রবিবার, ২৪শে নভেম্বর ২০২৪, ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল daajkaal@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • অক্টোবরে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৭৫ জন নিহত
  • বোয়ালখালীতে আগুনে ৫ বসতঘর পুড়ে ছাই
  • ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি কেলি রদ্রিগেজ
  • প্রথমবার সচিবালয়ে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা
  • এস আলমের ঋণ জালিয়াতি, কেন্দ্রিয় ব্যাংকের ১৩ জনকে তলব
  • সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা
  • ড. ইউনূসের ভিশনের দিকে তাকিয়ে যুক্তরাজ্য: ক্যাথরিন ওয়েস্ট
  • ২০২৫ সালে সরকারি নির্মাণে পোড়া ইট ব্যবহার বন্ধ হবে
  • নাম ও পোশাক বদলাচ্ছে র‌্যাব
  • গণহত্যা মামলায় ৮ পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেফতারের নির্দেশ

ফিরে দেখা

আধুনিক আরব আমিরাতের অন্যতম রূপকার

ডেস্ক রির্পোট

প্রকাশিত:
১৩ মে ২০২৪, ১৮:০৬

খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ান (৭ সেপ্টেম্বর ১৯৪৮-১৩ মে ২০২২) ছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট। তিনি ২০০৪ সালের নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের মে পর্যন্ত আমৃত্যু আবুধাবি শাসন করেছেন। তিনি ছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রথম প্রেসিডেন্ট জায়েদ বিন সুলতান বিন নাহিয়ানের বড় ছেলে। তিনি যুবরাজ হিসেবে আবুধাবির বেশ কিছু দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

১৯৯০-এর দশক থেকে খলিফা বিন জায়েদ ডি ফ্যাক্টো প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। বাবার রুগ্ন স্বাস্থ্যের কারণেই তাঁকে এ দায়িত্ব পালন করতে হয়। ২০০৪ সালের ২ নভেম্বর তিনি আবুধাবির আমির হিসেবে তাঁর বাবার স্থলাভিষিক্ত হন। পরের দিনই ফেডারেল সুপ্রিম কাউন্সিল তাঁকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেন।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট হিসেবে খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ান বিভিন্ন সংস্কারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে গোঁড়ামির ভাবমূর্তি মুছে দেন। তিনি আবুধাবিকে একটি আধুনিক ও সর্বজনীন চরিত্র দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁর শাসনামলে বেশ কয়েকটি সাংস্কৃতিক ও একাডেমিক কেন্দ্র আবুধাবিতে উদার ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে সহায়তা করে। এভাবে তাঁর সময়েই লুভর আবুধাবি, নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি আবুধাবি এবং সোরবোন ইউনিভার্সিটি আবুধাবি তাঁর দেশে আসে। এ ছাড়া তিনি ইতিহাদ এয়ারওয়েজও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা বিশ্বজুড়ে বিলাসবহুল ভ্রমণের প্রতীক হয়ে উঠেছে।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি খলিফা আবুধাবি বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষের (এডিআইএ) চেয়ারম্যানও ছিলেন। এডিআইএ হলো একটি মালিকানা সংস্থা, যা ৮০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের সম্পদ নিয়ে কাজ করে। তাঁর দেশবাসী তাঁকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন এবং তাঁকে একজন আধুনিক মানুষ হিসেবে সম্মান করেন, যিনি দেশের অবস্থার উন্নতির জন্য অনেক কিছু করেছিলেন।

ব্যক্তিগত জীবন
খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ান ১৯৪৮ সালের ৭ সেপ্টেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাতের পূর্বাঞ্চলের আল-আইন এলাকার কাসর আল-মুয়াজ্জি এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। এটি ওমান সীমান্তের কাছে। সে সময় দেশটির ওই এলাকা ট্রুসিক্যাল প্রদেশের অংশ ছিল। তিনি হাফসা বিনতে মোহাম্মদ আল নাহিয়ান ও জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ানের বড় ছেলে। তাঁর প্রপিতামহ শেখ খলিফা বিন শাখবুত আল নাহিয়ানের নামে তাঁর নামকরণ করা হয়।

নথিপত্র অনুযায়ী, তিনি যুক্তরাজ্যের স্যান্ডহার্স্টের রয়্যাল মিলিটারি একাডেমির স্নাতক ছিলেন। তিনি শেখ সামশা বিনতে সুহাইল আল মাজরুয়েকে বিয়ে করেন। তাঁদের আটটি সন্তান রয়েছে। তাঁরা হলেন সুলতান, মোহাম্মদ, শামা, সালামা, ওশা, শেইখা, লতিফা ও মৌজা। শেখ খলিফা সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাতটি শেখ ডোমের মধ্যে সবচেয়ে বড় ও ধনী ছিলেন।

ব্যবসায়িক প্রকাশনা ফোর্বস অনুসারে, তিনি ৯৭ দশমিক ৮ বিলিয়ন ব্যারেল রিজার্ভ (তেল) নিয়ন্ত্রণ করেন এবং ৮৩০ বিলিয়ন ডলারের বৃহত্তম সার্বভৌম সম্পদ তহবিল চালান। শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ান নামটি বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন দুবাইয়ের বুর্জ খলিফা নামের জন্য সবচেয়ে পরিচিত। ২০১০ সালে তাঁর নাম থেকে বুর্জ দুবাই ভবনটির নামকরণ বুর্জ খলিফা রাখা হয়।

রাজনৈতিক জীবন
খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের বাবা জায়েদ বিন সুলতান আল-নাহিয়ান ১৯৬৬ সালে যখন আবুধাবির আমির হন, তখন খলিফা আবুধাবির পূর্বাঞ্চলের শাসকের প্রতিনিধি হয়েছিলেন। তিনি কয়েক বছর এ পদে কাজ করেন। এরপর ১৯৬৯ সালে তিনি যুবরাজ (ক্রাউন প্রিন্স) হিসেবে অভিষিক্ত হন। খলিফা এরপর আবুধাবির প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি আবুধাবির প্রতিরক্ষা বাহিনী তৈরির তদারকির দায়িত্বে ছিলেন।

১৯৭১ সালের পর খলিফার পরিচালিত বাহিনী সংযুক্ত আরব আমিরাতের সেনাবাহিনীর মূল ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়। খলিফার প্রেসিডেন্ট দায়িত্বকালে আব্রাহাম অ্যাকর্ডের অধীন সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে আরব দেশগুলোর পাশাপাশি ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা হয়েছিল।

উপপ্রধানমন্ত্রী
১৯৭১ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রতিষ্ঠার পর খলিফা সরকার ও প্রশাসনের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদ নিজের অধীন রাখেন। তিনি আবুধাবি কেবিনেট বা মন্ত্রিসভার প্রধান ছিলেন। ১৯৭৩ সালে আবুধাবির মন্ত্রিসভা যখন আবুধাবি এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলে (নির্বাহী পরিষদ) রূপ নেয়, তখন তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দ্বিতীয় উপপ্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৭৪ সালে তিনি আবুধাবি এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান হন।

১৯৭৬ সালে খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ান সংযুক্ত আরব আমিরাতের সেনাবাহিনীর ডেপুটি কমান্ডার হন। ১৯৮০-এর দশকে তিনি দেশটির সুপ্রিম পেট্রোলিয়াম কাউন্সিলের প্রধান হন। এটি একটি পদ তাঁকে উল্লেখযোগ্য পরোক্ষ কর্তৃত্ব এনে দেয়। এ ছাড়া তিনি দেশটির পরিবেশ গবেষণা ও বন্য প্রাণী উন্নয়ন সংস্থার প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট
প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় আসার পর খলিফা প্রশাসনে ব্যাপক রদবদল আনেন। তিনি একজন পশ্চিমাপন্থী আধুনিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন, যিনি বুঝতেন যে ভবিষ্যতে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে হলে তাঁর দেশকে বিদেশি পর্যটক আনতে হবে। খলিফা একজন স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে বুঝতে পেরেছিলেন, দেশের তেলসম্পদ দীর্ঘস্থায়ী হবে না এবং তাঁর দেশের আয়ের দ্বিতীয় উৎস প্রয়োজন।

খলিফা একজন দক্ষ কূটনীতিক ছিলেন, যিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিদেশি সাহায্য ও সহায়তা প্রদান করেছিলেন। এভাবে তিনি অনেক দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক দৃঢ় করতে সাহায্য করেছিলেন এবং তাদের সংযুক্ত আরব আমিরাতের মিত্রে পরিণত করেছিলেন।

খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ান মৃত্যুর আগে বেশ কয়েক বছর অসুস্থ ছিলেন। ২০১৪ সালে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। মৃত্যুর আগে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের নাম ঘোষণা করেন।


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর