প্রকাশিত:
১১ মে ২০২৪, ১৭:২০
চোটে না পড়লে তিনি ব্রাজিলের কোপা আমেরিকা দলে থাকতেন, তা না বললেও চলে। টুর্নামেন্টটি মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের, সেখানে ব্রাজিল সর্বশেষ শিরোপা জিতেছে পাঁচ বছর আগে এবং সর্বশেষ ২০২১ কোপায় ব্রাজিলের ‘হোম অব ফুটবল’ মারাকানা থেকে ট্রফি নিয়ে গেছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনা।
নেইমার মাঠে থেকেই তা দেখেছেন। স্বাভাবিকভাবেই এবার সেই খেদ মেটাবেন, নেইমারকে ঘিরে তেমনই আশা ছিল ব্রাজিল সমর্থকদের। কিন্তু গতকাল ঘোষিত ব্রাজিলের কোপা আমেরিকা দলে জায়গা হয়নি ৩২ বছর বয়সী ফরোয়ার্ডের।
নেইমার চাইলে ভাগ্যকেও দুষতে পারেন। ২০১৯ কোপা আমেরিকায়ও খেলতে পারেননি চোটের কারণে। টুর্নামেন্টটি শুরুর আগমুহূর্তে অ্যাঙ্কেলে চোট পেয়েছিলেন। ব্রাজিল সেবার ট্রফি জিতলেও নেইমারের নামের পাশে কিন্তু মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের এই শিরোপা নেই। অথচ ব্রাজিলের জার্সিতে তাঁর অভিষেক ২০১০ সালে। ব্রাজিলের হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতাও (১২৯ ম্যাচে ৭৯ গোল) নেইমারই। চাইলে আরেকটু এগিয়ে বলতে পারেন, ব্রাজিল জাতীয় দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ও নেইমার। কিন্তু এবারের কোপার দলের বাইরে থাকার পর খোদ ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যমই প্রশ্ন তুলেছে, নেইমার ব্রাজিল দলে ফিরবেন তো?
প্রশ্নটা শুনে অবাক হতে পারেন। নেহাত গুঞ্জন কিংবা গুজব তৈরির চেষ্টা—এমন মনে করে উড়িয়েও দিতে পারেন। তবে ক্রমাগত চোট, বিশ্বকাপ–ব্যর্থতা এবং ন্যায্য–অন্যায্য সমালোচনায় নেইমার নিজেই কিন্তু এর আগে ধৈর্য হারিয়েছেন। ২০২২ বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ব্রাজিলের বিদায়ের পর বলেছিলেন, ‘জাতীয় দলের দরজা বন্ধ করছি না, তবে ফেরার নিশ্চয়তাও শতভাগ দিচ্ছি না।’
নেইমার কিন্তু তারপর জাতীয় দলে ফিরেছেন। কিন্তু অলক্ষে মুচকি হাসি হেসেছে চোট। গত বছর ১৭ অক্টোবর ২০২৬ বিশ্বকাপের বাছাইয়ে উরুগুয়ের বিপক্ষে ম্যাচে হাঁটুর এসিএল চোটে পড়েন নেইমার। অস্ত্রোপচার করিয়ে আর মাঠে ফিরতে পারেননি।
গত বছর ডিসেম্বরে ব্রাজিল জাতীয় দলের চিকিৎসক রদ্রিগো লাসমার কোপা আমেরিকায় নেইমারের খেলার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে বলেছিলেন, এ বছর আগস্টে মাঠে ফিরতে পারেন তিনি। এর মধ্যে গত ফেব্রুয়ারিতে নেইমার তাঁর ক্লাব আল হিলালে ফিরেও গেছেন, পুরোপুরি ফিটনেসে ফিরতে চেষ্টাও চালাচ্ছেন সেখানে।
তবে ব্রাজিল জাতীয় দলের মেডিকেল টিমের বরাত দিয়ে দেশটির সংবাদমাধ্যম ‘ও গ্লোবো’ গতকাল জানিয়েছে, নেইমারের মাঠে ফিরতে ছয় মাস থেকে এক বছর সময় লাগতে পারে। এ কথার অন্য অর্থ হলো, আল হিলাল তারকা ঠিক কবে মাঠে ফিরতে পারবেন, সেটি এখনো নিশ্চিত নয়।
এ তথ্যের ভিত্তিতে একটি প্রশ্ন উঠতেই পারে—নেইমার এখন ৩২–এ পা রেখেছেন, ফিটনেস ফিরে পাওয়ার লড়াই করছেন। আর যে চোটে পড়বেন না, সেটাও নিশ্চিত নয়। ডান পায়ের অ্যাঙ্কেলে একাধিকবার চোট পেয়েছেন। বাঁ হাঁটুর চোট তাতে সর্বশেষ সংযোজন। অর্থাৎ মাঠে ফেরার পর নেইমারকে আরও বেশি সাবধান থাকতে হবে। এই সাবধানতা নিয়ে দলের জন্য কি নিজেকে শতভাগ নিংড়ে দেওয়া সম্ভব? সেটাও ব্রাজিলের মতো জাতীয় দলে?
ওদিকে নেইমারের অনুপস্থিতিতে আক্রমণভাগ গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে ব্রাজিল। দলে আছেন ভিনিসিয়ুস, রদ্রিগোর মতো দুই উইঙ্গার। উঠে আসছেন এনদ্রিক ও ভিতর রকির মতো সম্ভাবনাময় দুই আক্রমণভাগের খেলোয়াড়। জাতীয় দলে দুজনেরই অভিষেক হয়ে গেছে। রকি কোপার দলে জায়গা না পেলেও কোচ দরিভাল জুনিয়রের বর্তমান দলে তাকালে আরও কয়েক মাস পর নেইমারের জাতীয় দলে ফেরার সম্ভাবনা আরও কঠিন মনে হয়। ব্রাজিল যদি এই দল নিয়েই কোপায় চ্যাম্পিয়ন হয়, তাহলে ব্যাপারটা আরও জোরালো হয়ে উঠবে।
পাল্টা প্রশ্ন হতে পারে, তবে যে বলা হলো ‘চোটে না পড়লে তিনি ব্রাজিল কোপা আমেরিকা দলে থাকতেন’—সেটির কী হবে?
এই প্রশ্নের উত্তর আপনার নিজেরই জানা। দরিভালের বর্তমান দলে ভিনি, রদ্রিগো, রাফিনিয়া, এনদ্রিক, লুকাস পাকেতার মতো খেলোয়াড় থাকলেও নেইমার কিন্তু একজনই। মানে ব্রাজিলিয়ান ফুটবলে কিংবদন্তিদের যে পাইপলাইন, সেখানে পরীক্ষিত ও প্রমাণিত নেইমারই সর্বশেষ সংযোজন। অন্যভাবে বললে, ফিট থাকলে ও ফুটবলে মনোযোগী হলে নেইমার যেকোনো কোচের ‘অটোমেটিক চয়েস’। প্রশ্নটিও ঠিক এখানে। ফিটনেস? ফুটবলে মনোযোগ?
নেইমার ফুটবলে ঠিক কতটা মনোযোগী, এই প্রশ্ন পুরোনো। শৃঙ্খলা ভাঙার অভিযোগও নতুন নয়। চাইলে এ নিয়ে দিস্তার পর দিস্তা লেখা যায়। কিন্তু সেটি কোনো কাজের কথা নয়। কাজের কথা হলো নেইমার চোটে থাকার সময়েই গত ফেব্রুয়ারিতে তাঁকে সতর্ক করেছিলেন ব্রাজিল কোচ দরিভাল, ‘জাতীয় দলে তার যত অর্জন, সেসব বিচারেই (স্কোয়াডে) তার জায়গা আছে। কিন্তু তাকে আত্মবিশ্বাসী, শান্ত, ভারসাম্যপূর্ণ ও মনোযোগী হতে হবে। পুরোপুরি সেরে ওঠার পর সে (দলের) প্রক্রিয়ার অংশ হবে।’
তবে এই দরিভালই গতকাল কোপা আমেরিকার স্কোয়াড ঘোষণার পর নেইমারকে নিয়ে যা বলেছেন, তাতে প্রশ্নটা ঘুরে যেতে পারে। ব্রাজিলের জার্সিতে নেইমার কি আর ফিরবেন—এ প্রশ্ন ঘুরে গিয়ে হতে পারে এমন, ফিরলে কবে ফিরবেন? দরিভালের কথা শুনুন, ‘দলে সবাই যেন নিজেদের দায়িত্বটা পালন করতে পারে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, সবাই নিজেদের সেরা ছন্দে পৌঁছাচ্ছে। সৃষ্টিকর্তা চাইলে অল্প সময়ের মধ্যে আমরা নেইমারের উপস্থিতিও দেখতে পারি।’
দরিভালের কাছে এরপরই জানতে চাওয়া হয়েছিল, তাহলে কোপা আমেরিকা শুরুর আগে নেইমারের দলে ফেরার কোনো সম্ভাবনা আছে কি না? ব্রাজিল কোচ কিন্তু সে সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন, ‘এখনই নয়। এখন সেই সম্ভাবনা নেই। পরিবর্তন হতে পারে। তবে তত্ত্বগতভাবে এই দলটাই কোপা আমেরিকায় খেলবে।’
কোপা আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে ২০ জুন শুরু হয়ে শেষ হবে ১৪ জুলাই। এই টুর্নামেন্টের আগে দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলবে ব্রাজিল। দরিভাল জানিয়েছেন, কোপার এই স্কোয়াডই খেলবে প্রীতি ম্যাচে। অর্থাৎ কোপা শেষ হওয়ার আগে নেইমারের ব্রাজিল দলে ফেরার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। হয়তো তারপর ফিরবেন। কিন্তু সেটি কবে? আগস্টের কথা একবার বলা হয়েছে, সেটাও ঠিক নিশ্চিত নয়।
ব্রাজিল ও নেইমারকে ঘিরে ‘অনিশ্চিত’ শব্দটা তাই বাধ্য হয়েই লিখতে হচ্ছে।
মন্তব্য করুন: