প্রকাশিত:
২৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৫:৩২
যখন ‘ডানকি’র সঙ্গে প্রায় একই সময়ে ‘সালার’-এর মুক্তির ঘোষণা আসে, তখন অনেকেই শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে শাহরুখ খান অভিনীত সিনেমাটির সামনে দাঁড়তেই পারবে না প্রভাস অভিনীত ‘সালার’। চলতি বছর শাহরুখের অবিশ্বাস্য সাফল্য আর প্রভাসের বক্স অফিস ব্যর্থতা বিবেচনায় রাখলে এ আশঙ্কা অবশ্য অমূলক ছিল না। কিন্তু মুক্তির পর দৃশ্যপট বদলে গেছে। আয়ের বিচারে ‘ডানকি’র চেয়ে অনেক এগিয়ে গেছে ‘সালার’। কিন্তু কেন এমনটা হলো? ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, পিংকভিলা অবলম্বনে জেনে নেওয়া যাক সম্ভাব্য পাঁচ কারণ।
কোভিডের পরবর্তী সময়ে হিন্দি সিনেমা বড় ধরনের ক্ষতির মধ্য দিয়ে গেছে। গত বছর বেশির ভাগ হিন্দি সিনেমা ব্যবসা করতে পারেনি। তবে সেই ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়েছেন প্রযোজক, পরিচালকেরা। তাঁরা বুঝেছেন যে কোভিডের পর হলে গিয়ে দর্শক বড় আয়োজনে অ্যাকশন সিনেমা দেখতে চাইছেন। যে কারণে চলতি বছর ‘পাঠান’, ‘জওয়ান’-এর মতো সিনেমা সুপারহিট হয়েছে। কিন্তু ‘ডানকি’ ঠিক সেই ধরনের সিনেমা নয় যে শাহরুখকে ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ চরিত্র হিসেবে হাজির করা হয়েছে।
অন্যদিকে ‘সালার: পার্ট ওয়ান-সিজফায়ার’ পিরিয়ডধর্মী অ্যাকশন সিনেমা। যেখানে প্রভাস হাজির হয়েছে বাণিজ্যিক সিনেমার সব মসলা নিয়ে। তাই মুক্তির পর দুই সিনেমার তুলনা করে বেশির ভাগ দর্শক ‘সালার’-এর দিকেই ঝুঁকেছেন।
‘পাঠান’ বা ‘জওয়ান’ নয় ‘ডানকি’
চলতি বছর মুক্তি পাওয়া শাহরুখ খান অভিনীত আগের দুই সিনেমা ‘পাঠান’ ও ‘জওয়ান’ বক্স অফিসে ঝড় তুলেছিল। মুক্তির পর প্রতি সপ্তাহেই কোনো না কোনো রেকর্ড ভেঙেছে সিনেমা দুটি। কিন্তু ‘ডানকি’ কোনা অর্থেই আগের দুই সিনেমার মতো নয়। ‘পাঠান’ ও ‘জওয়ান’ বড় বাজেটের অ্যাকশন-থ্রিলার সিনেমা।
এগুলোর টিজার, ট্রেলার মুক্তির পরই ধুন্ধুমার বেঁধে গিয়েছিল। কিন্তু ‘ডানকি’ ড্রামা ঘরানার সিনেমা, যেখানে ছবির পরতে পরতে রোমাঞ্চ লুকিয়ে নেই, সেভাবে অ্যাকশন নেই ফলে অনেক দর্শকের আশা পূরণ করতে পারেনি সিনেমাটি। কিন্তু এই বিচারে ঠিকই উতরে গেছে ‘সালার’। নায়ক, খলনায়ক, অ্যাকশন মিলিয়ে সাধারণ দর্শকের কাছে উপভোগ্য হয়ে উঠেছে সিনেমাটি।
দক্ষিণি ঝড়
দক্ষিণি তারকাদের সিনেমার জন্য তেমন কোনো প্রচারণা লাগে না। প্রিয় তারকার সিনেমা মুক্তি পেলে দক্ষিণ ভারতের দর্শক দলে দলে ভিড় করেন প্রেক্ষাগৃহে। ব্যতিক্রম নয় ‘সালার’ও। ভারতে সিনেমাটির আয়ের বড় অংশ এসেছে দক্ষিণ ভারত থেকে, যেখানে অনেকটাই পিছিয়ে গেছে ‘ডানকি’। এমনিতেই দক্ষিণ ভারত থেকে হিন্দি সিনেমা সেভাবে আয় করতে পারে না। একই সঙ্গে যখন দক্ষিণি নায়ক ও নির্মাতার ‘সালার’ চলছে, স্বভাবই দর্শক এই ছবিকেই বেছে নিয়েছেন।
প্রশান্ত নীলের কারিশমা
‘কেজিএফ’–এর দুই কিস্তি দিয়ে প্রশান্ত নীল এখন ভারতের অন্যতম অ্যাকশন সিনেমা নির্মাতা। তিনি পর্দায় যেভাবে বড় পরিসরে গল্প বলেন, তার সঙ্গে সহজেই যুক্ত হয়ে যান দর্শকেরা। ব্যতিক্রম নয় এই ‘সালার’ও। এখানেও তিনি আগের সিনেমার সাফল্য ধরে রেখেছেন।
অন্যদিকে ‘ডানকি’ সিনেমাটিকে অনেক দর্শক নিজেদের প্রত্যাশার সঙ্গে মেলাতে পারেননি। অনেকেই সিনেমার বিষয়বস্তু শুনে ভেবেছিলেন যে এখানে হয়তো দেশান্তরী হওয়ার গল্পকে অনেক রোমাঞ্চকরভাবে দেখানো হবে। কিন্তু পরিচালক রাজকুমার হিরানি সে পথে হাঁটেননি। এটা ভালো হয়েছে না খারাপ, সেটা অন্য আলোচনা, কিন্তু সাধারণ দর্শকের কাছে এটা ভালো লাগেনি, মুক্তির পর অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে লিখেছেনও।
ভারতে সিনেমা ব্যবসাসফল হওয়ার অন্যতম নিয়ামক হলো, মুক্তির পর ছবির কথা মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়া। যেমনটা হয়েছে ‘সালার’-এর ক্ষেত্রেও। তাই মুক্তির আগে তেমন আলোচনা না হলেও পরে ঠিকই ছড়িয়ে পড়েছে ছবিটির কথা। এমনকি ভারতের অনেক প্রেক্ষাগৃহে ‘ডানকি’র শো বাতিল করে ‘সালার’ প্রদর্শন করা হয়েছে। ফলে ছবিটি নিয়ে মানুষের আগ্রহ আরও বেড়েছে।
মন্তব্য করুন: