প্রকাশিত:
২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, ১৬:১৩
পণ্য মজুত করে যারা দাম বাড়ায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাদের গণধোলাই দেওয়া উচিত। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পেছনে সরকার উৎখাতে আন্দোলনকারীদের ভূমিকা থাকতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে মানুষকে খ্যাপিয়ে সরকার উৎখাতের চক্রান্ত এখনো আছে। আসন্ন রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কোনো সংকট হবে না বলে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, রমজানে কোনো কিছুর (অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের) অভাব হবে না। ইতোমধ্যেই সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোনো সমস্যা হবে না।
প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার সকালে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সাম্প্রতিক জার্মানি সফর সম্পর্কে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এসব কথা বলেন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জিতে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠনের পর প্রথমবারের মতো সংবাদ সম্মেলনে এলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জার্মানির মিউনিখে নিরাপত্তা সম্মেলনে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ হয়। সেখানে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা হয়েছে কিনা সে সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা হয়নি। সব আলোচনাই দ্বিপক্ষীয় হয়েছে।
তিনি বলেন, একটি দেশে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করতে ১২-১৩ দিন লাগলেও তাদের ইলেকশন ফ্রি-ফেয়ার। আর বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাত্র ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রেজাল্ট এসে গেল, সেটি ফ্রি-ফেয়ার না। সুতরাং এ রোগের কোনো ওষুধ আমাদের কাছে নেই। শক্তি আমাদের জনগণ, আমি সেটাই বিশ্বাস করি।
প্রধানমন্ত্রীর পাকিস্তানের নামোল্লেখ না করে বলেন, দেশটি এখন তো বোধ হয় একটা সমঝোতায় এসেছে, কে প্রেসিডেন্ট হবে, কে কী হবে। এ রকম যদি আমাদের দেশে হতো, তাহলে বোধ হয় সমালোচনাকারীরা খুশি হতো। তেমন হয়নি বলে অনেকের মন খারাপ। তবে মন খারাপ ভালো হয়ে যাবে।
আগামী ৫ বছরে সরকারের কাজের প্রাধান্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী ৫ বছরে সরকারের প্রধান গুরুত্বই থাকবে আমাদের আর্থ-সামাজিক উন্নতি যেটা হয়েছে সেটা যেন টেকসই হয়। কারণ, যে পর্যায় থেকে আমরা উঠে এসেছি সেটা টেকসই করে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
জার্মানি সফরকে ফলপ্রসূ উল্লেখ করে লিখিত বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিউনিখে আমার এই ফলপ্রসূ সফরের ফলে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের শান্তি, সার্বভৌমত্ব ও সর্বাঙ্গীন নিরাপত্তার প্রতি অঙ্গীকার বলিষ্ঠরূপে প্রতিফলিত হয়েছে। দেশের আকার নয় বরং নীতির শক্তিতেই যে মানবতার রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক মুক্তি, এবারের সম্মেলনে আমি এ বার্তাই বিশ্বের দরবারে তুলে ধরেছি।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য-সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
বাজার কারসাজিতে সরকার উৎখাতের আন্দোলনকারীরা : দ্রব্যমূল্য, অবৈধ মজুতদারি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৫ বছর ধরে যে পরিবর্তন এসেছে, তা তো স্বীকার করবেন। ভাতের জন্য হাহাকার ছিল। একটু নুন-ভাত। একটু ফ্যান চাইত। এখন তা চায় না। ডিম লুকিয়ে রেখে দাম বাড়ানো। আপনার কী মনে হয় না, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে সরকার উৎখাতে আন্দোলনকারীদের কিছু কারসাজি আছে?
শেখ হাসিনা আরও বলেন, এর আগে পেঁয়াজের খুব অভাব। দেখা গেল বস্তার পর বস্তা পচা পেঁয়াজ পানিতে ফেলে দিচ্ছে। এ লোকগুলোকে কী করা উচিত, আপনারাই বলুন কী করা উচিত। তাদের গণধোলাই দেওয়া উচিত। জিনিস লুকিয়ে রেখে পচিয়ে ফেলে দেবে, আর দাম বাড়াবে। মানুষের চাহিদা বৃদ্ধিও দাম বাড়ার একটি কারণ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পেঁয়াজ থেকে শুরু করে খাদ্যপণ্যের উৎপাদন বেড়েছে। আর উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চাহিদাও বেড়েছে।
ষড়যন্ত্র ছিল, ষড়যন্ত্র আছে : নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, দেশে দুর্ভিক্ষ ঘটানোর আশঙ্কা আছে। এ সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ষড়যন্ত্র ছিল, ষড়যন্ত্র আছে। ষড়যন্ত্র বারবার হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন যেন না হয়, সেজন্য বিরাট চক্রান্ত ছিল। ২৮ অক্টোবরের ঘটনা, তার আগের সময়ে অগ্নিসন্ত্রাস। এগুলো হঠাৎ করা নয়, পরিকল্পিত। যারা নির্বাচন বানচালের পক্ষে, তারা যখন নির্বাচন কিছুতেই আটকাতে পারবে না বলে মনে করল, তখন চক্রান্ত হলো জিনিসপত্রের দাম বাড়াবে। জনগণ তখন ক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলন করে সরকার উৎখাত করবে। এই চক্রান্ত আছে।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলের অভাব : দেশের রাজনৈতিক দলগুলো সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলের অভাব। আমাদের প্রতিপক্ষ যারা আছে, তাদের মধ্যে একটি হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলামী। তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল। জিয়াউর রহমান সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করে তাদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দেয়।
রমজানে নিত্যপণ্যের সংকট হবে না : রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, রমজানে কোনো কিছুর (অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের) অভাব হবে না। ছোলা, খেজুর, চিনিসহ পর্যাপ্ত পরিমাণ পণ্য আমদানির ব্যবস্থা রয়েছে। সুতরাং, এটি নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না, কারণ আমরা অনেক আগেই এর জন্য ব্যবস্থা করেছি।
টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই প্রসঙ্গ : ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসাবে টাঙ্গাইল শাড়ির নিবন্ধন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি টানা কিছুদিন টাঙ্গাইল শাড়িই পরেছেন। কারণ, এটা বাংলাদেশেরই শাড়ি। তিনি জানান, সংবাদ সম্মেলনে তার নিজের পরনে যে শাড়িটি ছিল, সেটি ফ্রেঞ্চ শিফন (খালেদা জিয়ার বহুল ব্যবহৃত দামি শাড়ি) নয়, সেটির তিনি নাম দিয়েছেন শফিপুর শিফন, যা আনসার-ভিডিপির সদস্যদের হাতে তৈরি।
ট্রাফিক লাইট-পদ্ধতি সচল করার নির্দেশ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সড়কে আগের মতো চাপ নেই। তাই সড়কে যেন গাড়িগুলো চলমান থাকে, এজন্য ট্রাফিক লাইট পদ্ধতি সচল করতে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হওয়াতে যানজট অনেকটা সহনশীল হয়েছে। কিছু এলাকায় এখনো আছে। এক্সপ্রেসওয়ে পুরোটা হয়ে গেলে আরও কম আসবে। এ ছাড়া পুরো ঢাকায় আরও পাঁচটি মেট্রোরেল হবে।
তিনি বলেন, গতকাল আইজিপির (পুলিশের মহাপরিদর্শক) সঙ্গে কথা বলেছি, এখন ট্রাফিক লাইট সচল করে দিয়ে একটা শৃঙ্খলার মধ্যে আনার জন্য। যেহেতু এখন আগের মতো অতিরিক্ত চাপ নেই।
জেলেনস্কিকে যুদ্ধ বন্ধের কথা বলেছি, পুতিনকে পেলেও বলব : ইউক্রেন ও ফিলিস্তিনের ঘটনাপ্রবাহে ক্ষমতাশালী দেশগুলোর দ্বিমুখী নীতির সমালোচনা করে আবারও যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, আমি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে সরাসরি জিজ্ঞেস করি যে, যুদ্ধটা কীভাবে বন্ধ করা যায় সেটা আমাকে বলেন। আমার সোজা প্রশ্ন ছিল, যুদ্ধ কীভাবে বন্ধ করা যায়, এটাতে তো সবাই কষ্ট পাচ্ছে; মহিলা, শিশু, যুব সমাজ কত জীবন দিচ্ছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের (ভ্লাদিমির পুতিন) সঙ্গে দেখা হলেও সেই একই কথাই আমি বলব যে, আমি যুদ্ধ চাই না, আপনি যুদ্ধ বন্ধ করেন। আমি আমার কথা বলে যাব, তারপর কেউ বুঝলে বুঝুক, আমার কিছু আসে যায় না।
মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চলছে : মিয়ানমারের ব্যাপারে প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আগেই বলেছি ধৈর্য ধরে এগোনো এবং তাদের সঙ্গে আলোচনাও করছি। দেখা যাক কি হয়।
মন্তব্য করুন: