মঙ্গলবার, ৮ই অক্টোবর ২০২৪, ২২শে আশ্বিন ১৪৩১ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল daajkaal@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • সেপ্টেম্বরে সড়কে প্রাণ গেল ৪২৬ জনের
  • পূর্বাঞ্চলে বন্যায় ১৪ হাজার ৪২১ কোটি টাকার ক্ষতি: সিপিডি
  • অভিন্ন জলরাশি নীতিমালা না হলে বন্যাঝুঁকি আরও বাড়বে: রিজওয়ানা
  • ব্যাংক নোটে নতুন নকশা, বাদ যেতে পারে বঙ্গবন্ধুর ছবি
  • মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মাল্টিপল ভিসা দেওয়ার আহ্বান ড. ইউনূসের
  • ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতির শোক
  • সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল হবে: আসিফ নজরুল
  • বৈরী আবহাওয়া, উপকূলীয় অঞ্চলে নৌযান চলাচল বন্ধ
  • শহীদ পরিবারের পক্ষে আজ মামলা করবে নাগরিক কমিটি
  • ৪ বন্দরে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত

রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট

প্রকাশিত:
২৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, ১০:৫৭

রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম ও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বর্তমান সরকার জনগণের সরকার। তাই জনগণের কষ্ট লাঘবে সরকার সবসময় সচেষ্ট।

এ জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের মূল্য স্বাভাবিক রাখতে সব প্রকার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে সরকার। এরই মধ্যে আমরা ভোগ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি অনেকাংশে সংযত করতে পেরেছি। তবে বিশ্ববাজারের কয়েকটি পণ্য যেমন-জ্বালানি তেল, ভোজ্যতেল, গম, সারসহ বিভিন্ন খাদ্য ও ভোগ্যপণ্য এবং শিল্পের কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি হওয়ায় আমাদের দেশে আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতির চাপ অনুভূত হচ্ছে। বুধবার জাতীয় সংসদে আলী আজমের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, আগামী রোজায় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত জোগানের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। অন্যতম পণ্য হিসাবে ভারত সরকারের কাছে এক লাখ টন চিনি এবং ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ সরবরাহের জন্য কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, পবিত্র রমজান মাসে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখতে ঢাকা মহানগরীর ২৫টি স্পটে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্রে সুলভ মূল্যে দুধ, মাংস ও ডিম বিক্রির পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

এছাড়া পবিত্র রমজানে আমদানি করা ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, মসুর ডাল ও খেজুর দ্রুত খালাসে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজার নিয়মিত পরিদর্শন করে দ্রব্যমূল্য ও পণ্য মজুত এবং সরবরাহ পরিস্থিতি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। কোনো ধরনের অস্বাভাবিক পরিস্থিতি দেখা গেলে তাৎক্ষণিকভাবে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দৈনিক কৃষিপণ্যের বাজারদর প্রকাশ করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ঢাকা মহানগরীসহ সারাদেশে বাজার মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। দ্রব্যমূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে সারা দেশে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের নেতৃত্বে জেলা-উপজেলায় গঠিত টাস্কফোর্স নিয়মিত সভা করে থাকে। উক্ত টাস্কফোর্স বাজারে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি (রেপো) সুদহার দফায় দফায় বাড়ানো হয়েছে : প্রধানমন্ত্রী বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি (রেপো) সুদহার দফায় দফায় বাড়িয়ে ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে সবশেষ ৮.০০ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। পাশাপাশি, রিভার্স রেপো রেট (এসডিএফ) বৃদ্ধি করে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে।

এছাড়া তুলে দেওয়া হয়েছে ঋণের সুদহারের ঊর্ধ্বসীমা। নীতি সুদহার উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বৃদ্ধি করায় বাজারভিত্তিক গড় সুদ হারে দৃশ্যমান পরিবর্তন এসেছে। আশা করা যায় খুব শিগগির মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসবে। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা আনার লক্ষ্যে ক্রলিং পেগভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় নীতি গ্রহণ করা হচ্ছে। নির্ধারিত করিডোরভিত্তিক এ ব্যবস্থা বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের অস্বাভাবিক উত্থানপতন রোধ করবে বলে আশা করা যায়। ফলে এটি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক হবে।

১৫ বছরে ৯৪৮ কিলোমিটার নতুন রেললাইন নির্মাণ : আনোয়ার হোসেন খানের এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, গত ১৫ বছরে সরকার রেলপথ বিভাগ থেকে মোট ৯৯টি নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এডিপিতে বাংলাদেশ রেলওয়েতে ২৫টি বিনিয়োগ প্রকল্প এবং ৩টি কারিগরি সহায়তা প্রকল্প অর্থাৎ মোট ২৮টি উন্নয়ন প্রকল্প চলমান আছে। এছাড়া রূপকল্প ২০৪১ অর্জনসহ ৩০ বছর মেয়াদি রেলওয়ে মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে রেলওয়ে ডাবল লাইন ট্র্যাক নির্মাণ, গেজ একীভূতকরণ, আধুনিক সিগন্যালিং সিস্টেমের প্রবর্তন, সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে রেল যোগাযোগের উন্নয়ন, আপগ্রেডেড লোকোমোটিভ প্রবর্তন এবং বৈদ্যুতিক ট্র্যাকশন প্রবর্তনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির সঙ্গে মানুষের জীবনমানেরও উন্নয়ন ঘটেছে : নুরুন্নবী চৌধুরীর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ ক্রমাগত এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির সঙ্গে মানুষের জীবনমানেরও উন্নয়ন ঘটেছে। তাই অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি জ্বালানি, প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদাও ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে। ফলে গ্যাস চাহিদার সরবরাহ সামঞ্জস্যপূর্ণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ সময় তিনি জ্বালানি খাতের উন্নয়নে সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তার ফিরিস্তি তুলে ধরেন।

দুর্নীতি দমনে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কথা পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, দুর্নীতির কারণে দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। সোহরাব উদ্দিনের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা আরও বলেন, কেবল আইন প্রয়োগ ও শাস্তির মাধ্যমে দুর্নীতি রোধ সম্ভব নয়। সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলে সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে দুর্নীতি মূলোৎপাটন করা হবে।

বিহারি ক্যাম্পে আবাসিক ফ্ল্যাট : সিদ্দিকুল আলমের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বিহারি ক্যাম্পে বসবাসকারীদের পুনর্বাসনকল্পে ও তাদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য বহুতল আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণের কোনো প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি। স্থানীয় চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তা, সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় উপযোগী প্রতীয়মান হলে সরকারি অর্থায়নে বা অনুদানে পরিকল্পিত বহুতল আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করা যেতে পারে।

কোনো একটি জিনিস না খেলে রোজা হবে না, এ মানসিকতা পালটাতে হবে : বিরোধী দলের চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নুর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো একটি জিনিস না খেলে রোজা হবে না, এ মানসিকতা পালটাতে হবে। তিনি বলেন, মোবাইল কোর্টসহ প্রতিটি এলাকা পরিদর্শন করা হয়, ব্যবস্থা নেওয়া হয়, আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে। তারপরও যদি কেউ এভাবে ইচ্ছাকৃতভাবে দ্রব্যমূল্য বাড়ায়, অবশ্যই তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, রমজান তো হলো কৃচ্ছ্র সাধনের মাস। অনেকের দেখি রমজানের সময় যেন খাওয়াটা একটু বেড়েই যায়। আসলে সেজন্য তো রমজান নয়, রমজান হলো সংযমের মাস, সংযম করতে হবে। এখন বিশেষ কোনো একটা জিনিস না খেলেই রমজান আর হবে না, রোজা রাখা যাবে না বা ইফতার করা যাবে না, এ মানসিকতা বদলাতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে যা পাওয়া যায়, তা দিয়েই কিন্তু রোজা করতে পারি। এটি না খেলে চলছেই না, এ রকম তো কোনো কথা নেই। অন্য সময় মানুষ যেভাবে খায়, সেভাবেই খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তাহলে তো আর একটি জিনিসের জন্য কান্নাকাটি শোনা যাবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা ইদানীং দেখেছেন, প্রতিটি জিনিসের দাম কিন্তু কমেছে। একেবারে কমেনি, তা নয়। কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের দাম যদি বেশি কমে যায়, তাহলে কৃষক পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় না। আবার যদি দাম বেশি বেড়ে যায়, তাহলে যারা নির্দিষ্ট আয়ের লোক, তাদের জন্য কষ্ট হয়, ভোক্তার জন্য কষ্ট হয়।

গুজবে কান দেবেন না : শেখ হাসিনা বলেন, নিত্যপণ্যের মূল্যের বিরুদ্ধে গুজব সৃষ্টির বিষয়ে সবাইকে অনুরোধ করব গুজবে কান দেবেন না। সবাই সচেতন থাকলে আর কান না দিলে গুজব ছড়িয়ে কেউ সমস্যা তৈরি করতে পারবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মোবাইল কোর্টসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। তারপরও যদি ইচ্ছাকৃত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে একটা কথা বলি। রমজান হচ্ছে কৃচ্ছ সাধনের মাস। রমজানে মানুষ যেন কম খাবার গ্রহণ করে, খাদ্য সংরক্ষণ করে। রমজান হচ্ছে সংযমের মাস। সংযম করতে হবে।

তারাবি-সেহরিতে লোডশেডিং থাকবে না : এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি-তারাবির নামাজ ও সেহেরির সময় বিদ্যুতের সমস্যা হবে না। বরং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের সময় যদি প্রয়োজন হয় দিনের কোনো এক সময় যখন চাহিদা কম থাকে তখন দুই-তিন ঘণ্টা লোডশেডিং করা যায়। এতে লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে থাকবে, আর বিদ্যুতে সংকট কিন্তু হবে না। বিশেষ করে তারাবি ও সেহেরির সময় সংকট হবে না।


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর