প্রকাশিত:
১২ মে ২০২৪, ১৫:৪৩
নিম্ন আয়ের মানুষকে জিম্মি করে ভারতে কিডনি কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত দালাল চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ধানমন্ডি মডেল থানা পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলো— মো. রাজু হাওলাদার, শাহেদ উদ্দীন ও আতাহার হোসেন বাপ্পী।
আজ রোববার (১২ মে) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) (অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) ড. খ. মহিদ উদ্দিন জানান, শনিবার ধানমন্ডিরতে অভিযান চালিয়ে রাজু হাওলাদার ও শাহেদকে গ্রেফতার করা হয়। আতাহার হোসেনকে বাগেরহাট থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তা জানান, এই চক্রের খপ্পরে পড়ে কিডনি হারানো ভুক্তভোগী মো. রবিন খানের অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় ধানমন্ডি মডেল থানায় একটি মামলা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, ২০২৩ সালে এপ্রিলে মিরপুরে এক বন্ধুর সাথে চা খেতে খেতে সংসারের অভাব অনটন নিয়ে কথাবার্তা বলছিলেন রবিন। পাশে বসা মাছুম তা শুনে রবিনকে বলে, ভারতে তার ব্যবসা আছে এবং রবিনকে তিনি চাকরি দিতে পারবেন। পরে তার সাথে রবিনের ১৫/২০ দিন মোবাইল ফোনে কথা হয়। মাছুম তাকে ভারত নিয়ে যাওয়ার সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দেয়ার প্রস্তুতি দিলে সে রাজি হয়। এমনকি তাকে পাসপোর্ট করতেও সাহায্য করে মাছুম। পরে তাকে ভারতে তার প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য কিছু ডাক্তারি পরীক্ষা করতে হবে বলে ২০২৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকার একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে এই চক্রের আরেক সদস্য অভিযুক্ত মো. রাজু হাওলাদারের সঙ্গে রবিনের পরিচয় হয়। অভিযুক্তরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট সংগ্রহ করে ভারতের ভিসা করানোর জন্য ভিকটিমের পাসপোর্ট রেখে দেয়।
রবিন জানান, তাদের দেয়া বিমানের টিকেট নিয়ে রবিন ২০২৩ সালের ২২ ডিসেম্বর ভারতের নয়া দিল্লিতে যায়। সেখানে এই চক্রের অপর দুই সদস্য অভিযুক্ত শাহীন ও সাগর ওরফে মোস্তফা বিমানবন্দর থেকে রবিনের পাসপোর্ট কেড়ে নেয়। তারা রবিনকে ভারতের ফরিদাবাদ এলাকায় নিয়ে একটি বাসায় ২০/২৫ দিন আটকে রাখে। এর মধ্যে মাছুম বাংলাদেশ থেকে সেখানে যায়। মাছুমকে পেয়ে ভিকটিম তার চাকরির কথা জিজ্ঞাসা করলে সে টালবাহানা করে। মাছুম রবিনকে তার অর্থনৈতিক দুরবস্থার সুযোগ নিয়ে একটি কিডনি দেয়ার জন্য প্ররোচিত করে। পাসপোর্ট ছাড়া সে দেশে ফিরে আসতে পারবে না বলেও ভয়ভীতি দেখায়। এক পর্যায়ে অভিযুক্তরা ভিকটিমকে নয়া দিল্লির এশিয়ান হাসপাতালে নিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা করায়। কিছুদিন পর ভারতের গুজরাটের একটি বাসায় তাকে আটকে রাখে।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার জানান, অভিযুক্তরা রবিনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে কৌশলে ২০২৪ সালের ৪ মার্চ গুজরাট কিডনি অ্যান্ড স্পেশালাইজড হাসপাতালে তাকে একটি কিডনি দিতে বাধ্য করে এবং কিছু কাগজপত্রে স্বাক্ষর নেয়। অপারেশন শেষে ওই হাসপাতাল থেকে ৪ দিন পর তাকে ছাড়পত্র দেয়া হয়। এরপর চক্রটি ভারতের অজ্ঞাত স্থানে ১০/১১ দিন রবিনকে আটক রাখে। হাসপাতালে থাকা অবস্থায় রবিন জানতে পারে যে, অভিযুক্তরা দালাল চক্রের কাছে ৫০ লক্ষ টাকায় তার কিডনিটি বিক্রি করেছে।
তিনি জানান, ভারতে থাকাকালীন অভিযুক্তরা ভিকটিমকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। ভিকটিমকে কিছু টাকা দেয়ার কথাও বলে। বাংলাদেশে অবস্থানকৃত চক্রের অন্য সদস্যরা ভিকটিমের স্ত্রীর বিকাশ নাম্বারে বিভিন্ন সময় মোট তিন লাখ টাকা পাঠায়। তাকে আরো ৩ লাখ টাকা দেয়ার আশ্বাসও দেয়া হয়।পরে দেশে এসে ভিকটিম বুঝতে পারেন, তিনি দালালচক্রের খপ্পরে পড়ে কিডনি হারিয়েছেন।
পুলিশ জানায়, কিডনি হারিয়ে আজ সে একজন কর্মক্ষমতাহীন মানুষ। এই চক্রের মাধ্যমে আরেকজন প্রতারিত হওয়ার কথা রবিন তা জানতে পেরে সে ধানমন্ডি মডেল থানা পুলিশকে সবকিছু জানায়। পুলিশ তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করে।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার জানান, চক্রটি এ ধরনের বেশ কিছু কাজ করেছে এবং কিছু কাজ তাদের হাতে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট বাকিদের ধরতে তাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ ধরনের প্রতারক চক্র থেকে সাধারণ মানুষকে সাবধানে থাকারও পরামর্শ দেন তিনি।
মন্তব্য করুন: