প্রকাশিত:
২ জুলাই ২০২৩, ১৫:৪৭
পবিত্র ঈদুল আজহার কয়েক সপ্তাহ হাতে থাকতেই হঠাৎ করে বাড়তে শুরু করে কাঁচা মরিচের দাম। কয়েক দফা বেড়ে ঈদের সময় নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম হয় ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা কেজি।
ঈদের পর দাম সামান্য কমলেও এখনও আসেনি ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে।
বিক্রেতারা বলছেন, প্রায় ১০ মাস ধরে ভারত থেকে আমদানি বন্ধ থাকায় দেশীয় কাঁচা মরিচ দিয়ে চাহিদা মেটানো হচ্ছিল। কিন্তু তীব্র তাপদাহে খরার কারণে এবার কাঁচা মরিচের ফলন কম হয়েছে। তার ওপর গত কিছুদিনের টানা বৃষ্টিতে অনেক মরিচ নষ্ট হয়ে গেছে। অথচ কোরবানির ঈদের সময় মরিচের চাহিদা থাকে অনেক বেশি। সেই তুলনায় পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় মরিচের দাম আকাশচুম্বী হয়েছে। ভারত থেকে মরিচ আমদানি শুরু না হলে এবং আবহাওয়া পরিস্থিতি ভালো না হওয়া পর্যন্ত দাম কমবে না।
রোববার (২ জুলাই) রাজধানীর মহাখালী কাঁচা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, এই বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ মানভেদে ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। তবে প্রায় সব দোকানেই কাঁচা মরিচ তুলনামূলক কম দেখা গেছে। আবার অনেক সবজির দোকানে কাঁচা মরিচই পাওয়া যায়নি। কাঁচা মরিচ কিনতে আসা ক্রেতার সংখ্যাও একেবারেই নগণ্য। যারা আসছেন তারাও ১০০ গ্রামের বেশি মরিচ কিনছেন না।
যাত্রাবাড়ী ও কারওয়ান বাজার থেকে কাঁচা মরিচ কিনে এনে মহাখালী কাঁচা বাজারে বিক্রি করেন মীর হারুন। তিনি বলেন, আজকে ৪০০ টাকা করে মরিচ কিনে এনেছি। এরপর আবার পরিবহন খরচ আছে। তাই ৪৫০ টাকা করে বিক্রি করছি।
দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্ষাকালে এমনিতেই কাঁচা মরিচের দাম একটু বেশি থাকে। তবে এবার অত্যধিক বেড়ে গেছে। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে লাখ লাখ টন কাঁচা মরিচ নষ্ট হয়েছে। তার ওপর কোরবানির পশু পরিবহনের কারণে সবজির গাড়ি ঢাকায় কম এসেছে। তাই সরবরাহ ঘাটতি দেখা দিয়েছে ও দাম বেড়েছে।
কবে নাগাদ দাম কমতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঈদে কাঁচা মরিচের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। তাই এই সময় দাম বেড়েছে। এখন আবার কমতে শুরু করেছে। তবে এবার যেহেতু দেশি মরিচের ফলন কম ও উৎপাদিত মরিচ বেশি নষ্ট হয়েছে, তাই আমদানি ছাড়া দাম নাগালের মধ্যে আসবে না। আর দাম একেবারে কমতে মাস খানেক সময় লাগবে। বর্ষা মৌসুম শেষ হওয়ার আগে এই পণ্যের দাম কমবে বলে মন হয় না।
কাঁচা মরিচের দাম বেশি হওয়ায় এই পণ্যটি বিক্রি করাই বন্ধ রেখেছেন সবজি বিক্রেতা শহীদ উল্লাহ। তিনি বলেন, কাঁচা মরিচের কেজি ৬০০ টাকা। ক্রেতা এসে ১০ টাকার দিতে বলে। ১০ টাকায় কয়টা মরিচ দেওয়া যায়? তার ওপর মরিচের দাম বেশি কেন এই নিয়ে ক্রেতারা আমাদের সঙ্গে ঝগড়া করে। আমরা তো আর দাম বাড়াই না। আমরা যে দামে কিনে আনি সেই দামে বিক্রি করি। তাই মরিচ বিক্রি করাই বন্ধ রেখেছি। দাম কমলে তখন আবার বিক্রি করব। বর্ষাকাল শেষ হওয়ার আগে দাম কমবে না। তবে ভারতীয় মরিচ আসা শুরু হলে তখন আবার কিছুটা কমতে পারে।
একই বাজারে ৬০০ টাকা করে মরিচ বিক্রি করছেন মিরাজ মুন্সী। তিনি বলেন, প্রতি বছর বর্ষার সময় দাম বাড়ে। এটা নতুন কিছু নয়। কাঁচা মালের দাম বাড়বে কমবে। যত আমদানি, তত রপ্তানি হবে। ক্ষেতে মরিচ নাই তাই দাম বাড়ছে। মরিচ থাকলে দাম কমত। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী মরিচ আসছে না। ভারতীয় মরিচ এলে দাম কমবে।
একই কথা বলছেন মো. ওলিউর রহমান। তিনি বলেন, ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি শুরু হলে দাম কমবে। তখন ২৫০-৩০০ টাকা করে বিক্রি করা যাবে। তবে ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে অর্থাৎ ৭০-৮০ টাকার মধ্যে কাঁচা মরিচের দাম আসতে এক মাসের বেশি সময় লাগবে।
এদিকে কাঁচা মরিচের এমন ঝালে দিশেহারা অবস্থার মধ্যে পড়েছেন ক্রেতারা। তারা বলছেন, যে কোনো পণ্যের দাম বাড়লেই বিক্রেতারা ঘাটতির অজুহাত দেখান। আমদানি করলে দাম কমবে বলেন। কয়দিন আগে পেঁয়াজের দাম বাড়ার পর আমদানি শুরু করা হয়েছে। কিন্তু দাম কি আদৌ কমেছে? আসলে এগুলো সব সিন্ডিকেট। সরকারের উচিত সময় থাকতেই আমদানি শুরু করা। যাতে এভাবে সিন্ডিকেট করে ব্যবসায়ীরা দাম না বাড়াতে পারে।
মো. সুমন মিয়া নামের এক ক্রেতা বলেন, দাম বাড়লেও কিছু করার নেই। ২৫০ গ্রামের জায়গায় হয়তো ৫০ গ্রাম কিনব। এ ছাড়া আমাদের তো আর কিছুই করার নেই। এই দেশে সবচেয়ে বেশি অসহায় হচ্ছে ক্রেতারা।
দেলোয়ার হোসেন নামের আরেক ক্রেতা বলেন, সিন্ডিকেট করে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়েছে। নইলে পাশের দেশে ৪০ টাকা কেজি মরিচ বিক্রি হচ্ছে। আর আমাদের দেশে এক হাজার টাকা। সরকার মরিচ আমদানি শুরু করলেই দাম কমবে। এতে সরকারের লাভ, ব্যবসায়ীদের লাভ, ক্রেতাদের লাভ। কিন্তু সেটা করা হয় না। বরং সিন্ডিকেটকে সুযোগ করে দেওয়া হয়। আর ভোগান্তি হয় আমাদের ক্রেতাদের।
দেশের বাজারে কাঁচা মরিচের দাম নিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি শুরু হলে দীর্ঘ ১০ মাস পর ২৬ জুন দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে এই পণ্যটির আমদানি শুরুর অনুমতি দেয় সরকার। ওইদিন পাঁচটি ট্রাকে করে ২৭ হাজার ১৬৬ কেজি কাঁচা মরিচ ভারত থেকে দেশে ঢুকে। কিন্তু এর পরদিন অর্থাৎ ২৭ জুন থেকে ঈদের ছুটি শুরু হওয়ায় আবার আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। এতেই অস্থির হয়ে ওঠে কাঁচা মরিচের বাজার। তবে ঈদের টানা ছয়দিনের বন্ধ শেষে ফের শুরু হয়েছে কাঁচা মরিচের আমদানি। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম কমবে বলে আশা বিক্রেতাদের।
মন্তব্য করুন: