প্রকাশিত:
২৩ জানুয়ারী ২০২৪, ১৪:৪৩
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের ছয় নেতা। তাদের মধ্যে তিনজন মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিতও হয়েছেন। কিন্তু বেকায়দায় পড়েছেন মনোনয়নবঞ্চিত অন্য তিনজন। কারণ আসন্ন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচনেও তারা দল থেকে মনোনয়ন পাবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, পদত্যাগকারী ছয় উপজেলা চেয়ারম্যানের মধ্যে চট্টগ্রাম-০৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে এস এম আল মামুন, চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী ও চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া) আসনে এম এ মোতালেব সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। তবে দলীয় মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হন ফটিকছড়ির সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম আবু তৈয়ব, চন্দনাইশের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার ও বাঁশখালীর সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান চৌধুরী মোহাম্মদ গালিব।
মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হয়ে বাঁশখালীর আওয়ামী লীগ নেতা চৌধুরী মোহাম্মদ গালিব নির্বাচন থেকে বিরত থাকেন। তবে অন্য দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে পরাজিত হন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই তিন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানের সঙ্গেই এখন তাদের নির্বাচনী আসনে নির্বাচিত এমপিদের সঙ্গে দূরত্ব দেখা দিয়েছে।
পদত্যাগকারী তিন উপজেলা চেয়ারম্যানের একজন ফটিকছড়ির এস এম আবু তৈয়ব। চট্টগ্রাম-০২ (ফটিকছড়ি) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে তিনি পরাজিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী খাদিজাতুল আনোয়ার সনির কাছে। তবে নির্বাচনে হেরেও নিজেকে ‘দুর্বল’ ভাবছেন না এই সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে হারজিত থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ীই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী হয়েছিলাম। এখানে ভোটে না জিতলেও নিজেকে দুর্বল ভাবার কিছু নেই।’
পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কিনাÑ জানতে চাইলে আবু তৈয়ব বলেন, ‘এমপি পদে তো কেবলই নির্বাচন করলাম। তাই ফটিকছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান পদে আর নির্বাচনের ইচ্ছে নেই। তবে দল চাইলে পরবর্তী সময়ে সবকিছু বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।’
অন্যদিকে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ-আংশিক সাতকানিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নজরুল ইসলামের কাছে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পরাজিত হয়েছেন চন্দনাইশের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার।
এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেননি আবদুল জব্বার
এমপি নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর আসন্ন উপজেলা চেয়ারম্যান পদে দাঁড়ানোর বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেননি বলে জানিয়েছেন আবদুল জব্বার। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে চন্দনাইশ উপজেলার মানুষের জন্য কাজ করছি। এলাকার মানুষের চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। হারজিত থাকবে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল হোক; এরপর সিদ্ধান্ত নেব যে অংশ নেব কি নেব না।’
তফসিল বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন চৌধুরী গালিব
চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর প্রার্থিতা নির্বাচন চলাকালে শেষ সময়ে এসে আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে বাতিল হয়। আসনটিতে ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল্লাহ কবির লিটনকে হারিয়ে সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হন ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুজিবুর রহমান সিআইপি। এ আসনে এমপি পদে নির্বাচন করার জন্য বাঁশখালী উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী মোহাম্মদ গালিব। তবে নৌকার মনোনয়ন না পেয়ে তিনি নির্বাচনে অংশ নেননি।
এখন আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হবেন কি না- জানতে চাইলে চৌধুরী মোহাম্মদ গালিব বলেন, ‘আমি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। সাড়ে চার বছরের মতো উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছি। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ওপেন করে দিয়েছিলেন। তাই এমপি হতে উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলাম। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল হোক। এরপর সিদ্ধান্ত নেব নির্বাচন করব কি করব না।’ তিনি বলেন, ‘তা ছাড়া এবার নৌকা প্রতীক থাকবে কি না, তাও এখনও চূড়ান্ত নয়। তাই তফসিল বিবেচনা করে প্রার্থী হব।’
প্রার্থী হওয়ার লক্ষ্যে বাঁশখালীর নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান সিআইপির সঙ্গে কোনো আলোচনা হবে কি না, জানতে চাইলে চৌধুরী মোহাম্মদ গালিব বলেন, ‘সব সিদ্ধান্তের মালিক আমাদের প্রধানমন্ত্রী। তা ছাড়া মুজিব চাচাকে (নতুন এমপি) এখনও আমি বুঝে উঠতে পারিনি।’
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামসহ সারা দেশের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল চলতি মাসের শেষ দিকে ঘোষণা করতে কাজ করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আইন অনুযায়ী উপজেলা পরিষদের মেয়াদ হচ্ছে প্রথম সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর। মেয়াদপূর্তির আগের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে অনুযায়ী এরই মধ্যে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে। প্রথম ধাপেই নির্বাচনের সম্ভাবনা রয়েছে পদত্যাগের কারণে নির্বাচিত চেয়ারম্যানশূন্য ছয়টি উপজেলা পরিষদে।
মন্তব্য করুন: