প্রকাশিত:
২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, ১৩:৪৯
রাজধানীর মালিবাগে একটি বেসরকারি হাসপাতালে খতনা করার সময় চিকিৎসকের অবহেলায় এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় করা মামলায় দুই চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
২0 ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার জে এস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেল চেকআপ সেন্টারে (জে এস হাসপাতাল) শিশুমৃত্যুর ঘটনাটি ঘটে।
মারা যাওয়া শিশুর নাম আহনাফ তাহমিদ (১০)। বাবার নাম ফখরুল আলম। শিশুটি মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত।
তাহমিদের মৃত্যুর ঘটনায় গতকাল রাতেই দুই চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁরা হলেন মোক্তাদির হোসেন ও মাহবুব হোসেন।
পুলিশের তথ্যমতে, মোক্তাদির জে এস হাসপাতালের মালিক। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অর্থোপেডিক সার্জন। মাহবুব একই হাসপাতালের অবেদনবিদ্যা (অ্যানেসথেসিওলজি) বিভাগের চিকিৎসক।
আজ বুধবার সকালে হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আওলাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, শিশুটির বাবা গতকাল রাতে একটি মামলা করেন। চিকিৎসকের অবহেলায় তাঁর সন্তানের মৃত্যুর অভিযোগ করেছেন তিনি। হাতিরঝিল থানায় করা এ মামলায় হাসপাতালটির মালিক মোক্তাদির, অবেদনবিদ মাহবুব ও অস্ত্রোপচারবিশেষজ্ঞ ইশতিয়াক আজাদকে আসামি করা হয়েছে। মোক্তাদির ও মাহবুবকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার পর ইশতিয়াক পালিয়ে গেছেন। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক বলে জানা গেছে।
ঘটনার বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিংবা তিন আসামির কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
স্বজন ও পুলিশ সূত্র বলছে, গতকাল রাত সাড়ে সাতটার দিকে ফখরুল ও তাঁর স্ত্রী খায়রুন নাহার তাঁদের বড় সন্তান তাহমিদকে খতনা করাতে জে এস হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসকেরা শিশুটিকে অস্ত্রোপচার কক্ষে নিয়ে অবেদন (অ্যানেসথেসিয়া) করে তার খতনা করেন। কিন্তু শিশুটির আর জ্ঞান ফিরে আসেনি। রাত ১১টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।
শিশু তাহমিদের বাবা ফখরুল আবাসন নির্মাণ ব্যবসায়ী। তিনি পরিবার নিয়ে খিলগাঁও রেলগেট-সংলগ্ন একটি বাড়িতে থাকেন। দুই ভাইয়ের মধ্যে তাহমিদ বড় ছিল। ফখরুল বলেন, আগে তিনি সপরিবার ডেনমার্কে থাকতেন। সেখানে তাঁর বড় ছেলে তাহমিদের জন্ম হয়। পরে তিনি পরিবার নিয়ে দেশে ফিরে আসেন। ছেলেকে হারিয়ে এখন তাঁরা পাগলপ্রায়।
ফখরুল কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার সুস্থ সন্তানকে মেরে ফেলা হলো। আমি চিকিৎসক মোক্তাদির ও ইশতিয়াককে পা ধরে বলেছি, ছেলেকে পূর্ণ অ্যানেসথেসিয়া দিয়েন না। কিন্তু তাঁরা আমার কথা শোনেননি। আমার সোনার টুকরা ছেলেটাকে তাঁরা শেষ করে দিল।’
ফখরুল আরও বলেন, ‘আমি চাই, এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হোক। দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক, যাতে এই ধরনের ঘটনা আর না ঘটে।’
গত মাসে রাজধানীর বাড্ডার সাতারকুলের ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খতনার পর পাঁচ বছর বয়সী শিশু আয়ানের মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটনে গতকাল নতুন করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। কমিটিকে ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
মন্তব্য করুন: