প্রকাশিত:
১১ মে ২০২৪, ১৭:৩৮
প্রতিবছর লোকসান হলেও এবারও আম পরিবহনের জন্য চালু হচ্ছে ‘ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন’। এবার এই ট্রেন চালানো হবে পদ্মা সেতু দিয়ে। ট্রেনটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর থেকে বিকাল ৪টায় ছেড়ে রাত সোয়া ২টায় ঢাকায় পৌঁছাবে। যমুনা সেতুতে ট্রেনের ধীরগতির কারণে শিডিউল বিপর্যয় এড়িয়ে দ্রুত ট্রেনটি ঢাকায় নিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
শনিবার (১১ মে) বেলা ১১টা থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম। এবার পঞ্চমবারের মতো এই ট্রেন চালু হচ্ছে। আগামী ১০ জুন ট্রেনটি যাত্রা শুরু করবে। রাজশাহী বিভাগ থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় আম পরিবহনসংক্রান্ত এক কর্মশালায় এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবছর আম পরিবহনের জন্য এই ট্রেন দেওয়া হলেও চাষি ও ব্যবসায়ীদের উৎসাহ কম থাকার কারণে লোকসানের বিষয়টি কর্মশালায় উঠে আসে। চাষিরা মতামত দেন, মূলত বাগান থেকে আম পরিবহন করে স্টেশনে নেওয়া এবং আবার স্টেশন থেকে আলাদা পরিবহনে মোকামে নেওয়ার বিড়ম্বনার কারণেই এই ট্রেনে চাষি ও ব্যবসায়ীদের উৎসাহ কম। এই সমস্যার সমাধানে অতিরিক্ত স্টপেজ দেওয়াসহ আরও বেশ কিছু পরামর্শ দেন তাঁরা।
রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম বলেন, অসুস্থ মানুষের পাশে কেউ না থাকলে সে বাঁচে না। আমরা (রেলওয়ে) এখন অসুস্থ। চাষি ও ব্যবসায়ীরা আমাদের পাশে থাকেন। আমরা আপনাদের সর্বোচ্চ সুবিধা দিতে চেষ্টা করে যাব।
তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার দিন বলেছিলাম রেল লাভজনক হবে। এ জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী চাষি ও ব্যবসায়ীদের কম খরচে আম পরিবহনের সুবিধা দিতে এই ট্রেন দিয়ে থাকেন।
কর্মশালায় রাজশাহী সদরের এমপি ও রেলওয়ে মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা, নাটোরের এমপি আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার শাহাদত আলী, রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার, বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মো. মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদারসহ রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলার জেলা প্রশাসক, ফল গবেষক, কৃষি কর্মকর্তা, রেলওয়ের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর ও নওগাঁর আমচাষি এবং ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
কর্মশালায় জানানো হয়, ছয়টি লাগেজ ভ্যানের মাধ্যমে আম পরিবহন করা যাবে ২৮ দশমিক ৮৩ টন। যাত্রাপথে রহনপুর স্টেশন থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, আব্দুলপুর, ঈশ্বরদী, পোড়াদহ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও ভাঙ্গা স্টেশনসহ মোট ১৫টি স্টেশনে যাত্রাবিরতি দেবে ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন। এই ট্রেন ঢাকায় পৌঁছাবে রাত ২টা ১৫ মিনিটে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকা পর্যন্ত প্রতি কেজি আম পরিবহনে ভাড়া লাগবে ১ টাকা ৪৭ পয়সা, রাজশাহী থেকে ১ টাকা ৪৩ পয়সা, পোড়াদহ থেকে ১ টাকা ১৯ পয়সা, রাজবাড়ী থেকে ১ টাকা ৭ পয়সা, ফরিদপুর থেকে ১ টাকা ১ পয়সা এবং ভাঙ্গা থেকে ৯৮ পয়সা। এই খরচ কুরিয়ার সার্ভিসের চেয়ে কম। তাই ট্রেনে আম পরিবহনের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
এর আগে ২০২০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনে ৩৯ লাখ ৯৫ হাজার ৭৯৮ কেজি আম পরিবহন করা হয়েছে। ট্রেন ভাড়া পেয়েছে ৪৬ লাখ ২৯ হাজার ১৪০ টাকা। ২০২০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত চার বছরে ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনে ৩ হাজার ৯৯৫ টন আম পরিবহন করা হয়েছে। এ থেকে রেলের আয় হয়েছে ৪৬ লাখ ২৯ হাজার ১৪০ টাকা। গত চার বছরে ট্রেনটি চলাচলে তেল খরচ হয়েছে ৯২ লাখ ৯১ হাজার টাকা। ফলে এই কয়েক বছরে রেলওয়ের লোকসান হয়েছে ৪৬ লাখ ৬১ হাজার ৮৬০ টাকা।
মন্তব্য করুন: