সোমবার, ২৫শে নভেম্বর ২০২৪, ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল daajkaal@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবসরপ্রাপ্তদের নিয়োগ করা হবে
  • আবারও যাত্রাবাড়ী মোড় অবরোধ ব্যাটারি রিকশাচালকদের
  • অক্টোবরে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৭৫ জন নিহত
  • বোয়ালখালীতে আগুনে ৫ বসতঘর পুড়ে ছাই
  • ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি কেলি রদ্রিগেজ
  • প্রথমবার সচিবালয়ে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা
  • এস আলমের ঋণ জালিয়াতি, কেন্দ্রিয় ব্যাংকের ১৩ জনকে তলব
  • সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা
  • ড. ইউনূসের ভিশনের দিকে তাকিয়ে যুক্তরাজ্য: ক্যাথরিন ওয়েস্ট
  • ২০২৫ সালে সরকারি নির্মাণে পোড়া ইট ব্যবহার বন্ধ হবে

সোনারগাঁয়ে পিটুনিতে নিহতদের লাশ নিতে আসছেন না স্বজনেরা

ডেস্ক রির্পোট

প্রকাশিত:
১৯ মার্চ ২০২৪, ১১:৪৯

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে ডাকাত সন্দেহে পিটুনিতে নিহত চারজনের মধ্যে তিনজনের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা না হলেও লাশের আঙুলের ছাপ নিয়ে তাঁদের পরিচয় শনাক্ত করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

নিহত তিনজনের লাশ নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে এবং একজনের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাখা হয়েছে। ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পার হলেও নিহত ব্যক্তিদের লাশ নিতে আসেননি তাঁদের স্বজনেরা। পুলিশের পক্ষ থেকে স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁরা সাড়া দিচ্ছেন না। পুলিশ বলছে, সোনারগাঁয়ে বাঘরী বড় বিলে পিটুনিতে নিহত ব্যক্তিদের সবাই পেশাদার ডাকাত দলের সদস্য। তাঁদের সবার বিরুদ্ধেই ডাকাতি, অস্ত্রসহ বিভিন্ন ধরনের মামলা আছে।

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, নিহত ব্যক্তিরা হলেন সোনারগাঁয়ের জামপুর ইউনিয়নের শেখেরহাট এলাকার জাকির হোসেন (৩৬), আড়াইহাজার উপজেলার কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের আবদুর রহিম (৪৮) ও একই উপজেলার জালাকান্দী গ্রামের নবী হোসেন (৩৫)। নিহত আরেকজনের পরিচয় জানা যায়নি। আহত ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ আলী (৪৫)। তিনি রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন।

এ সম্পর্কে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খ-সার্কেল) শেখ বিল্লাল হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে জাকির হোসেনের নানাবাড়ি কাঁচপুর ইউনিয়নের সুখেরটেক গ্রামে। ঘটনাস্থল বড় বিল থেকে তাঁর নানাবাড়ি দুই কিলোমিটার দূরে। সেখানেই তিনি বড় হয়েছেন। লাশ উদ্ধারের পর আমরা জাকিরের মামার বাড়ি ও বাবার বাড়িতে লোক পাঠিয়েছি। তাঁর পরিবারের কাউকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। লাশ শনাক্ত করে নিয়ে যাওয়ার জন্য মুঠোফোনে স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। পরে তাঁরা ফোন বন্ধ করে দেন। নিহত বাকি দুজনের বাড়িতেও লোক পাঠানো হয়েছে। কিন্তু আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে নয়টা পর্যন্ত কেউ লাশ নিতে আসেননি।’

এর আগে ১৮ মার্চ  দুপুরে সুখেরটেক গ্রামে জাকির হোসেনের নানার বাড়িতে যান এ প্রতিবেদক। তবে সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি। স্থানীয় লোকজন জানান, জাকিরের নানা ও নানি মারা গেছেন। ওই ঘটনার পর তাঁর মামারা বাড়ি ছেড়েছেন। আর জাকির স্ত্রী–সন্তান নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ভাড়া থাকতেন।

১৭ মার্চ রোববার রাতে সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর ইউনিয়নের বাঘরী এলাকায় ডাকাত সন্দেহে গ্রামবাসীর পিটুনিতে চারজন নিহত ও একজন আহত হন। বন্দর ও সোনারগাঁ উপজেলার তিনটি ইউনিয়নজুড়ে বাঘরী বিলের অবস্থান। উত্তরে সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর ও পূর্বে সাদিপুর এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে বন্দরের মদনপুর ইউনিয়ন। বিলের চারপাশে এই তিন ইউনিয়নের অন্তত ১৫টি গ্রাম রয়েছে।

স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রোববার রাত ১০টার দিকে বিলের মদনপুর অংশের একটি কলেজের সামনে থেকে হাফপ্যান্ট পরা অপরিচিত কয়েকজনকে বিলের দিকে আসতে দেখেন কয়েকজন নারী। তাঁদের ডাকাত বলে সন্দেহ হয়। কারণ, এ এলাকায় বিভিন্ন সময়ে হাফপ্যান্ট পরে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি এলাকার পুরুষদের জানানো হলে তাঁরা বিলের চারপাশের গ্রামগুলোতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন। বিলের চারপাশের বেশ কিছু মসজিদ থেকে তখন ডাকাতের বিষয়ে গ্রামবাসীকে সতর্ক করা হয়। এরপরই শত শত গ্রামবাসী দেশি অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে বিলে নেমে পড়েন।

১৮ মার্চ সোমবার বানিয়া বাড়ির দিলবর আলী বলেন, বিলের আশপাশের গ্রামগুলোতে প্রায় সময় ডাকাতি হয়। গত শুক্রবার দিবাগত রাতেও বিলের পাশে কাজরদী গ্রামের দুটি বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ওই সময় এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে আহত করে ডাকাত দলের সদস্যরা। ডাকাতের উৎপাতের কারণে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে ক্ষোভ ছিল। ২০১৬ সালেও এই বিলে ডাকাত সন্দেহে গ্রামবাসীর পিটুনিতে একজন নিহত হয়েছিল।

বাঘরী গ্রামের বাসিন্দা আমির আলী ও হযরত আলী বলেন, সাধারণত গ্রামবাসী ডাকাতদের ধরে মারধর দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন। কিংবা মামলা হলে পুলিশ ডাকাতদের গ্রেপ্তার করে। কিন্তু ডাকাত দলের সদস্যরা কারাগার থেকে বের হয়ে আবারও ডাকাতি শুরু করে। গ্রামবাসী জানেন যে আইন–আদালত করে ডাকাতদের কিছুই করা যায় না। এ কারণেই তাঁদের মধ্যে পিটুনি দিয়ে হত্যার মতো মানসিকতা তৈরি হয়েছে।

পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নিহত ব্যক্তিদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ থেঁতলে গেছে। শরীরে শাবল, টেঁটাসহ বিভিন্ন ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্নও পাওয়া গেছে। তবে ঘটনাস্থলে কোনো অস্ত্র বা লাঠিসোঁটা পায়নি পুলিশ।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ বিল্লাল হোসাইন বলেন, পিটুনিতে হতাহতের ঘটনা তদন্ত করছে পুলিশ। পুলিশের পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হবে। সোনারগাঁ থানা–পুলিশের পাশাপাশি সিআইডি ও পিবিআই এ ঘটনার ছায়া তদন্ত করছে।

 


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর