প্রকাশিত:
২৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:১৯
১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা সরকারের ভুলত্রুটির দায় নিজেদের কাঁধে নিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘সরকার পরিচালনার বিশাল কর্মযজ্ঞে আমাদের কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি হওয়া স্বাভাবিক। আর সরকার পরিচালনায় যা কিছু ভুলত্রুটি, তার দায়ভার আমাদের। সাফল্যের কৃতিত্ব আপনাদের।
আমাদের ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কথা দিচ্ছি, অতীতের ভুলভ্রান্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে আপনাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী ভবিষ্যৎ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করব। এ ছাড়া আপনাদের রায় নিয়ে ত্রুটি-বিচ্যুতি সংশোধন করে জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করতে চাই।’
২৭ ডিসেম্বর রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আওয়ামী লীগের ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠানে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
তিনি অনুষ্ঠানস্থলে আসার পর সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপর ইশতেহার প্রণয়নের নানা দিক তুলে ধরেন নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। এরপর বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। একটি অডিও-ভিডিও উপস্থাপনার পর ইশতেহার ঘোষণা করতে আসেন প্রধানমন্ত্রী।
সকাল ১১টা ২০ মিনিটে শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্যের শুরুতে বলেন, অতীতের ধারাবাহিকতায় এবারও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে একটি ‘বাস্তবায়নযোগ্য’ নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করেছে তাঁর দল। তিনি বলেন, ‘আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা থাকা সত্ত্বেও সরকার পরিচালনা করতে গিয়ে সব সময়ই যে আমরা শতভাগ সফল হয়েছি, এমন দাবি করব না। তবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কথামালার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়। আমরা যা বলি তা বাস্তবায়ন করি। ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন তার প্রমাণ।
আরো একবার সুযোগ দিন
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের প্রার্থনা আরো একবার আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের জয়যুক্ত করে আমাদের আবার জনগণকে সেবা করার সুযোগ দিন। নৌকা মার্কায় ভোট দিন।’ তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্তে বাংলাদেশ এক ক্রান্তিকালে দাঁড়িয়ে। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হতে যাচ্ছে দেশ। এই উত্তরণ যেমন একদিকে সম্মানের, অন্যদিকে বিশাল চ্যালেঞ্জেরও। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারকে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার সক্ষমতা থাকতে হবে। একমাত্র আওয়ামী লীগই পারবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে।’
আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক অর্জনগুলো তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার আদায়, মাতৃভূমির স্বাধীনতা থেকে শুরু করে এ দেশের যা কিছু মহৎ অর্জন, তা এসেছে আওয়ামী লীগের হাত ধরে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক-বাহক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাত ধরেই ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উচ্চমধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, যত দিন আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখেন, সুস্থ রাখেন, তত দিন যা কর্তব্য হিসেবে আমি গ্রহণ করেছি, সেখান থেকে সরে আসব না। আপনাদের সেবক হিসেবে কাজ করার মধ্য দিয়েই আমি আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই।’
তিনি আরো বলেন, ‘মা-বাবা, ভাই, আত্মীয়স্বজন সবাইকে হারিয়ে আমি রাজনীতিতে এসেছি শুধু আমার বাবা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত কাজ শেষ করে এ দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে। এই কাজ করতে গিয়ে আমাকে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছে বারবার। কিন্তু বাবার কথা ভেবে, আপনাদের কথা ভেবে আমি পিছপা হইনি।’
চেষ্টা করেও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি রোধ করতে পারিনি
লিখিত বক্তব্যে শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে বলেন, ‘সর্বাত্মক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আমরা অনেক সময় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি রোধ করতে পারিনি। এ সমস্যা শুধু আমাদের দেশের নয়, এ সমস্যা ধনী-গরিব সব দেশের। তবে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা সম্প্রসারণসহ নানা উদ্যোগের মাধ্যমে নিম্নবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষের দুর্দশা লাঘবের। আমরা আশা করি, খুব শিগগিরই আমরা এই অভিঘাত কাটিয়ে উঠতে পারব, ইনশাআল্লাহ।’
দশম সংসদ নির্বাচনের মতো এবারও ভোট বর্জন করে আন্দোলনে রয়েছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। শেখ হাসিনার কথায় সে প্রসঙ্গও আসে। তিনি বলেন, “সন্ত্রাস করে ‘নির্বাচন বানচাল করার স্বপ্ন-সাধ’ কোনোদিনই পূরণ হবে না। জনগণের ম্যান্ডেট পাবে না—এটা বুঝতে পেরে আগে থেকে এবার তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছে। হরতাল-অবরোধের নামে যানবাহন পোড়ানো, মানুষ হত্যা, রেললাইন উপড়ে ফেলাসহ বিভিন্ন নাশকতা চালিয়ে যাচ্ছে। মা ও শিশুর অগ্নিদগ্ধ লাশ সবার বিবেককে প্রচণ্ডভাবে নাড়া দিয়েছে। এই ধরনের হীন কাজ আর সহ্য করা যায় না। জনগণের সাড়া না পেয়ে ভাড়াটে বাহিনী দিয়ে এসব নাশকতা চালিয়ে জান-মালের ক্ষতি করছে। সন্ত্রাস করে নির্বাচন বানচাল করার স্বপ্ন-সাধ কোনোদিনই পূরণ হতে দেবে না এ দেশের জনগণ।”
বিদেশ থেকেও কলকাঠি নাড়ছে
নির্বাচনে কূটকৌশল অবলম্বন করতে বিএনপি এবার বিদেশ থেকেও কলকাঠি নাড়ছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচন এলেই মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশ এবং উন্নয়নবিরোধী একটি চক্র ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে সক্রিয় হয়ে ওঠে। নির্বাচনে কূটকৌশল অবলম্বন বা কারচুপির মাধ্যমে কিংবা পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যেতে তাঁরা আটঘাট বেঁধে মাঠে নামে। অগ্নিসন্ত্রাস, যানবাহন পোড়ানো, বোমাবাজি, নাশকতা বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সাধারণ জনগণকে ভীতসন্ত্রস্ত করে গৃহবন্দি করতে চায়। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি।
তিনি বলেন, ‘মাঝেমধ্যে মনুষ্য সৃষ্ট, প্রাকৃতিক এবং বৈশ্বিক বাধা-বিপত্তি আমাদের চলার গতিপথকে মন্থর করেছে। ২০১৩-১৬ সময়ে বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ বিস্তারের চেষ্টা মোকাবেলা করে আমাদের এগিয়ে যেতে হয়েছে। ২০০৯ সালের পর থেকে বেশ কয়েকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হয়েছে। সবচেয়ে বড় আঘাত এসেছে ২০২০ সালে যখন বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারি ছড়িয়ে পড়ে। এই মহামারি গোটা বিশ্বের অর্থনীতি এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে তছনছ করে দিয়েছিল।’
মন্তব্য করুন: