সোমবার, ২৫শে নভেম্বর ২০২৪, ১১ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল daajkaal@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত, যা বলছে আবহাওয়া অফিস
  • ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবসরপ্রাপ্তদের নিয়োগ করা হবে
  • আবারও যাত্রাবাড়ী মোড় অবরোধ ব্যাটারি রিকশাচালকদের
  • অক্টোবরে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৭৫ জন নিহত
  • বোয়ালখালীতে আগুনে ৫ বসতঘর পুড়ে ছাই
  • ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি কেলি রদ্রিগেজ
  • প্রথমবার সচিবালয়ে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা
  • এস আলমের ঋণ জালিয়াতি, কেন্দ্রিয় ব্যাংকের ১৩ জনকে তলব
  • সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা
  • ড. ইউনূসের ভিশনের দিকে তাকিয়ে যুক্তরাজ্য: ক্যাথরিন ওয়েস্ট

শততম ম্যাচে বাংলাদেশের ভারত জয়

খেলা ডেস্ক

প্রকাশিত:
২৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৫:৪৩

রূপকথাতেই এমন হয় এবং রূপকথা কখনো কখনো বাস্তবেও নেমে আসে। কাল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে যা হলো, তা তো রূপকথাই। দেশের শততম ওয়ানডে উদযাপন করতে দর্শকের ঢল নামবে স্টেডিয়ামে আর সেই দিনটিতেই দেশের মাটিতে প্রথম জয় পাবে বাংলাদেশ। এ তো রূপকথার পাণ্ডুলিপি!

কানায় কানায় পূর্ণ স্টেডিয়াম আর টেলিভিশনের সামনে কোটি কোটি দর্শক সেই রূপকথার মঞ্চায়নই দেখল কাল। হাজার মাইলের দূরের নর্দাম্পটনও যেন ফিরে এল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে নর্দাম্পটনের সেই জয়ই এত দিন উজ্জ্বলতম অধ্যায় হয়ে ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটে। ১৯৯৯ সালের ৩১ মে'র পাশে এখন লেখা হয়ে গেল ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বরও। পাকিস্তানের বিপক্ষে সেই জয়ের আগে-পরে আরও ৪টি ওয়ানডে জিতেছে বাংলাদেশ। কিন্তু সেসব তো কেনিয়া, স্কটল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে আর হংকংয়ের বিপক্ষে। পাকিস্তানের পর ‘দৈত্য-বধ’ তো এই প্রথম।

নর্দাম্পটনের পর ঢাকা। পাকিস্তানের পর ভারত এবং দুটো ম্যাচের সমাপ্তিতে কী আশ্চর্য মিল! নর্দাম্পটনিউ থার্ড আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে রান আউট হয়েছিলেন পাকিস্তানের শেষ ব্যাটসম্যান (সাকলায়েন মুশতাক), কাল বাংলাদেশের জয়ের আনুষ্ঠানিক ঘোষণাটাও এল ‘লাল বাতি’র মাধ্যমে। মুরালি কার্তিক রান আউট! বাংলাদেশের ২২৯ রান তাড়া করতে নেমে ২১৪ রানেই অলআউট ভারত।


নর্দাম্পটনে থার্ড আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকেনি বাংলাদেশ। ঢাকাতেও বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের বিজয়োৎসব শুরুহয়ে গেছে এর আগেই। একের পর এক পরাজয়ের গ্লানিতে নীল, চার পাশ থেকে ছুটে আসা সমালোচনার তীরে ক্ষতবিক্ষত বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা এই আনন্দ রাখবেন কোথায়! এ কারণেই আফতাব দু'হাত মেলে দিয়ে পাখির মতো উড়ে বেড়ালেন মাঠে, ছোট্ট কিশোরের মতো একের পর এক ডিগবাজি দিতে লাগলেন আশরাফুল... আর কে যে কী করলেন, তা বোধহয় তাঁরা নিজেরাও বলতে পারবেন না।


চট্টগ্রামে এই ওয়ানডে সিরিজের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে সবচেয়ে কম কথা হয়েছে এই সিরিজের ফলাফল নিয়ে। সৌরভ গাঙ্গুলী যা বলেছিলেন, তার মূল কথাটা ছিল, পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের আগেই দলটা গুছিয়ে ফেলতে হবে, এ কারণে এই সিরিজটিতে নতুনদের সবাইকে সুযোগ দিতে চান। দলের তারকা খেলোয়াড়রা তাই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বিশ্রাম নেবেন।

সৌরভেরই বা দোষ কী! হাবিবুল বাশারও তো ভারতের বিপক্ষে সিরিজ ছাপিয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আসল সিরিজটিকেই দেখলেন বারবার। তখন কে জানত, আজ তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেটি হবে সিরিজ-নির্ধারণী!


ব্যাটিংয়ে ৩১ রানের পর বোলিংয়ে তৃতীয় বলেই ‘বোলারদের আতঙ্ক’ বীরেন্দর শেবাগের স্টাম্প উপড়ে ফেলা... এরপর আরও একটি উইকেট আর দুটি ক্যাচ তার দাবিটাকে আরও জোরালো করেছে, তবে শেবাগকে আউট করার মুহূর্তটিতেই তো 'ম্যান অব দ্য ম্যাচ' হয়ে গেছেন মাশরাফি!
বাংলাদেশের বিপক্ষে পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করলে আর কোথায় করবেন— টেন্ডুলকার, দ্রাবিড়, হরভজন আর পাঠানকে বাইরে রেখেই কালকের দল সাজিয়েছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলী। বাংলাদেশের জন্য রীতিমতো অপমানজনক। কিন্তু ‘অপমানে ভারতকে তাদের সমান’ করার কথা ভাবার মতো মানসিক অবস্থা তখন বাংলাদেশ দলের নয়। তারপরও নিজেদের অজান্তেই কি চোয়ালগুলো শক্ত হয়ে ওঠেনি বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের?


হয়েছিল বলেই কাল মাঠে দেখা গেল অন্য বাংলাদেশকে। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়েছে, তারপরও স্কোরবোর্ডকে স্থবির হয়ে থাকতে দেয়নি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। এ কারণেই সর্বোচ্চ পার্টনারশিপ মাত্র ৪৪ রান হওয়ার পরও ৫০ ওভার শেষে স্কোরবোর্ডে ২২৯। অধিনায়ক হাবিবুল বাশার মুখোমুখি হওয়া প্রথম ৪ বলেই ৩টি বাউন্ডারি মেরে অন্যরকম একটি দিনের যে ঘোষণাটা করেছিলেন, সেটিই আরও উচ্চকিত হলো তরুণ আফতাব আর আশরাফুলের ব্যাটে। আফতাবের ৬৭ আর আশরাফুলের ২৮ শুধুই তো দুটি ইনিংস নয়, বাংলাদেশেরও যে ক্রিকেট বিশ্বকে কিছু দেখানোর আছে, তার দৃপ্ত ঘোষণাও। আর মাশরাফি বিন মুর্তজা! ‘ন্যাচারাল ক্রিকেটার’ অভিধাটা কতজনের ক্ষেত্রেই না ব্যবহৃত হয়, মাশরাফির চেয়ে সহজাত আর কজন খেলোয়াড়কেই বা দেখেছে ক্রিকেট!

ব্যাটিংয়ে ৩১ রানের পর বোলিংয়ে তৃতীয় বলেই ‘বোলারদের আতঙ্ক’ বীরেন্দর শেবাগের স্টাম্প উপড়ে ফেলা... এরপর আরও একটি উইকেট আর দুটি ক্যাচ তার দাবিটাকে আরও জোরালো করেছে, তবে শেবাগকে আউট করার মুহূর্তটিতেই তো 'ম্যান অব দ্য ম্যাচ' হয়ে গেছেন মাশরাফি!


বাংলাদেশ না জিতলে হতে পারতেন না। কিন্তু শততম ম্যাচটিতে যে নতুন ইতিহাস গড়ার প্রতিজ্ঞা নিয়েই মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। এ কারণেই ৫১ রানের মধ্যেই ভারতের প্রথম তিন ব্যাটসম্যান নেই। এ কারণেই ব্যাটিংয়ে আবারও ব্যর্থ রাজিন সালেহ আলো ছড়ালেন ফিল্ডিংয়ে, এ কারণেই ফিল্ডিং কখনোই যার প্রিয় বিষয় নয়, সেই হাবিবুল মিড উইকেটে সম্ভবত তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা ক্যাচটি নিলেন।

চতুর্থ উইকেটে শ্রীধরন শ্রীরাম আর মোহাম্মদ কাইফ ম্যাচটিকে প্রায় বেরই করে নিচ্ছিলেন। খালেদ মাসুদের উপস্থিত বুদ্ধি স্টাম্পিং করে ফেরাল শ্রীরামকে, রাজিনের আন্ডারআর্ম থ্রোতে রান আউট হয়ে গেলেন ‘ডেঞ্জারম্যান’ কাইফ। নবম উইকেটে যোগিন্দর শর্মা আর জহির খানের ৩২ রানের জুটিটা হয়ে ভালোই হয়েছে, অনিশ্চয়তা আর উত্তেজনায় টানটান ওই মুহূর্তগুলো না এলে যে বাংলাদেশের উৎসবটা এত মধুর হয় না!


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর