প্রকাশিত:
২৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৬:৪৪
বছরজুড়েই নানা কারণে আলোচনা ও সমালোচনা ছিল ছোট পর্দার কাজ নিয়ে। সময়ের অনেক জনপ্রিয় তারকা কাজ কমিয়ে দিয়েছেন, তরুণ অনেক অভিনয়শিল্পী আবার প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। চলতি বছরের টিভি নাটকের হালহকিকত নিয়ে এই প্রতিবেদন
গত পাঁচ বছরের তুলনায় এবার সবচেয়ে বেশি নাটক প্রচারিত হয়েছে বলে জানালেন টেলিভিশন অ্যান্ড ডিজিটাল প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টেলিপ্যাব) সাধারণ সম্পাদক সাজু মুনতাসির। চলতি বছরে সব মিলিয়ে ১ হাজার ৫০০ নাটক প্রচারিত হয়েছে বলে জানান তিনি।
যার বেশির ভাগই এসেছে ইউটিউবে। জানা যায়, চলতি বছর নাটকভিত্তিক নতুন প্রায় অর্ধশত ইউটিউব চ্যানেল কার্যক্রম শুরু করেছে। ৬০ শতাংশের বেশি নাটক সরাসরি এসব চ্যানেলেই মুক্তি পাচ্ছে। সেই তুলনায় টিভি চ্যানেলে নতুন নাটক প্রচারের সংখ্যা ছিল কম। বেশির ভাগ চ্যানেল ঈদ ও উৎসব ছাড়া তেমন নাটক প্রচার করেনি। চলতি বছর প্রচারিত নাটকের সংখ্যা বেশি থাকলেও মান নিয়ে প্রশ্ন ছিল।
বছরের শেষটা আলোচনায়
কোনো বিশেষ উৎসব ছাড়াও বছরের শেষে আলোচনায় ছিল নাটক। যেসব অভিনয়শিল্পীর নাটক নিয়ে দর্শকদের আগ্রহ থাকে, তাঁদের নাটক পেয়েছেন দর্শকেরা। এই তারকাদের মধ্যে রয়েছেন মোশাররফ করিম, জিয়াউল ফারুক অপূর্ব, মেহজাবীন চৌধুরী, তৌসিফ মাহবুব, জোভান প্রমুখ।
গত রোববার মুক্তি পায় অপূর্বর ‘পথে হলো দেরী’ নাটকটি। নাটকটি নিয়ে বেশ আগে থেকেই ভক্তের বেশ আগ্রহ দেখা গেছে। অন্যদিকে গত সপ্তাহে মেহজাবীন অভিনীত ‘অনন্যা’ মুক্তি পায়। দীর্ঘ বিরতির পর মেহজাবীনের নাটকটি দর্শক পছন্দ করেছেন। সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে মোশাররফ করিমের নাটক ‘কেরানী আক্কাস’। এ ছাড়া তৌসিফের সঙ্গে প্রথমবার একসঙ্গে জুটি হয়েছেন সাদিয়া আয়মান ও আইশা খান। তাঁদের অভিনীত ‘লাভ মি টু’ গতকাল বড়দিন উপলক্ষে মুক্তি পেয়েছে। এ ছাড়া হৃদয়ে হৃদয় দিয়ে আলোচনায় রয়েছেন জোভান। বছরের শেষে একসঙ্গে একাধিক তারকার কাজ আগে তেমন মুক্তি পেতে দেখা যায়নি।
এসেছে নতুন জুটি
ছোট পর্দায় চলতি বছর নতুন জুটি হিসেবে প্রশংসা পাচ্ছেন বেশ কয়েকজন অভিনয়শিল্পী। এ বছর অভিনেত্রী তানিয়া বৃষ্টির ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট ছিল। তিনি বেশ কিছু নাটকে মোশাররফ করিমের সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন। দর্শক মোশাররফ করিমের সঙ্গে তানিয়া বৃষ্টির জুটি বেশ পছন্দ করেছেন। তাঁদের ‘জায়গায় খায় জায়গায় ব্রেক’, ‘আড়াই তালাক’ নাটকগুলো আলোচনায় ছিল। দিন দিন যেন জনপ্রিয় জুটি হিসেবে আরও পরিচিতি পাচ্ছেন নিলয় আলমগীর ও জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি। ২০২৩ সালে তাঁরাই সর্বাধিক নাটকে জুটি হয়ে অভিনয় করেছেন।
তাঁদের আলোচিত নাটকগুলোর মধ্যে হবু ঘর জামাই, সাইলেন্ট জামাই ভিউয়ে এগিয়ে ছিল। এ বছর খাইরুল বাসার ও সাদিয়া আয়মানকে নতুন করে জুটি হিসেবে পেয়েছেন দর্শক। একসঙ্গে তাঁরা অনেকগুলো নাটকে অভিনয় করেছেন। তাঁদের ডুব সাঁতার, হাসি নাটকগুলো দর্শক পছন্দ করেছেন। অন্যদিকে ইয়াশ রোহান ও তটিনী ঈদের পর থেকে নিয়মিত জুটি হয়ে আলোচনায় রয়েছেন। কথা ছিল, যে প্রেম এসেছিল নাটকগুলো জুটি হিসেবে তাঁদের আলোচনায় আনে।
আলোচিত নাটকগুলো
টেলিভিশন প্রযোজক সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর টেলিভিশন, ইউটিউব, ওটিটি মিলিয়ে দেড় হাজারের মতো নাটক প্রচারিত হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন অভিনয়শিল্পী নিজের মত জানিয়ে বলেন, প্রচারিত নাটকের ১০ শতাংশকে ‘মোটামুটি ভালো’ বলা যায়। বাকি নাটক পরিবার নিয়ে দেখা যায় না। সেসব নাটকের ভিড়ে ঈদ ছাড়াও বছরের বিভিন্ন সময় মুক্তি পাওয়া একাধিক নাটক নিয়ে ভক্তরা প্রশংসা করেছেন। দর্শকদের প্রশংসা পাওয়া নাটকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘বিদেশ’, ‘কাজলের দিনরাত্রি’, ‘শব্দপ্রেম’, ‘আক্ষেপ’, ‘কবর’, ‘রঙিলা’, ‘প্রিয় পরিবার’, ‘সুইট কিস’, ‘পুনর্জন্ম অন্তিম পর্ব’, ‘সরি অমিত’, ‘পারুল’, ‘হাত সাফাই’, ‘কাছের মানুষ’, মায়াশালিক’ উল্লেখযোগ্য।
‘পুনর্জন্ম অন্তিম পর্বে’–এর পোস্টার
‘পুনর্জন্ম অন্তিম পর্বে’–এর পোস্টারফেসবুক থেকে নেওয়া
তাঁদের জন্য চমকের বছর
এই তারকারা দীর্ঘদিন অভিনয় করেছেন। কারও এক দশকের বেশি ক্যারিয়ার। কেউ তিন-চার বছর ধরে কাজ করছেন। কিন্তু চলতি বছর ক্যারিয়ারের সেরা সময় পার করেছেন। তাঁদের অভিনীত নাটকের ভিউ গত কয়েক বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এই তারকাদের মধ্যে রয়েছেন খাইরুল বাসার, ইয়াশ রোহান, তানিয়া বৃষ্টি, সাদিয়া আয়মান, তটিনী, আইশা, শাশ্বত দত্ত প্রমুখ। তাঁদের ‘সে বসে একা’, ‘হাসি’, ‘হঠাৎ বৃষ্টি’, ‘নির্বাসিত’, ‘প্রণয়’, ‘সব দোষ হোসেন আলীর’, ‘ছোবল’, ‘পাপ’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
প্রচারণায় পরিবর্তন
একটা সময় নাটক কখন প্রচারিত হবে, সেটা জানা যেত না। নাটকের প্রচার নিয়ে সেভাবে কেউ মাথা ঘামাত না। চলতি বছর এখানেও এসেছে নতুনত্ব। নাটক দর্শকদের কাছে তুলে ধরতে অনেকটা সিনেমার মতো পোস্টার, ফার্স্ট লুক, ট্রেলার, সংবাদ সম্মেলন পর্যন্ত হচ্ছে। যা নাটক নিয়ে দর্শকদের মধ্যে আগ্রহ বাড়াচ্ছে। ফলে নাটক প্রচারের পরপরই লাখো দর্শক দেখছেন, চলতি বছর এমনটা নিয়মিতই হয়েছে। অপূর্ব, তৌসিফ, জোভান, মুশফিক ফারহান, মেহজাবীন, তাসনিয়া ফারিণ, কেয়া পায়েলসহ অনেক তারকাই এখন নিয়মিত নিজেদের কাজের প্রচার করেন।
ইউটিউবের শীর্ষ ৫
এ বছর ইউটিউবে সবচেয়ে বেশি দেখা নাটকের তালিকায় প্রথম দিকে রয়েছে কাজল আরেফিন অমির ‘ফিমেল-৩’ (৩১ মিলিয়ন), মহিদুল মহিমের ‘কঞ্জুস’ (২৮ মিলিয়ন), কাজল আরিফিনের ‘কিডনি’ (২৭ মিলিয়ন), ‘ঢাকাইয়া পোলা সিলেটি ফুরি’ (২৫ মিলিয়ন), ‘কলিজার আধখান’ (২৩ মিলিয়ন)।
রুচির দুর্ভিক্ষ কি ঘুচবে
এ বছর নাট্যাঙ্গনে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল ‘রুচির দুর্ভিক্ষ’ শব্দটি। এমন অবস্থায় রুচির দুর্ভিক্ষ ঘোচাতে শিল্পবোধের ওপর গুরুত্ব দিতে বলেন পরিচালক সালাহউদ্দিন লাভলু। তিনি বলেন, ‘শিল্পভাবনা জাগ্রত হতে হবে, মানসম্মত নাটক তৈরি করতে হবে। নির্মাতা, প্রযোজক, প্রচারমাধ্যমের সংশ্লিষ্ট সবার একসঙ্গে বোধের জায়গায় আসতে হবে। তাদের মনে করতে হবে, শিল্পকর্ম মানুষের জন্য, এটা দর্শকদের প্রভাবিত করে। এই দায়িত্ববোধ জাগ্রত হতে হবে। মনে রাখতে হবে, দর্শক ভালো নাটক না পেয়ে ডাইভার্ট হচ্ছে। শিল্পচর্চা করা ব্যক্তিদের মনমানসিকতা পরিবর্তিত হলেই রুচির দুর্ভিক্ষ ঘুচবে।’
মন্তব্য করুন: