প্রকাশিত:
৮ মে ২০২৪, ১৪:২০
মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে একটি কেন্দ্রের দখল নিয়ে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় দুই পক্ষই এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি করতে অন্তত ৫০টি হাতবোমা ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে আহত হয়েছেন সাধারণ এক ভোটারসহ উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন। আজ বুধবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে উপজেলার ৯৫ নম্বর বালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে এ ঘটনা ঘটে।
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলাউল হাসান দুপুর ১২টার দিকে বলেন, ভোটকেন্দ্রের বাইরে দুই পক্ষের উত্তেজনা থেকে সংঘর্ষের সূত্রপাত। বালিয়া সড়কের দুই প্রান্তে অবস্থান নিয়ে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ, হাতবোমা ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়েছে। এতে কয়েকজন আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে পুলিশ, বিজিবিসহ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
ভোটকেন্দ্রটির প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আল রেজাই রাব্বি বলেন, ‘কেন্দ্রের বাইরে ৫০ থেকে ৬০টি বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। বোমাবাজির পরে ভোটাররা আতঙ্কে আছেন। এ কারণে প্রায় এক ঘণ্টা ভোটার উপস্থিতি কমে যায়। বেলা ১১টা থেকে প্রায় ৪০ মিনিট সংঘর্ষ চলে। বোমাবাজির পরে ভোটার ও আমাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।’ তিনি বলেন, শুরুতে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটলেও এর কিছুক্ষণ পরই বৃষ্টির মতো বোমাবাজি শুরু হয়। তবে কেন্দ্রের ভেতরে কোনো সমস্যা হয়নি বলে জানান প্রিসাইডিং কর্মকর্তা।
বোমা হামলায় আহত ব্যক্তিদের মধ্যে এক স্থানীয় ভোটার আহত হয়েছেন। তাঁর নাম বাদশা হাওলাদার (৬০)। তাঁকে গুরুতর আহত অবস্থায় মাদারীপুরের ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, বেলা ১১টার দিকে ৯৫ নম্বর বালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র দখল নিতে আসেন আনারস প্রতীকের প্রার্থী আসিবুর রহমান খানের অনুসারী এনামুল হাওলাদার ও তাঁর লোকজন। এ সময় মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী পাভেলুর রহমান খানের অনুসারী আজাদ হাওলাদার তাঁদের বাধা দিতে গেলে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এরপরই উভয় পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। তখন ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে একাধিক হাতবোমা ও ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে একজন সাধারণ ভোটারসহ আহত হন উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন।
বালিয়া এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শী শাকিল শেখ বলেন, ‘দুই পক্ষ প্রথমে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু করে। পরে একের পর এক ককটেল ফাটানো হয়। মুহূর্তেই ভোটকেন্দ্রের মানুষজন ভয়ে দূরে সরে যায়। সবাই আমরা খুব আতঙ্কের মধ্যে আছি।’
খবর পেয়ে দুপুর ১২টার দিকে কেন্দ্র পরিদর্শনে আসেন পুলিশ সুপার মাসুদ আলম ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খান। পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, ‘আনারস ও মোটরসাইকেল প্রতীকের দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও বোমাবাজি হয়েছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত। আপাতত কোনো ঝামেলা নেই। ফের সংঘর্ষ এড়াতে এখানে অতিরিক্ত পুলিশ, বিজিবি, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে সকাল আটটায় শুরু হয় ভোট গ্রহণ। মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিনজন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে পাঁচ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত ২৮৩ দশমিক ১৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের সদর উপজেলায় মোট ভোটার ৩ লাখ ২২ হাজার ৪২৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৬৬ হাজার জন। নারী ভোটারের সংখ্যা ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪২১। আর পাঁচজন আছেন অন্যান্য ভোটার। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও রিটার্নিং কর্মকর্তা সদর উপজেলার ১১৭টি ভোটকেন্দ্রের সব কটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছেন।
মন্তব্য করুন: