বৃহঃস্পতিবার, ২৪শে এপ্রিল ২০২৫, ১১ই বৈশাখ ১৪৩২ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল daajkaal@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা
  • তিউনিসিয়ায় আটকে পড়েছেন ৩২ বাংলাদেশি
  • বিপ্লব ব্যাহত হতে পারে এনসিপির দায়িত্ব-জ্ঞানহীন কর্মকাণ্ডের কারণে
  • গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৩২ ফিলিস্তিনি নিহত
  • নারায়ণগঞ্জে জুটের গোডাউনে আগুন
  • ৮ মাসে সরকারের চমক, অনন্য উচ্চতায় দেশের অর্থনীতি
  • প্রেমিকাকে খুশি করতেই পারভেজকে হত্যা করে প্রেমিক
  • সংসদ ভবনে পালিয়ে ছিলেন শিরীন শারমিন-পলকসহ ১২ জন
  • হাসিনা কোথাও যান নি, তিনি আমাদের ভেতর বাস করছেন
  • ৩৬ দিনে কোন বিপ্লব বা অভ্যুত্থান হয় না

শিশুদের জন্য শীত ভয়ংকর

ডেস্ক রির্পোট

প্রকাশিত:
১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, ১১:১২

বরিশাল বিভাগে এবার ঘন কুয়াশার সঙ্গে তীব্র শীত পড়েছে। কনকনে ঠান্ডা ও হিমেল বাতাসে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। শীতের অনুভূতি বেশি হওয়ায় বিভাগের বিভিন্ন জেলায় ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে। বয়স্ক ও শিশুরা নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত জানুয়ারির ৩০ দিনে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছাড়া বিভাগের ছয় জেলা সদর ও ৪২ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শুধু নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে এসেছে ৫ হাজার ১৪৪ রোগী। এই সময়ে ঠান্ডাজনিত রোগে মারা গেছে ৪ জন রোগী।

বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রশাসন সূত্র জানায়, এই হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ২৫ দিনে (১ থেকে ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত) ১১৫ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এর অধিকাংশই মারা গেছে শীতজনিত নানা রোগে। এই ২৫ দিনে নানা রোগে আক্রান্ত ৫ হাজার ২৮৫টি শিশু এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৫১ শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।


শিশু ওয়ার্ডের কর্তব্যরত নার্সরা জানান, জানুয়ারিতে এই ওয়ার্ডে যে শিশুরা ভর্তি হয়েছে, তাদের অধিকাংশ ঠান্ডাজনিত রোগে (নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, ব্রঙ্কিওলাইটিস, অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট, শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগ) আক্রান্ত ভর্তি করা হয়েছে। এই সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি।

২৮ জানুয়ারি রোববার দুপুরে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ড ও শিশু ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালে এত রোগীর চাপ যে শয্যায় জায়গা না পেয়ে অনেক রোগীকে মেঝেতে রেখেও চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।

ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্তের চিত্র ■ বিভাগের ৪৮ হাসপাতালে ৫ হাজার ১৪৪ রোগী ভর্তি হয়েছে। ■ শুধু শের-ই-বাংলা হাসপাতালে শতাধিক শিশু মারা গেছে। ■ পুরো বিভাগে শীতজনিত রোগে মারা গেছে চারজন।
শিশু ওয়ার্ডে কথা হয় গৃহবধূ সুরমা আক্তারের সঙ্গে। আট দিন ধরে তাঁর তিন বছর বয়সী মেয়ে তাবাসসুম জ্বরে আক্রান্ত। প্রথমে বাড়িতে চিকিৎসা দিলেও কিছু্তেই জ্বর কমছিল না। কয়েক দিন আগে তাই এই হাসপাতালে আসেন। শয্যা না পেয়ে মেঝেতে রেখে মেয়ের চিকিৎসা করাচ্ছেন।

সুরমা বলেন, ‘বাচ্চাটা এত দিনের জ্বরে কাহিল হয়ে গেছে। ঘাড় তুলতে পারছে না। চিকিৎসকেরা বলেছেন, নিউমোনিয়া। এখন প্রতিদিন ইনজেকশন ও অন্যান্য ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা চলছে। শয্যা পাচ্ছি না। এত ঠান্ডা যে রাতে টেকা যায় না। কিন্তু উপায় নেই। জানি না, কবে সন্তানকে সুস্থ করে বাড়িতে ফিরতে পারব।’


বরিশাল নগরের বাসিন্দা নাসরিন আক্তারের আট বছর বয়সী ছেলে সিয়ামও সাত দিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত। চার দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। শয্যা না পেয়ে ঠাঁই হয়েছে মেঝেতে। অনেক দিন ধরে জ্বরে অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে নাসরিনের চোখে-মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ। তিনি বললেন, ‘মেঝেতে থাকতে অনেক কষ্ট হয়, তবু ছেলেটাকে সুস্থ করতে যত কষ্ট হোক, থাকবেন। ছেলের নিউমোনিয়া হয়েছে, আগে বুঝতে পারেননি। প্রথমে স্থানীয় চিকিৎসকদের দিয়ে চিকিৎসা করিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন সাধারণ জ্বর। কিন্তু হাসপাতালে দুই দফায় পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়েছেন, ছেলের নিউমোনিয়া। এখন চিকিৎসা চলছে। তবে ওষুধ কিনছেন বাইরে থেকে।

বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এবার জানুয়ারির শুরু থেকেই ধারাবাহিকভাবে কমেছে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা দীর্ঘ সময় কম থাকার ঘটনা এবারই প্রথম। আর কখনো এমন দেখা যায়নি। ২৮ জানুয়ারি বরিশালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

বরিশাল আবহাওয়া বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, এবার শীত মৌসুমের ডিসেম্বর থেকেই এ অঞ্চলের তাপমাত্রা ওঠানামার বিষয়টি ছিল লক্ষণীয়। শীতের খেয়ালি আচরণে বেশি প্রভাব পড়ে জনস্বাস্থ্যে।

ধুলাকণাযুক্ত এই কুয়াশা শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে শরীরে ঢুকলে নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। এই বিষয়ে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, আগের চেয়ে বেশি মানুষ ফুসফুসের সমস্যা ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে আসছেন। কুয়াশায় মিশে থাকা ধুলাকণা এসব রোগীর শ্বাসযন্ত্রে ঢুকলে জটিলতা আরও বাড়তে পারে।এ জন্য কুয়াশার মধ্যে বাইরে বের হলে অবশ্যই মাস্ক পরে বের হওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি শিশুদের ক্ষেত্রে একটু বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। শীতের কাপড় পরানোর পাশাপাশি শিশুদেরও মাস্ক পরাতে হবে।

 


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর