ভারত। দীর্ঘদিন প্রধানমন্ত্রীর আসন দখল করে ক্রমশ ভারতীয়দের মূল্যবোধ পাল্টে দিচ্ছেন মোদি। এবছরের নির্বাচনে বড় ধরণের পরিবর্তন না এলে শিগগিরই আদর্শগত স্বৈরাচারের শাসনে চলে যাবে দেশটি।
আর দশটি সাধারণ নির্বাচনের মতো নয় ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন, বরং একে ডেভিড বনাম গোলিয়াথের সাথে তুলনা করা যায়। নির্বাচন জিততে রীতিমত আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছে বিজেপি, বিপুল পরিমাণ টাকা ঢালা হচ্ছে প্রচারণায়, আর কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি চলছে অনবরত। সততা ও নীতি পেছনে পড়ে গেছে অনেক আগেই। নির্বাচনে যে কোনোভাবেই জিততে হবে, এমন পণ করেছে ক্ষমতাসীন দলটি।
অন্যদিকে, নির্বাচনে এভাবে টাকা ঢালতে পারছে না বিজেপির প্রতিপক্ষ। প্রচারণার মাঠে এরপরেও তাদের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য। তাদের একটাই ভাবনা- যে করেই হোক এবার জিততে হবে, নয়তো আর কখনো ক্ষমতায় বসার স্বপ্ন দেখা হবে না।
আসলে এই নির্বাচনে দুটি দল নামেনি, বরং নেমেছে দুটি মতবাদ। এক পক্ষ ভারতের প্রাচীন ইতিহাস ধরে রাখার প্রাণপণ চেষ্টা করছে, আরেক পক্ষ চাইছে ভারতের ইতিহাসকে ধুলোয় মিশিয়ে নিজেদের তৈরি ইতিহাসকে সত্য বলে প্রতিষ্ঠা করতে।
তবে ইতিমধ্যেই ভারতের ভোটাররা বুঝে ফেলেছে বিজেপি কেন লোকসভার ৪০০টি আসন দখল করতে বদ্ধপরিকর। সবগুলো আসনে নিজেদের লোক থাকলে বিনা বাধায় দেশটির সংবিধান আস্তাকুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলতে পারবে বিজেপি। ১৯৫০ সালে যখন সংবিধানটি তৈরি হয়, তখন থেকে আরএসএস এর নেতারা একে প্রত্যাখ্যান করে আসছে, হিন্দুদের বিধান মনু স্মৃতি প্রতিষ্ঠার দাবি করে আসছে। অথচ এই সংবিধানের বলেই জাত, ধর্ম, বর্ণ, এলাকা, এবং লিঙ্গ নির্বিশেষে সমান অধিকার দেওয়া হয় সকল ভারতীয়কে।
আরএসএসের মতাদর্শে চলেন মোদি। ৪০০ আসলে জিতলে তার দল যে সংবিধানে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করবে, নতুন করে বৈষম্যের পথে হাঁটবে, তা বুঝতে কারোই বাকি নেই। সে হিসেবে ৪০০ আসনে জেতার এই প্রচারণা আসলে তাদের গোমর ফাঁস করে দিয়েছে। তার প্রতিপক্ষ রাহুল গান্ধী দ্রুতই আঁচ করতে পারেন ব্যাপারটা। ফলে গান্ধী এবং তার সমর্থক জোট "ইন্ডিয়া"র নেতারা পকেটে করে সংবিধানের কপি রাখতে শুরু করেছেন। প্রচারণার মাঝে প্রায়ই তারা ভোটারদের মনে করিয়ে দিচ্ছেন, সংবিধান বাঁচাতে চাইলে বিজেপিকে ভোট দেওয়া যাবে না।
ভারতের ৬৫ শতাংশ নাগরিক সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষ, নিম্নবর্ণের হিন্দু, এবং দলিত। তাদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই বৈষম্যমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে মোদির বিজেপি, ফলে এই বড় সংখ্যার ভোটার ক্রমশ তার হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে।
মোদি এবং তার ডান হাত অমিত শাহ ব্যাপারটা বুঝতে পেরে দাবি করে চলেছেন সংবিধান পাল্টানোর এই ব্যাপারটা আসলে গুজব, এমন কিছু হতে যাচ্ছে না। কিন্তু মোদিকে দেখেই বোঝা যায়, আত্মবিশ্বাস হারাচ্ছেন তিনি। মোদি ভেবেছিলেন রাম মন্দির প্রতিষ্ঠা করেই হিরো বনে যাবেন তিনি। কিন্তু বেকারত্ব, বাজারে পণ্যের মূল্যে আগুন, দুর্নীতি- এসব ইস্যুর সমাধান না করায় তার ওপর চটে আছেন অনেকে। এসব সমস্যা সমাধানে তিনি কী করেছেন, কিছু করছেন না কেন- প্রচারণা চলাকালীন এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন মোদি ও বিজেপির নেতারা।
এর আগে ২০১৪ এবং ২০১৯ এর নির্বাচনে হিন্দু বনাম মুসলিম গুটি চেলে পার পেয়ে গিয়েছিলেন মোদি। কিন্তু একই কৌশল আর এবার খাটছে না। তিনি বুঝে গেছেন, তার হারার সম্ভাবনা রয়েছে কিছুটা হলেও। তাই মরিয়া হয়ে বাজে বকছেন তিনি। কংগ্রেস জিতলে রাম মন্দিরে তালা ঝুলবে, ক্রিকেট টিমে শুধু মুসলিমরা সুযোগ পাবে, এমনকি দেশে শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠা হবে, এমন দাবি করছে বিজেপির নেতারা।
এ সব মিলিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে ভোটারদের অসন্তোষ ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে। হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে 'মোদি ম্যাজিক।' কংগ্রেস এই সুযোগ যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারে কিনা, এখন সেটুকুই দেখার অপেক্ষা।
মন্তব্য করুন: