রবিবার, ২৪শে নভেম্বর ২০২৪, ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল daajkaal@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • আবারও যাত্রাবাড়ী মোড় অবরোধ ব্যাটারি রিকশাচালকদের
  • অক্টোবরে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৭৫ জন নিহত
  • বোয়ালখালীতে আগুনে ৫ বসতঘর পুড়ে ছাই
  • ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি কেলি রদ্রিগেজ
  • প্রথমবার সচিবালয়ে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা
  • এস আলমের ঋণ জালিয়াতি, কেন্দ্রিয় ব্যাংকের ১৩ জনকে তলব
  • সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা
  • ড. ইউনূসের ভিশনের দিকে তাকিয়ে যুক্তরাজ্য: ক্যাথরিন ওয়েস্ট
  • ২০২৫ সালে সরকারি নির্মাণে পোড়া ইট ব্যবহার বন্ধ হবে
  • নাম ও পোশাক বদলাচ্ছে র‌্যাব

বাজার থেকে ডলার উধাও, পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা

ডেস্ক রির্পোট

প্রকাশিত:
১৩ মে ২০২৪, ১৫:৩২

বাজার থেকে হঠাৎ করে উধাও হয়ে গেছে ডলার। আমদানিকারকরা এলসি খুলতে ব্যাংকের কাছে ধরনা দিলেও ডলার পাচ্ছেন না। বাধ্য হয়ে খোলাবাজার থেকে ডলার কিনে দেনা পরিশোধ করছেন কোনো কোনো আমদানিকারক। ডলারের এই সংকট তৈরির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতির দুর্বলতাকে দায়ী করছেন অনেকে।

বাংলাদেশ ব্যাংক গত ৮ মে ডলারের দাম ও ঋণের সুদের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আনে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত পালনের অংশ হিসেবে ডলারের দাম ১১০ টাকা থেকে একলাফে সাত টাকা বাড়িয়ে ১১৭ টাকা করা হয়। এতে সরাসরি প্রভাব পড়েছে ব্যাংক ও খোলাবাজারে। ফলে এলসি খোলার ক্ষেত্রে ১২০ টাকা এবং খোলাবাজারে প্রতি ডলারের দাম ১২৫ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।

ডলারের দাম একলাফে ৬.৩৬ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় জ্বালানি আমদানির খরচ বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা। এতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই চাপ মোকাবেলায় সরকারকে ভিন্ন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, ‘আমদানিতে সরাসরি ডলারের দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে।

এত কিছুর পরও অপ্রয়োজনীয় বিলাসবহুল পণ্য আমদানি বন্ধ করা যাচ্ছে না। কিন্তু ব্যাংকগুলো ডলার সংকটের অজুহাতে প্রয়োজনীয় পণ্যের এলসি খুলছে না। এমনকি রপ্তানিমুখী পণ্যের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রেও ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে আমরা খোলাবাজার থেকে ডলার কিনছি। এ ক্ষেত্রে প্রতি ডলারের দাম পড়ছে ১২৪ টাকা পর্যন্ত।

’তিনি আরো বলেন, ‘আমদানিকারকরা ডলারের বেশি দাম নিয়ে চিন্তা করছেন না, যেকোনো মূল্যে তাঁদের ডলার চাই। অথচ বেশি দাম নিয়েও ডলার দিতে পারছে না ব্যাংকগুলো। বেশি খরচ দিয়ে পণ্য আমদানি করে উৎপাদন করতে চাইলেও তা করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। কারণ ব্যবসায়ীরা ডলার পাচ্ছেন না।’ উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় অপ্রয়োজনীয় বিলাস পণ্য আমদানি পুরোপুরি বন্ধ এবং ডলার ছাড়াও অন্য দেশের সঙ্গে মুদ্রাচুক্তিতে (কারেন্সি সোয়াপ) যাওয়ার পরমর্শ দিয়েছেন এই ব্যবাসী।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি বেসরকারি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান বলেন, ‘ব্যাংকগুলো এলসি খোলার গতি কমিয়ে দিয়েছে। যেসব রপ্তানিকারকের ডলার অ্যাকাউন্টে জমা আছে, বর্তমানে শুধু তাঁরাই আমদানির দায় পরিশোধ করতে পারছেন। এর বাইরে যাঁরা ব্যাংক থেকে ডলার কিনে আমদানি বিল পরিশোধের চিন্তা করছেন, তাঁরা সবাই ফিরে যাচ্ছেন। কারণ বেশির ভাগ ব্যাংকের কাছেই ডলার জমা নেই। আবার যাঁদের কাছে আছে তাঁরা ভবিষ্যৎ আমদানি পেমেন্টের কথা চিন্তা করে ডলার খরচ করছেন না।’

তিনি আরো বলেন, ‘ডলারের দাম বাড়ার কথা শুনে বিদেশ থেকে যাঁরা নিয়মিত রেমিট্যান্স পাঠাতেন তাঁরা সেটা বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে আমরাও রেমিট্যান্সের ডলার দিয়ে আর আমদানির পেমেন্ট করতে পারছি না। প্রবাসীরা ভাবছেন ডলারের দাম আরো বাড়বে। তাই তাঁরা ডলার ধরে রেখেছেন।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বৈদেশিক মুদ্রার ইনফ্লো কমে যাওয়া বাংলাদেশে ডলার সমস্যার প্রধান কারণ। যত দিন ডলার ইনফ্লো না বাড়ছে তত দিন সংকট কাটবে না। ডলারের আউটফ্লো কমাতে আমদানিতে সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু এভাবে কত দিন চলবে? দেশের প্রয়োজনেই একটা সময় এই সীমা তুলে দিতে হবে। কারণ বিদেশ থেকে ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানি না করলে দেশের উৎপাদন ব্যাহত হবে। কমে যাবে কর্মসংস্থান। তার সঙ্গে কমে যাবে জাতীয় প্রবৃদ্ধি। তাই আমদানিতে আরোপ করা এই সীমা একটা সময় উঠিয়ে দিতে হবে।’

রপ্তানি আয় ও টেমিট্যান্স কমে যাওয়ায়ও ডলার সমস্যা তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এই সমস্যা সমাধান করতে হলে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স আয় বৃদ্ধির বিকল্প নেই। রেমিট্যান্সে ২ থেকে ২.৫ শতাংশ প্রণোদনা দিয়ে কোনো কাজ হবে না। এ নিয়ে অন্য পদ্ধতি চিন্তা করতে হবে। যেমন—রপ্তানি বহুমুখীকরণ। আমাদের দেশের রপ্তানি খাত শুধু একটি পণ্যের (তৈরি পোশাক) ওপর নির্ভরশীল। তৈরি পোশাকের মতো অন্যান্য খাতেও প্রণোদনা দিয়ে রপ্তানিতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। পাশাপাশি ইউরোপ ও আমেরিকার বাইরেও রপ্তানি বাজার তৈরি করা জরুরি।’

তিনি বলেন, ‘ডলার সংকট নিরসনের আরেকটি উপায় হলো বিদেশি বিনিয়োগ দেশে আসা। বাজার নিয়ন্ত্রণে ক্রলিং পেগ দিয়ে লাভ না-ও হতে পারে। দেশকে বিনিয়োগবান্ধব করতে পারলে এমনিতেই ডলারের ইনফ্লো বাড়বে।’

বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ক্রলিং পেগ নীতি ঘোষণার পর ডলার ধরে রাখার প্রবণতা বেড়েছে। এ নীতিতে আমি শুধু পেগ দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু ক্রলিং করার তেমন কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। এ রকম চলতে থাকলে বাজার আরো অস্থির হতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতির ওপর খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অনিশ্চয়তা বেড়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্তে শুধু ভিয়েতনামে ক্রলিং পেগ চালু আছে। তাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিদিন সকালে দাম নির্ধারণ করে দেয় এবং তাদের ক্রলিং পেগের ব্যান্ডের হার ৫ শতাংশ। এর বাইরে গেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক হস্তক্ষেপ করে। আমাদের দেশে তো সেটা হচ্ছে না। ক্রলিং পেগের নামে একটা ছোট গণ্ডির মধ্যে আটকে রাখা হয়েছে। এসব দেখে বোঝা মুশকিল, নীতিগুলো কেন এবং কী উদ্দেশ্যে করা হয়েছে।’

এদিকে ডলারের বিনিময়হার নির্ধারণে ‘ক্রলিং পেগ’ চালুর এক কার্যদিবস পরই মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ডলারের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আন্ত ব্যাংক লেনদেনে ডলারের সর্বোচ্চ যে দর উঠবে, তার সঙ্গে এক টাকা যোগ করে এখন থেকে ডলার বিক্রি করতে পারবে মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে ব্যবসায়ীদের ডলার ক্রয়ের দর উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।

গতকাল রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে মানি এক্সচেঞ্জ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের বৈঠকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর