প্রকাশিত:
৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, ১৬:৩৭
ভারতীয় হিন্দি সিনেমার গান। সাগরতীরে পায়ে-পায়ে ছুটছেন নায়িকা। ‘তানহা তানহা ইনহা পে জিনা...।’ নব্বইয়ের দশকে এই জনপ্রিয় গানে বুঁদ হননি, এমন বলিউড দর্শক পাওয়া কঠিন হবে। তখন ‘রঙ্গিলা’ নায়িকার প্রেমে হাবুডুবু খেত একটা প্রজন্ম। নব্বইয়ের সেই জনপ্রিয় নায়িকা ঊর্মিলা মাতন্ডকারের জন্মদিন আজ ৪ ফেব্রুয়ারি।মাত্র ৬ বছর বয়সে অভিনয়ে হাতেখড়ি হয় ঊর্মিলার। ১৯৭৭ সালে ‘করম’ ছবিতে শিশুশিল্পী হিসেবে বড় পর্দায় পা রাখেন ঊর্মিলা। তারপর শিশুশিল্পী হিসেবে ‘কলিযুগ’, ‘মাসুম’সহ একাধিক ছবিতে কাজ করেন তিনি।
লাস্যময়ী ঊর্মিলাকে জহুরির চোখে চিনেছিলেন রামগোপাল বর্মা। আমির খান ও জ্যাকি শ্রফের সঙ্গে ‘রঙ্গিলা’ সিনেমা তাঁকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে দেয়নি। ‘জুদাই’, ‘সত্য’, ‘কউন’, ‘পিঞ্জর’, ‘পেয়ার তুনে কেয়া কিয়া’—একের পর এক হিট ছবিতে লাস্যের পাশাপাশি অভিনয়েও নজর কেড়েছিলেন তৎকালীন বলিউডের অন্যতম ব্যস্ত এই অভিনেত্রী। কাজ করেছেন একাধিক মারাঠি, তেলেগু ও তামিল ছবিতে। ২০০৩ সালে চন্দ্রপ্রকাশ দ্বিবেদির ‘পিঞ্জর’ ছবিতে মনোজ বাজপেয়ির বিপরীতে অসাধারণ অভিনয়দক্ষতার ছাপ রাখেন ঊর্মিলা।
‘রঙ্গিলা’ ছবিতে ঊর্মিলা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে পরিচালক রামগোপাল ভার্মা লিখেছেন, ‘আমার “রঙ্গিলা” বানানোর প্রাথমিক উদ্দেশ্যই ছিল ক্যামেরায় ঊর্মিলার সৌন্দর্যকে চিরকালের জন্য ধরে রাখা।’
সেই ব্যস্ত ও লাস্যময়ী অভিনেত্রী ধীরে ধীরে যেন হারিয়ে গেলেন বলিউড থেকে। বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই হয়তো হুট করে তাঁকে চিনবেন না, তাঁর প্রজন্মের অনেক দর্শক হয়তো ভুলে গিয়েছেন নামটাও। শুধু পর্দায় নয়, বলিউডপাড়ার যেকোনো অনুষ্ঠানে তারকাদের ভিড়ে তাঁকে চোখে পড়ে না সচরাচর। কেমন আছেন ঊর্মিলা?
মাঝেমধ্যে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে ঊর্মিলার খবর পাওয়া যায়। জন্মদিন বা বিশেষ কোনো দিনে খবরের শিরোনাম হন। তবে যতটা বিনোদনজগতের তারকা, তার চেয়ে বেশি হয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে। হারানো জনপ্রিয়তা বা পরিচিতি, ফেলে আসা দিন নিয়ে তবু খেদ নেই এই অভিনেত্রীর। কারণ, তারকা নয়, একজন ভালো অভিনেত্রী হতে চেয়েছিলেন ঊর্মিলা।
এক সাক্ষাৎকারে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘আমি প্রতিযোগিতায় নামিনি। তারকা হতে চাইনি। যেটুকু কাজ করেছি, তাতেই পূর্ণতার স্বাদ পাই। পেশাদার জীবন নিয়ে আমি খুশি আছি।’ জানা গেছে, আর দশজন তারকার মতো তিনি নিজের ব্যবস্থাপক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা নিয়োগ দেননি।
তাঁর ভাষ্য, ‘নিজেকে কর্মঠ রাখতে চাই আজীবন। ফেলে আসার ক্যারিয়ার নিয়ে আমার কোনো কষ্ট নেই, কোনো দিন হয়ও না। কেনইবা হবে? আমি যখন ভালো কাজ খুঁজছি, অন্যরা তখন পত্রিকার প্রচ্ছদ হতে ব্যস্ত। আমি অনেক রকম কাজ করতে পারায় ইচ্ছেমতো প্রস্তাব নাকচ করেছি।’
ঊর্মিলার দাবি, সব সময় নিজের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেছেন তিনি। নিজেকে বারবার ভেঙেছেন এবং গড়েছেন। তিনি বলেন, ‘যখন আমার সময়ের সহশিল্পীরা আমার “রঙ্গিলা” লুক নকল করতে ব্যস্ত, আমি তখন এগিয়ে গিয়েছি “জুদাই” নিয়ে। বিভিন্ন চরিত্রের মধ্যে আমি কেবল নিজের সেরাটুকু ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছি।’
তবে একটা আফসোস ঊর্মিলার রয়ে গেছে; নিজেই জানিয়েছেন সে কথা। বলিউডের ‘বাদশাহ’র সঙ্গে খুব বেশি কাজ করা হয়নি! বলিউডে ক্যারিয়ারের শুরুতে শাহরুখের সঙ্গে ‘চমৎকার’ ছাড়া আর কাজ করা হয়নি ঊর্মিলার।
এক সাক্ষাৎকারে ঊর্মিলা জানান, শাহরুখের সঙ্গে সেভাবে ছবি করতে না পারার আক্ষেপ তাঁর আজও রয়েছে! শুধু শাহরুখ নন, সুপারহিট ‘রঙ্গিলা’ বাদে আমিরের সঙ্গে তেমন কাজ করেননি। ‘জানম সামঝা করো’ ছাড়া সেভাবে কাজের সুযোগ হয়নি সালমানের সঙ্গেও!
২০১৬ সালের ৩ মার্চ কাশ্মীরের ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে মোহসিন আখতার মিরকে বিয়ে করেন। পারিবারিকভাবেই তাঁদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে তাঁরা স্থায়ীভাবে মুম্বাইয়ে আছেন। মোহসিন তাঁর থেকে ৯ বছরের ছোট। ২০১৪ সালের পর বলিউড থেকে অদৃশ্যই হয়ে যান লাস্যময়ী অভিনেত্রী। পরে যোগ দেন রাজনীতিতে। এ পদক্ষেপ সম্পর্কে তিনি জানান, সমাজকে কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার ছিল, তাই এসেছেন।
ঊর্মিলার ভাষ্য, ‘বিনোদন হলো মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করার সবচেয়ে ভালো পথ। এখানে আমি নিরাপদ বোধ করি। তবে যে কথাগুলো আমি সমাজবোধ থেকে মানুষকে বলতে চাই, যা কিছু ফিরিয়ে দিতে চাই, সেসবের জন্য রাজনীতিকে বেছে নিলাম।’ ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে উত্তর মুম্বাই থেকে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছিলেন ঊর্মিলা।
মন্তব্য করুন: